নেত্রকোনায় এসআই শফিকুল হত্যায় অংশ নেন সাতজন
Published: 13th, January 2025 GMT
নেত্রকোনায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম (৪৮) হত্যায় সাতজন অংশ নেন। এর মধ্যে একজন তাঁকে চিনিয়ে দেন। একজন কোপানোর নির্দেশ দেন। দুজন রাস্তার দুই পাশে অবস্থান নেন। আর তিনজন শরিফুলকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন।
ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই আসামি সাজিবুল ইসলাম ওরফে অপূর্ব (২৮) ও বাকী বিল্লাহ (৩০) গতকাল রোববার সন্ধ্যায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এসব তথ্য জানিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নেত্রকোনা কার্যালয়ের পরিদর্শক ইমদাদুল বাশার।
জবানবন্দীর বরাত দিয়ে ইমদাদুল বাশার বলেন, আসামিরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। পূর্বশত্রুতার জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তবে কেন, কী কারণে, কারা হত্যা করেন, তা তদন্তের স্বার্থে এখনই বলতে রাজি হননি তিনি। তিনি জানান, এই হত্যার সঙ্গে একজন কুখ্যাত আসামি জড়িত। তাঁর নির্দেশেই এসআই শফিকুল ইসলামকে খুন করা হয়েছে। আর আদালতে জবানবন্দি দেওয়া দুর্গাপুর পৌর শহরের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা শমশের আলী খাঁর ছেলে টিভি মেরামতকারী সাজিবুল ইসলাম এবং ধানশিরা এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমানের ছেলে মোটর মেরামতকারী বাকী বিল্লাহ একজন খুনিকে মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে শফিকুলকে চিনিয়ে দেন। বাকী বিল্লাহ তাঁর মোটরসাইকেলটি নিজেই চালিয়ে নিয়ে যান। ওই খুনিকে নামিয়ে দিয়ে দুজন রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে পাহারা দেন।
আরও পড়ুননেত্রকোনায় এসআই শফিকুলকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২১১ জানুয়ারি ২০২৫এদিকে শফিকুল হত্যায় দায়ের হওয়া মামলাটি দুর্গাপুর থানা থেকে গতকাল দুপুরে পিবিআই নেত্রকোনা কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ। তিনি বলেন, মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযানও অব্যাহত আছে।
নিহত শফিকুল ইসলাম দুর্গাপুরের চণ্ডীগড় ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি জামালপুর পুলিশ লাইনসের বেতার বিভাগে এসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আরও পড়ুন‘আমার স্বামী পুলিশের লোক হইয়াও যদি সঠিক বিচার না পায়, কী হইব আমরার’১১ জানুয়ারি ২০২৫শফিকুল ইসলাম ছুটি নিয়ে গত বুধবার বাড়িতে আসেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি দুর্গাপুর পৌর শহরের বাগিচাপাড়া এলাকার বাসা থেকে বের হন। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার পর পানমহাল রোড এলাকা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় শফিকুল ইসলামের বাবা গত শুক্রবার সকালে বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন। গত শনিবার বিকেলে সাজিবুল ইসলাম ও বাকী বিল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব আসামিকেই আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। তদন্তের স্বার্থে এখনই নাম প্রকাশ করছি না। তবে আশা করছি, অন্য আসামিদেরও দ্রুততম সময়ের মধ্যেই গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হিন্দু ব্যক্তির আইডি হ্যাক: ফোন জমা থানায়, তবু ইসলামবিরোধী পোস্ট
ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্টের জেরে ছয় মাস আগে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল থানায় জমা দিয়েছেন মিঠুন বিশ্বাস (৪০) নামের এক হিন্দু কাঠমিস্ত্রি। তারপর থেকে সাধারণ ফোন ব্যবহার করছেন তিনি। তবুও বর্তমানে তার ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া হচ্ছে ইসলামবিরোধী নানা উস্কানিমূলক পোস্ট। যা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ঐ কাঠমিস্ত্রি।
এমন ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের তারাইল এলাকায়। বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে গণঅধিকার পরিষদ টুঙ্গিপাড়া উপজেলা শাখা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে একথা জানান ঐ ব্যক্তি।
ভুক্তভোগী মিঠুন বিশ্বাস বলেন, “আমি পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। শখের বশে প্রায় এক বছর আগে একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল কিনে একজনকে দিয়ে একটি ফেসবুক একাউন্ট খুলি। কিছুদিন পর আইডিটা হ্যাক করে কে বা কারা আমার আইডি থেকে ইসলামবিরোধী উস্কানিমূলক পোস্ট করতে থাকে। তখন ইউএনও, ওসি সাহেব এবং এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জানালে তারা থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে বলে। পরে গত ২০২৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর টুঙ্গিপাড়া থানায় জিডি করি। এছাড়া ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বারের কথায় মোবাইলটি থানায় জমা দিয়ে আসি। এরপর থেকে সাধারণ মোবাইল ব্যবহার করে আসছি।”
তিনি আরও বলেন, “তারপর থেকে কয়েকমাস বিরত থাকার পর হটাৎ ঈদের তিন দিন পর থেকে আমার নামের সেই ফেসবুক একাউন্ট থেকে ইসলামধর্ম নিয়ে উস্কানিমূলক পোস্ট করতে থাকে। যা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। পরে আবার থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। আমি একজন অতি সাধারণ মানুষ কিন্তু আমাকে ফাঁসাতে যারা এই কাজ করছে আমি তাদের বিচার চাই। এছাড়া এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”
এ বিষয়ে তারাইল এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মিজান শিকদার বলেন, “হিন্দু ছেলেটি সামান্য পড়াশোনা জানে, আর কাঠমিস্ত্রির কাজ করে। আগের ঝামেলার পর আমার পরামর্শে তার এন্ড্রয়েড ফোনটি থানায় জমা দেয়। কিন্তু তারপরেও নিরীহ ছেলেটিকে ফাঁসাতে কে বা কারা যেন ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট করে যাচ্ছে। এর আগেও ইউএনও, ওসি সহ এলাকার ইসলামধর্মের মুরব্বিদের নিয়ে বসার পর সে নির্দোষ প্রমাণিত হয়। ধর্ম নিয়ে উস্কানিমূলক
পোস্ট যে দিচ্ছে আইনের মাধ্যমে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
টুঙ্গিপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আকরাম হোসেন বলেন, “মিঠুন বিশ্বাস নামের কাঠমিস্ত্রির অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলটি কয়েকমাস ধরে থানায় জব্দ রয়েছে। কিন্তু তারপরও তার নামের আইডি থেকে ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট করছে কেউ। এ ঘটনায় তিনি দুইবার সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বিষয়টির তদন্ত চলমান রয়েছে।”
ঢাকা/বাদল/এস