নোয়াখালীর সেনবাগ-সোনাইমুড়ী সড়কের সেনবাগ রাস্তার মাথা এলাকা থেকে সোনাইমুড়ী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কে ছোট–বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় উঠে গেছে পিচঢালাই। একই অবস্থা জেলার সোনাপুর-কোম্পানীগঞ্জ-জোরালগঞ্জ সড়কেরও। সোনাপুর থেকে কবিরহাট উপজেলার ধানশালিক এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকার পুরো অংশে খানাখন্দ।
নোয়াখালীতে গত বছরের বন্যায় জেলার বিধ্বস্ত সড়কগুলো একরকম চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সংস্কারে ধীরগতির কারণে খানাখন্দে ভরা সড়কে যানবাহন ও যাত্রীদের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, সড়ক সংস্কারে যে পরিমাণ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, তা পাওয়া যায়নি। তবু প্রাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে যতটুকু সম্ভব সড়ক সংস্কার করা হয়েছে।
সেনবাগ উপজেলার উত্তর সাহাপুর খালেকের দোকান এলাকার বাসিন্দা সহিদুল ইসলাম বলেন, গত বন্যায় সেনবাগ রাস্তার মাথা থেকে সোনাইমুড়ী পর্যন্ত এই সড়কটি দুই ফুট পানির নিচে তলিয়ে ছিল প্রায় দুই সপ্তাহ। শুরুর দিকে বন্যার পানির তোড়ে সড়কজুড়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। গর্তের ওপর দিয়ে হালকা ও ভারী যানবাহন ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের কারণে সড়কের অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।
পণ্যবাহী ট্রাকের চালক মো.
গত বছরের জুলাই-আগস্টের বন্যায় নোয়াখালীতে সওজের প্রায় ২০০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে বলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নোয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয় ২০ কোটি টাকা। বরাদ্দ পাওয়া গেছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। বরাদ্দ করা অর্থে এরই মধ্যে কিছু সড়কের সংস্কার করা হয়েছে। কিছু সড়কের সংস্কারে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আর কিছু সড়ক সংস্কারে দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী পুরো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সব সড়কের সংস্কার শেষ করা সম্ভব হবে বলে জানানো হয়।
সোনাপুর-কোম্পানীগঞ্জ-জোরালগঞ্জ সড়কে চলাচলকারী কোহিনুর আক্তার বলেন, তিনি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করেন। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন অটোরিকশাযোগে যাতায়াত করেন। খানাখন্দের কারণে গাড়ির ঝাঁকুনিতে অবস্থা কাহিল হয়ে যায়। তবুও বাধ্য হয়ে চলতে হয়। দিন যত যাচ্ছে, সড়কের অবস্থাও তত খারাপ হচ্ছে।
সড়কের সংস্কারে ধীরগতির বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর মধ্যে সেনবাগ-চন্দেরহাট সড়কসহ কয়েকটি সড়কের সংস্কারকাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এ ছাড়া সেনবাগ-সোনাইমুড়ী সড়কের সংস্কারে এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। অন্যান্য সড়কের সংস্কারে দরপত্র আহ্বানসহ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জনসহ ২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়েরকৃত মামলায় সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমান ও ঢাকা উত্তরার বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শাহীনুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ মো. নজরুল ইসলাম অভিযোগপত্র পর্যালোচনা শেষে এ আদেশ দেন।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান দিলু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামি ডা. তৌহিদুর রহমান সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামের মৃত তফছির উদ্দিনের ছেলে। অপর আসামি মো. শাহীনুর রহমান মাগুরা জেলা সদরের কাদিরাবাদ গ্রামের একেএম ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে।
আরো পড়ুন:
সাবেক এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
নড়াইলে গ্রাম আদালতে ৬৪১ মামলা নিষ্পত্তি
