চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে এক বছরে প্রায় দেড় হাজার রোগী বেড়েছে। রোগীর চাপে দিশেহারা সক্ষমতাহীন বার্ন ইউনিটটি। একদিকে জনবলসংকট, অন্যদিকে সংকটাপন্ন রোগী ব্যবস্থাপনা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি হাসপাতালের এই বার্ন ইউনিট। এ অবস্থায় ১৫০ শয্যার স্বতন্ত্র বার্ন হাসপাতাল নির্মিত হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চমেক বার্ন ইউনিটটি আগে ছিল ৩০ শয্যার। এখন কাগজকলমে এটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু ওয়ার্ডটিতে ৪৬ শয্যার বেশি বসানোর জায়গা নেই। শয্যা ও মেঝে মিলে এখানে রোগী থাকে ৫৫ থেকে ৬০ জন। কিন্তু এত রোগী সামাল দেওয়ার জন্য বার্ন ইউনিটটির সামর্থ্য পর্যাপ্ত নয়। ২০২৪ সালে এখানে মোট রোগী চিকিৎসা নিয়েছে ১০ হাজার ২৮৩ জন। আগের বছর ২০২৩ সালে ছিল ৮ হাজার ৯১৭ জন। 

জানতে চাইলে বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মো.

রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ বছর রেকর্ডসংখ্যক রোগী আমরা দেখেছি। প্রতিবছর রোগী বেড়ে চলেছে। আগের বছরের চেয়ে দেড় হাজার রোগী এবার বেশি হয়েছে। শীতকালে রোগী বেশি হয়। সিলিন্ডার বিস্ফোরণসহ, শীতকালে আগুন পোহানোসহ নানা কারণে রোগী বাড়ে।

বার্ন ইউনিটে ২০২২ সালে অন্তর্বিভাগের ১ হাজার ৬৭০ জনসহ মোট রোগী ছিল ৭ হাজার ৪২১ জন। এখন প্রতি মাসে গড়ে ৯০০ থেকে ১০০০ রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে এখানে। চিকিৎসকেরা জানান, আগুনে পোড়া, গরম পানিতে ঝলসানো ও বৈদ্যুতিক শকে দগ্ধ রোগী এখানে চিকিৎসা নেন। আগুনে পোড়া রোগীর মধ্যে বর্তমানে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের রোগী বেড়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।

বার্ন ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ এস খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারজনিত রোগী এখানে বেশি আসে। এ ছাড়া শীতকালে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ, বৈদ্যুতিক গোলযোগসহ নানা পোড়া রোগী এখানে আসে। গ্যাস সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে সচেতন হলে এই হতাহত এড়ানো সম্ভব হতো।

চমেক বার্ন ইউনিটের কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে বার্ন রোগীদের পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। এর মধ্যে জনবলসংকট এবং নিবিড় পরিচর্যা না থাকা অন্যতম। বার্ন ইউনিটে জনবল অনুযায়ী একজন অধ্যাপক থাকার কথা, কিন্তু তা নেই। দুজন সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন। একজন সহকারী অধ্যাপক কর্মরত। তবে নিচের দিকে চিকিৎসক কম। তিনজন সহকারী রেজিস্ট্রারের মধ্যে আছেন দুজন। দুজন রেজিস্ট্রারের মধ্যে একজনও এখন নেই। মেডিকেল অফিসারের কোনো পদ নেই।

বিভাগের প্রধান রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, বার্ন ইউনিটের নিজস্ব নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) নেই এখানে। বেশি সংকটাপন্ন রোগীদের ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে।

চমেক ক্যাম্পাসে ১৫০ শয্যার স্বতন্ত্র বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের কাজ চলছে। চীন সরকারের সহায়তায় এই হাসপাতাল নির্মিত হবে। তবে অবকাঠামোগত নির্মাণকাজের শুরুতে হোঁচট খেয়েছে হাসপাতালটি। পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে শুনানিতে ডেকেছে।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, হাসপাতাল নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে তা কেটে যাবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৫০ শয্যার বার্ন হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এটা হলে চট্টগ্রামের পোড়া রোগীদের আর ঢাকায় যেতে হবে না।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বর্জ্যের দূষণে নদীটি টিকে থাকবে তো?

দেশের নদ-নদীর বিপন্ন হওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নাগরিকদের জন্য কোনো কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থা না থাকা। ফলে জেলা-উপজেলার মফস্‌সল শহর ও পৌরসভা শহরগুলোর বর্জ্যের দিন শেষে স্থান হয় স্থানীয় নদ-নদীতে। এর ফলে নদ-নদীগুলো দূষিত হয় এবং দিন দিন বিপন্ন হওয়ার দিকেই ঝুঁকে। যেমনটি আমরা দেখছি নওগাঁ পৌর শহরের ছোট যমুনা নদীর ক্ষেত্রে। বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নওগাঁ শহরের অন্তত ২৫টি স্থানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা ও বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীর তীরে। এর ফলে নদীর পানি কালো হয়ে পড়েছে। আশপাশে মশা-মাছি উড়ছে। নদীতীরের বাসিন্দারা পড়েছেন দুর্ভোগে। অনেক স্থানে নদীর বাঁধ থেকে নদীর ভেতরের অংশে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, চালকল গড়ে তোলা হচ্ছে। এগুলো থেকে বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ছোট যমুনা নদীর তীরে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও বাসিন্দাদের অসচেতনতার কারণে নদীটি দূষিত হচ্ছে। বর্জ্য ফেলার কার্যক্রম বন্ধ করা না হলে দূষণ আরও ভয়াবহ হবে।

নওগাঁ শহরের পারঘাটি ধোপাপাড়া এলাকার এক বাসিন্দার বক্তব্য, ‘শহরের অন্যান্য এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা-আবর্জনা নিয়ে যান। কিন্তু আমাদের এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা নেওয়া হয় না। এ ছাড়া আশপাশে ডাস্টবিনও নেই। ফলে বাধ্য হয়ে বাসাবাড়ির বর্জ্য নদীর তীরে গিয়ে ফেলছেন বাসিন্দারা।’

নদী সংগঠকদের মতে, শুধু ছোট যমুনা নদী নয়, সারা দেশেই নদীগুলোর একই অবস্থা। নদী হচ্ছে জীবন্ত সত্তা। মানুষের প্রয়োজনেই নদীকে বাঁচাতে হবে। নদী রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য হাইকোর্টের আদেশও আছে। কিন্তু প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অবহেলা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অসচেতনতার কারণে নদীগুলোর অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।

নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসকের বক্তব্য, পৌরসভার জনবলসংকটের কারণে এখনো অনেক এলাকার সব বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। দূষণ রোধ করতে নদীতীরে ময়লা আবর্জনা না ফেলার জন্য বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে নদীদূষণের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মিললে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

আমরা আশা করব, দ্রুত জনবলসংকট কাটিয়ে বর্জ্য সংগ্রহের কার্যক্রমকে বেগবান করা হবে। পৌরবাসীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় পরিবেশবিষয়ক ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সর্বোপরি কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তৈরিতে পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্জ্যের দূষণে নদীটি টিকে থাকবে তো?