দৈনন্দিন জীবনযাপনের প্রতি ধাপে ভ্যাটের চাপ
Published: 13th, January 2025 GMT
জীবন এখন ভ্যাটময়। দৈনন্দিন জীবনে এমন কোনো জায়গা নেই, সেখানে ভ্যাটের আধিপত্য কম। প্রতিদিনের জীবনযাপনের প্রতি পদক্ষেপে নাগরিকদের গুনতে হচ্ছে ভ্যাটের টাকা। সকালে ঘুম থেকে ওঠে সারা দিন কর্মব্যস্ত সময় পার করে রাতে ঘুমানোর আগপর্যন্ত নানা ধরনের পণ্য ব্যবহার করতে হয়; বিভিন্ন সেবা নিতে হয়। এমন অনেক পণ্য ও সেবার ওপর প্রতিদিন বিভিন্ন হারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে।
সর্বশেষ সংযোজন হলো সরকার এখন নতুন করে শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বাড়িয়েছে। এতে মানুষের ওপর ভ্যাটের চাপ আরও বাড়বে। দৈনন্দিন জীবনযাপনে কোথায় কোথায় মানুষকে ভ্যাট দিতে হয়, তার একটি তালিকা খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
আপনি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দিনের প্রথম যে কাজটি করতে হয় তা হলো, দাঁত ব্রাশ। এ জন্য যে পেস্ট ও টুথব্রাশ ব্যবহার করতে হয়, তাতেও ভ্যাট আছে। টুথপেস্ট ও ব্রাশের উৎপাদন বা আমদানি থেকে ভোক্তাপর্যায় পর্যন্ত যত ভ্যাট আছে, তা আসলে ভোক্তাকেই পরিশোধ করতে হয়। এরপর গোসল থেকে শুরু করে টয়লেটের অন্যান্য কাজ শেষ করতে প্রতিদিনের ব্যবহার্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে সাবান, টিস্যু, শ্যাম্পু ইত্যাদি। সেখানেও ভ্যাট আছে। নতুন করে সব ধরনের টিস্যু পেপারের ওপর ভ্যাটের হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে টিস্যু ব্যবহারে আগের চেয়ে খরচ বাড়বে।
টয়লেটের কাজ সেরে আপনি হয়তো বসবেন নাশতার টেবিলে। নাশতায় পাউরুটি, জেম-জেলি কিংবা বিস্কুট যদি থাকে আপনার নাশতার তালিকায়, তাহলে সেখানেও গুনতে হবে ভ্যাট। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর যেসব পণ্যে নতুন করে ভ্যাট বাড়িয়েছে, তাতে বেকারি ও কনফেকশনারি পণ্যও রয়েছে। বেকারির মালিকেরা বলছেন, ভ্যাটের হার বৃদ্ধির ফলে বেকারি পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়বে। ফলে নাশতার খরচও বেড়ে যাবে আপনার।
নাশতা সেরে এবার অফিসের দিকে রওনা হলেন। এই যাত্রাপথে কিছুটা স্বস্তি পাবেন। কারণ, বাস, ট্যাক্সি, সিএনজি ভাড়া—কোনো কিছুর ওপর ভ্যাট নেই। তবে মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট বসানোর চেষ্টা ছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। সম্প্রতি মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর এক বছরের জন্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
অফিসে গিয়ে কাজকর্ম করলেন। কাজ শেষ করে দুপুরের খাবারের জন্য রেস্টুরেন্টে গেলেন। পকেটে বাড়তি ভ্যাটের টাকা নিয়ে যেতে হবে। কারণ, সব ধরনের রেস্টুরেন্টের খাবারের বিলের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে মানসম্মত বেশির ভাগ রেস্তোরাঁ ভ্যাটের বাড়তি অর্থ আদায় শুরু করেছে। তাতে আপনার খাবারের বিল ২০০ টাকা হলে আগে ভ্যাট দিতে হতো ১০ টাকা। এখন দিতে হবে ৩০ টাকা। তাতে রেস্তোরাঁয়া খাবারের খরচ বাড়ল ২০ টাকা। অফিসের ফাঁকে যদি কফি পান করতে চান, সেখানেও গুনতে হবে ভ্যাট।
বিকেলে অফিস শেষে বাড়ি ফেরার পথে ভাবছেন বাসার লোকজনের জন্য কিছু ফলমূল নিয়ে যাবেন। সেখানেও আছে বাড়তি খরচের চাপ। ভ্যাট আইনের আওতায় আমদানি করা ফলে, যেমন আপেল, নাশপাতি, কমলালেবু, আঙুর, মাল্টার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট তো আছেই। ফলে এসব ফলের দামও বাড়বে। এরই মধ্যে কোথাও কোথাও বাড়তেও শুরু করেছে। এ ছাড়া ফল বাদ দিয়ে বাসার জন্য যদি মিষ্টি নিয়ে ফিরতে চান, তাহলেও বাড়বে খরচ। মিষ্টি কিনতে গেলেই এখন ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। আবার কোমল পানীয়ের ওপরও ভ্যাট আছে।
