ভালো কোম্পানির তালিকায় ঢুকছে কারসাজির শেয়ার
Published: 13th, January 2025 GMT
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সবচেয়ে ভালো মানের ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়ানো বন্ধ কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ। খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের অন্তর্ভুক্তির বিপরীতে ডিএস-৩০ সূচক থেকে বাদ পড়েছে বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, বেক্সিমকো লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক ও সামিট পাওয়ারের মতো কোম্পানি।
কয়েক বছর ধরে বাজারে বন্ধ কোম্পানি খান ব্রাদার্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটছে। তাতে গত দুই বছরে কোম্পানিটির ১২ টাকার শেয়ারের দাম উঠেছে সর্বোচ্চ ২৩২ টাকা পর্যন্ত। গতকাল রোববারও এটির শেয়ারের দাম ১৬ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৭ টাকায়।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে অর্ধবার্ষিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে সূচকটি সমন্বয় করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। ডিএসই জানিয়েছে, সূচক সমন্বয়ের ফলে ভালো মৌলভিত্তির ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক থেকে ৯টি কোম্পানি বাদ পড়েছে। তার বিপরীতে নতুন করে এ সূচকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৯টি কোম্পানি।
কোম্পানিগুলোর বার্ষিক ও ত্রৈমাসিক কার্যক্রম পর্যালোচনার ভিত্তিতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ও ডিএস-৩০ সূচক সমন্বয় করা হয়েছে।নতুন করে ৯টি কোম্পানি এই সূচকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সেগুলো হলো ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রাইম ব্যাংক, কোহিনূর কেমিক্যালস, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ, মবিল-যমুনা বাংলাদেশ, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, পদ্মা অয়েল, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্লস। আর ডিএস-৩০ সূচক থেকে বাদ পড়া কোম্পানিগুলো হলো হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, সিপার্ল বিচ রিসোর্ট, বেক্সিমকো লিমিটেড, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, জেনেক্স ইনফোসিস, ইসলামী ব্যাংক, ওরিয়ন ফার্মা, লিনডে বাংলাদেশ ও সামিট পাওয়ার।
সূচক সমন্বয়ের সঙ্গে যুক্ত ডিএসইর সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ডিএসইর সূচক গণনা এবং সূচকে কোম্পানির অন্তর্ভুক্তি ও বাদ পড়ার বিষয়টি নির্ধারণ করা হয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এসঅ্যান্ডপি ডাও জোনসের পদ্ধতি মেনে। ডিএস-৩০ সূচকে কোম্পানি অন্তর্ভুক্তির প্রাক্-যোগ্যতা হিসেবে এসঅ্যান্ডপি ডাও জোনসের পদ্ধতিতে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি বাজার মূলধন ৫০ কোটি টাকা হতে হবে। সেই সঙ্গে তিন মাসের দৈনিক গড় লেনদেন হতে হবে ৫০ লাখ টাকা। তবে এই সূচকে বিদ্যমান কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে অন্যান্য শর্তপূরণ সাপেক্ষে তিন মাসের দৈনিক গড় লেনদেন ৩০ লাখ টাকাকেও যোগ্যতার বিবেচনায় নেওয়া হয়। এই দুটি পদ্ধতির ভিত্তিতে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। আর এই দৈনিক গড় লেনদেনের শর্ত পূরণ না করায় এই সূচক থেকে বেক্সিমকো, ইসলামী ব্যাংকসহ ৯টি কোম্পানি বাদ পড়েছে।
ডিএস-৩০ সূচকের পাশাপাশি ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সেও বড় পরিবর্তন এসেছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বার্ষিক লেনদেন পর্যালোচনার ভিত্তিতে এসঅ্যান্ডপি ডাও জোনসের পদ্ধতি মেনে ডিএসইএক্স সূচকে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাতে ডিএসইএক্স সূচকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৮৭টি কোম্পানি। আর বাদ পড়েছে ১৪টি কোম্পানি। আগামী ১৯ জানুয়ারি থেকে ডিএসইএক্স ও ডিএস-৩০ সূচক গণনায় এই পরিবর্তন কার্যকর হবে।
ডিএসইএক্সে আবার বড় পরিবর্তন
