কোভিড–পরবর্তী সময়ে বিশ্ব অর্থনীতি সংকটের মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশেও প্রবলভাবে আছড়ে পড়ে সেই সংকটের ঢেউ। কিন্তু আমাদের দেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর প্রধান কারণ বিগত সরকার যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জয়গান গাইছিল, তার ভেতর ফাঁকি ছিল। লেখক বিরূপাক্ষ পাল এ বইয়ে দেখিয়েছেন, ঢাকঢোল পিটিয়ে উন্নয়ন–বন্দনার অন্তরালে থেকে কীভাবে একটা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও তার মদদপুষ্ট একদল লুটেরা ব্যবসায়ী অর্থনৈতিক খুঁটিগুলো খেয়ে ফেলেছ, দেশকে দাঁড় করিয়েছে কঙ্কাল কাঠামোর ওপর। অর্থ খাতের লুণ্ঠন ও ব্যাংক খাতের দুর্নীতির কবলে পড়ে প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা দেশ। কয়েকটি মাফিয়া পরিবারের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে পুরো ব্যাংক খাত। এতে সহায়তা করে একশ্রেণির পুলিশ, গোয়েন্দা ও আমলারা। এ সুযোগে বাড়তে থাকে ঋণখেলাপি, গোপনে বিদেশে পাচার হতে থাকে বিপুল টাকা। রাজস্ব আয় কমে যায়। মেগা প্রকল্পের আড়ালে লুটপাট হয় বিপুল অর্থ। কিন্তু অর্থ খাতে এসব অনিয়ম ও অন্যায় যারা করেছে, তাদের শাস্তি হয়নি। তাই ঋণখেলাপি, মুদ্রা পাচারকারী আর কর ফাঁকিদাতাদের কবজায় পড়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটকে অনিবার্য হয়ে ওঠে।

অর্থনীতিতে দুই প্রধান সমস্যা—বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি। বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি সব অর্থনীতিতে থাকে। তবে সহনীয় পর্যায়ে থাকলে সংকটের সৃষ্টি হয় না। কিন্তু মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তা বিপর্যয় ডেকে আনে। দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোগুলো আর ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতিকে পাপ মনে করা হয় অর্থনীতিতে। কিন্তু এ দুই পাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি আওয়ামী লীগ সরকার। বারবার সর্তক করার পরও অর্থনীতিবিদদের পরামর্শকে পাত্তা দেয়নি। ‘সামান্য চাপ’ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছে সব সময়। ফলে সমাজে দেখা দেয় তীব্র বেকারত্ব।

যুবসমাজ পৌঁছায় হতাশার চরম সীমায়। অন্যদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জিনিসপত্র সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে জীবন চালাতে। সরকারের প্রতি ছাত্র ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এ পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ দেখি এই জুলাই–আগস্টে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হয় আওয়ামী সরকারের। এ অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক সংকটকে দেখেছেন লেখক। পাশাপাশি তিনি দেখানোর চেষ্টা করেছেন, কীভাবে এ সংকট থেকে বের হয়ে আসা যায়। এ ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতি দমন, নিরাপদ রিজার্ভ রক্ষণ, ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ নিশ্চিতকরণসহ নানা বিষয়ের প্রতি। বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিতর–বাহিরের নানা দিক, যেগুলো সাদাচোখে ধরা দেয় না, সেসব বিষয় বুঝতে সংকটকালের অর্থনীতি: সংস্কার ও উত্তরণ বইটি সহায়ক হবে।

সংকটকালের অর্থনীতি: সংস্কার ও উত্তরণ

বিরূপাক্ষ পাল

প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা;

প্রকাশকাল: ডিসেম্বর ২০২৪;

প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: আনিসুজ্জামান সোহেল; ১২৮ পৃষ্ঠা;

দাম: ৩৭৫ টাকা।

বইটি পাওয়া যাচ্ছে: prothoma.

com এবং মানসম্মত বইয়ের দোকানে

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অনশন প্রত্যাহার করলেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা  

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরিফুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার। 

এই সিদ্ধান্তের পর বুধবার দিবাগত রাত ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খান শিক্ষার্থীদের জুস খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করান। পরে শিক্ষার্থীরা অনশনস্থল থেকে নিজ নিজ হলে ফিরে যান।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদ জানান, কুয়েটের সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে। অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে। 

শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্যের অপসারণের এক দফা দাবিতে গত ১৫ এপ্রিল থেকে তারা ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করেন। এরপর গত সোমবার থেকে ৩২ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