ইউনেস্কো ঢাকার সংস্কৃতি প্রধান কিযী তাহনিন। কিযী তাহ্‌নিনের জন্ম ১৩ জানুয়ারি, ঢাকায়। তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি সম্পন্ন করেন। ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগ পেয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপরে অস্ট্রেলিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটি থেকে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাস্টেনিবিলিটি বিষয়ে আরেকটি মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির প্রচার ও প্রসারে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের হয়ে বিদেশেও প্রতিনিধিত্ব করছেন কিযী।

১৭ অক্টোবর ২০২৪- এ প্রথমবারের মতন পালিত হয়  ‘বিশ্ব অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দিবস ’  এ দিনকে সামনে রেখে ৭ ও ১৮ অক্টোবর দুই দিনব্যাপী দক্ষিণ কোরিয়ার জিওনজুতে আয়োজন  করা করা হয় অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিশ্ব ফোরাম ‘ওয়ার্ল্ড ফোরাম ফর ইন্ট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ’।এটি আয়োজন করে কোরিয়া হেরিটেজ সার্ভিস এবং সংগঠিত করে ইউনেস্কো- ICHCAP । অষ্টমবারের মতন ওয়ার্ল্ড ফোরাম অনুষ্ঠিত এই ফোরামে ১৪টি দেশের প্রায় ৩০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন একাডেমিক, অমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ এবং ইউনেস্কো, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনের প্রতিনিধি। বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন কিযী।

তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘আমাকে এ ফোরামে আমন্ত্রণ জানানো হয় একজন প্যানেলিস্ট হিসেবে। যেখানে বাংলাদেশে অভিবাসন এবং সংস্কৃতি সংরক্ষণের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়, বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা জানানো হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের কেস স্টাডির উপর মতামত ও প্রশ্ন করার জন্য আমাকে একটি সেশনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে আমার কাজের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার যে প্রচেষ্টা সেটি এ ধরণের বিশ্ব ফোরামে প্রকাশের সুযোগ একটি সম্মান ও আনন্দের ঘটনাই বটে।’’

২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স এন্ড ট্রেড এবং এবিসি চ্যানেল কিযী তাহনিনকে নিয়ে একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। ‘স্টোরি অফ মাই লাইফ' নামের ওই প্রামাণ্য চলচ্চিত্র থেকে জানা যায়, কিযী মানুষ সম্পর্কে এবং তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে ভালোবাসেন।  তিনি মনে করেন, ঐতিহ্য মানেই স্থাপনা নয়, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আরও ব্যাপক বিষয়। যেমন গান, অভিব্যক্তি, হস্তশিল্প, রিকশা পেইন্টিং সবকিছু মিলেই সংস্কৃতি। 

তিনি মনে করেন সংস্কতি ছাড়া কোনো স্থায়ী উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব নয়। 

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধারণ করে, ভালোবাসে এবং এগিয়ে নিতে চায়। আমি চাই না বাংলাদেশের কোনো সংস্কৃতি কোনোদিন হারিয়ে যাক।’’

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যাকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে অনেক দেশ। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।

বাংলাদেশের প্রধান দুই রপ্তানি বাজারের একটি যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের একটি বড় অংশ রপ্তানি হয় দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি হয় প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার, যা প্রধানত তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তান ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলারে।

নতুন করে উচ্চ মাত্রায় এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।

ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্যের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, ‘আজ খুব ভালো খবর’ থাকবে। এ সময় দর্শক সারি থেকে করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়।

এই দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ অভিহিত করেন ট্রাম্প। নতুন শুল্ক আরোপকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, এই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করছে।

ট্রাম্পের পাল্টা এই শুল্ক আরোপে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩৪ শতাংশ।

এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে।

অন্যান্য যেসব দেশের পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

পাল্টা এই শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকা ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’।

যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব গাড়ি উৎপাদন করা হয় তার ৮০ শতাংশের বেশি সেদেশে বিক্রি হয়। আর জাপানে যেসব গাড়ি বিক্রি হয় সেগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি সেদেশে তৈরি হয়। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি বিক্রি হয় খুব সামান্য।

মার্কিন কোম্পানি ফোর্ড অন্যান্য দেশে খুব কম গাড়ি বিক্রি করে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অন্য যে কোনো দেশে তৈরি মোটরযানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং এটা আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।

শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, আজকের দিনকে আমেরিকান শিল্পের ‘পুনর্জন্ম’ এবং আমেরিকাকে ‘আবার সম্পদশালী’ করার দিন হিসেবে স্মরণ করা হবে।

এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাধার মুখে রয়েছে।

অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা আরও খারাপ অবস্থা তৈরি করেছে।

বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মেধাসত্ত চুরিসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ করেছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