বার্ষিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে এর আগে সর্বশেষ ডিএসইএক্স সূচকটি সমন্বয় করা হয় ২০২৪ সালের ২১ জানুয়ারি। ২০২৩ সালে কোম্পানিগুলোর লেনদেনের ভিত্তিতে ওই বছর সূচকটি সমন্বয় করা হয়েছিল। ২০২৩ সালজুড়ে শেয়ারবাজারের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামের ওপর ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর আরোপিত ছিল। ফলে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের স্বাভাবিক লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। তাতে সূচকটিতে বড় পরিবর্তন ঘটে। ডিএসইএক্স সূচক থেকে বাদ পড়ে যায় ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিসহ মোট ৮৩টি কোম্পানি। ২০২৪ সালজুড়ে মাত্র ২৫০ কোম্পানি ডিএসইএক্স সূচক গণনায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গত বছরের ২১ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচক সমন্বয়ের দিন থেকে বেশির ভাগ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তাতে ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিসহ বেশির ভাগ কোম্পানি স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরে আসে। এর মধ্যে গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কিছুদিন শেয়ারবাজারে গতি সঞ্চার হয়। তাতে বেশ কিছুদিন ভালো কোম্পানির শেয়ার লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। সেই সুবাদে গত বছর শেষে আবারও ডিএসইএক্স সূচকে অন্তর্ভুক্তির জন্য বিবেচনায় চলে আসে বেশির ভাগ কোম্পানি।
ডিএসই বলছে, ২০২৪ সালের বার্ষিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে ৮৭টি কোম্পানিকে আবারও ডিএসইএক্সে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এসিআই, ব্যাংক এশিয়া, বিডি ল্যাম্পস, ক্রাউন সিমেন্ট, ঢাকা ব্যাংক, এনভয় টেক্সটাইলস, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, আরএকে সিরামিকস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, তিতাস গ্যাস, স্কয়ার টেক্সটাইলস, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইউনাইটেড পাওয়ারের মতো কোম্পানি। বিপরীতে এই সূচক থেকে বাদ পড়েছে ১৪ কোম্পানি। কোম্পানিগুলো হলো আরামিট সিমেন্ট, বিডি ওয়েল্ডিং, এফএএস ফাইন্যান্স, হা-ওয়েল টেক্সটাইলস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, জুট স্পিনার্স, মার্কেন্টাইল ইনস্যুরেন্স, নর্দান জুট, নর্দান ইসলামী ইনস্যুরেন্স, রেনউইক যোগেশ্বর, রতনপুর স্টিল, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, স্ট্যার্ন্ডার্ড সিরামিক ও জিলবাংলা সুগার।
সব মিলিয়ে চলতি বছর ডিএসইএক্স সূচক গণনায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে ৩২৬টি কোম্পানি। গত কয়েক বছরের মধ্যে এত বেশিসংখ্যক কোম্পানি নিয়ে ডিএসইএক্স সূচক গণনা হবে। সর্বশেষ ২০২২ সালে ৩১৬টি কোম্পানি ডিএসইএক্স সূচক গণনায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বইমেলা উপলক্ষে ঢাবিতে যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা শিথিল
অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বহিরাগত যানবাহন প্রবেশের ক্ষেত্রে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ঢাবির জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অমর একুশে বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। সারা দেশ থেকে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ এ বইমেলায় আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়ে তাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে প্রবেশপথগুলোতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে যে বিধি-নিষেধ থাকে, তা অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে শিথিল করা হলো। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো ব্যারিকেড রাখবে না।
তবে, ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এ প্রবেশপথগুলোতে সুশৃঙ্খলভাবে যানবাহন প্রবেশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে যানবাহনগুলো সুশৃঙ্খলভাবে পার্কিং করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবক দল এবং প্রক্টরিয়াল মোবাইল সিকিউরিটি টিমের সদস্যরা ট্রাফিক বিভাগকে এ ব্যাপারে সার্বিক সহায়তা করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করার জন্য ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
ঢাকা/সৌরভ/রফিক