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমান ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটি করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, অনুমোদন ছাড়াই বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা ব্যতীত সাতক্ষীরা ইনস্টিটিউট ও হেলথ টেকনোলজিতে (নলতা) ইকুইপমেন্ট সামগ্রী, আসবাবপত্র , বইপত্র সাময়িকী ও খেলাধুলার সামগ্রী কেনার জন্য ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও জনশক্তি উন্নয়ন শাখার পরিচালক বরাবর চিঠি পাঠান তৎকালীন সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ও সাতক্ষীরা ইনস্টিটিউট ও হেলথ টেকনোলজির সাবেক অধ্যক্ষ ডা. তৌহিদুর রহমান। অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অনুমোদন ব্যতীত নলতা আইএইচটিতে চাহিদা বরাদ্দ পাওয়ার আগেই খেলাধুলা সামগ্রীসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য বিধি বহির্ভূতভাবে বাজারদর কমিটি, দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ও সার্ভে কমিটি গঠন করে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করেন ডা. তৌহিদুর রহমান।
২০১৮ সালের ১৫ মে ডা. তৌহিদুর রহমান রহমান ঢাকার উত্তরার বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজকে ১০টি ফুটবল, ২৫টি ক্রিকেট ব্যাট, ২১টি ক্রিকেট বল, ২০টি ক্রিকেট প্যাড, ১১টি ক্রিকেট হেলমেট, ১০টি ক্রিকেট গ্লাভস, ১৫টি ক্রিকেট স্টাম্প, পাঁচটি ২০ কেজি ওজন সেট, পাঁচটি ৫ ইঞ্চি স্টিক, পাঁচটি ৪ ইঞ্চি স্টিক, পাঁচটি ৩ ইঞ্চি স্টিক, পাঁচটি ১৪ কেজি ডাম্বেল, একটি ট্রিসেফ বার, ৫৬ পিস মাল্টি জাম, পাঁচটি চায়না আপ মেশিন, পাঁচটি ট্রেড মিল, চারটি সিট আপ বেঞ্চ, ছয়টি টিটি বোর্ড, ১০টি বাস্কেট বল, ১০টি ব্যাডমিন্টন সেট, পাঁচটি দাবা সেট, ১৫টি হ্যান্ডবল, ১০টি ভলিবল, ক্লাইন চেষ্ট প্রেস-এর চারটি স্মিথ মেশিন, কেবল ওয়ারের ২০টি লাফ দড়ি, পাঁচটি হ্যামার স্ট্রেনথ, পাঁচটি ইলেকট্রিকাল ট্রেনার এক্সসারসাইজ বাইক ও পাঁচটি ৫৬ ইঞ্চি ক্যারাম বোর্ড সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ প্রদান করেন।
পরবর্তীতে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজ ২০১৮ সালের ২৪ মে মালামাল সরবরাহ করে ওই বছরের ১০ জুন ৫০ লাখ টাকার বিল দাখিল করে। ডা. তৌহিদুর রহমান রহমান বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. শাহীনুর রহমানকে ২০১৮ সালের ১০ জুন বিল পাশ করে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস বরাবর পাঠান। সে অনুযায়ী, হিসাবরক্ষণ অফিস সরকারি কর্তণ বাদে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে ২০১৮ সালের ১৪ জুন ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক ইস্যু করে। পরে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহীনুর রহমান টাকা তুলে নেন।
অভিযোগ অনুসন্ধানকালে কেনা ক্রীড়া সামগ্রীর সঠিক মূল্য একটি টিমের মাধ্যমে যাচাই করার জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ক্রীড়া অধিদপ্তর, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পরিচালককে অনুরোধ করে। ২৬ সেপ্টেম্বর নলতা আইএইচটি ও ম্যাটস এর কেনা ক্রীড়া সামগ্রীর মূল্য নিরূপণের জন্য বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুদকের তদন্তকারী টিম ১০ অক্টোবর জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের সরবরাহকৃত ক্রীড়া সামগ্রীর মূল্য ২৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫০ টাকা। প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ৫ লাখ ৫০ হাচার টাকা কেটে নিয়ে ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। এক্ষেত্রে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজকে ২০ লাখ ৬১ হাজার ৬৫০ টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ডা. তৌহিদুর রহমান রহমান ও মো. শাহীনুর রহমান পরস্পর যোগসাজশে ২০ লাখ ৬১ হাজার ৬৫০ টাকা আত্মসাৎ করে অপরাধ করেছেন।
আদালতে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান দিলু বলেন, “গত ২৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-সহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমানের দায়েরকৃত অভিযোগপত্রটি পর্যালোচনা শেষে বিচারক মো. নজরুল ইসলাম অভিযুক্ত দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়ে ১৬ মার্চ শুনানির ধার্য দিন নির্ধারণ করে দেন। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।”
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