কর্মব্যস্ত দিন শেষে বাসায় ফিরে মুঠোফোনে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলবেন বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে নাটক–সিনেমা দেখা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুঁ মারবেন? সেখানেও বাড়তি খরচের চাপ আপনার জন্য। কারণ, নতুন করে ভ্যাট আইনের আওতায় মোবাইল ফোনের সিম সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটেও সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও ভ্যাট থেকে মুক্তি নেই আপনার। এরপর ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনি কিংবা পরিবারের কোনো সদস্যদের জন্য ওষুধ লাগে, সেখানেও আছে খরচের বাড়তি চাপ। ওষুধ সরবরাহকারী স্থানীয় ব্যবসায়ীর ওপর ৩ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই ভ্যাট ক্রেতাকেই পরিশোধ করতে হবে। এভাবে সারা দিন ভ্যাট আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে আপনাকে। নতুন করে সেই চাপ বাড়বে ভ্যাটের হার বাড়ানোর ফলে।
সামনে ঈদ, পোশাকেও ভ্যাট বাড়লসামনে ঈদের মৌসুম শুরু হচ্ছে। ঈদের আগে নিজের কিংবা পরিবার–পরিজনের পোশাক কেনায়ও খরচ বাড়বে এবার। ব্র্যান্ডের পোশাক ও বড় বড় বিপণিবিতানের বিক্রয়কেন্দ্রের পোশাকের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্যাটের বাড়তি এই অর্থ আদায় শুরু করেছে। তাতে পোশাক কেনার খরচ বেড়ে যাবে। যত দামি পোশাক কিনবেন, তত বেশি ভ্যাট।
রান্নাঘরের খরচেও ভ্যাটমৌলিক খাদ্যপণ্যে ভ্যাট না থাকলে আনুষঙ্গিক বিভিন্ন খাতে ভ্যাট আছে। যেমন কিচেন টিস্যুসহ ধরনের টিস্যুর ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এমনকি বিদ্যুতের বিল দিতে গেলেও ভ্যাট কাটা হয়। আবার বাড়ির মা-বোনেরা কিংবা মেয়েরা দরজির কাছ থেকে জামাকাপড় বানালে সেখানেও ভ্যাট গুনতে হবে ১৫ শতাংশ হারে।
বিনোদনেও ভ্যাটশহুরে জীবনে ছুটির দিনে সিনেপ্লেক্সে গিয়ে সিনেমা দেখার একটি নতুন ধারা (ট্রেন্ড) তৈরি হয়েছে। সিনেমা হলের মালিক ও পরিবেশকদের ওপর ভ্যাট আছে। এতে টিকিটের দাম বাড়ে। বিভিন্ন ধরনের বিনোদনকেন্দ্রেও টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয়। সেখানেও ভ্যাট দিতে হয়।
এখন মাঠ ভাড়া করে ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। এ ধরনের খেলাধুলা আয়োজনও ভ্যাটের আওতাভুক্ত।
চোখের সমস্যা এখন বলতে গেলে ঘরে ঘরে। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক—অনেকেই এখন চিকিৎসকের পরামর্শে পাওয়ারের চশমা পরেন। আবার কম্পিউটার ব্যবহার বা পড়াশোনার সময় অনেকে রিডিং গ্লাস ব্যবহার করেন। চশমায়ও ভ্যাট বসিয়েছে সরকার। এমনকি সানগ্লাস বা রোদচশমা কিনলে নিস্তার নেই, ভ্যাট দিতে হবে। কোথাও ঘুরতে গেলেও সব ধরনের হোটেলের ভাড়ায় ভ্যাটের হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। আকাশপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও বাড়ানো হয়েছে শুল্ক। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন ভ্যাটময় হয়ে উঠেছে। ভ্যাটের হার বাড়ানোর ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে তা বাড়তি চাপ তৈরি করেছে জীবনযাত্রার খরচে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত, দেশের কল্যাণ ও শহীদের মাগফিরাত কামনা
খুলনায় আনন্দঘন পরিবেশ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সার্কিট হাউজ ময়দানে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার সকাল আটটায় অনুষ্ঠিত জামাতে ইমামতি করেন খুলনার প্রবীণ আলেম, জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা মোহম্মদ সালেহ।
ঈদের জামাতে খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।
নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে মুক্তিযুদ্ধ ও গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদের মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়। এছাড়া ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য আল্লাহর কাছে বিশেষ দোয়া করেন মুসল্লিরা। পরে তারা পরস্পর ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এদিকে সকাল নয়টায় খুলনা টাউন জামে মসজিদে ঈদের দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়।