পৃথিবীতে প্রায় পাঁচশ’ ৫০টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ভৌগোলিক-প্রাকৃতিক ঘটনা। এটি এমন একটি ঘটনা যা বেশ কয়েকবার পৃথিবীতে গণবিলুপ্তি ঘটিয়েছিল। আসুন জেনে নেয়া যাক এই আগ্নেয়গিরি ঠিক কি এবং কি কারণে আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হয়। পৃথিবীতে কিছু পাহাড় আছে যেগুলো থেকে ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত গলিত পাথর, ছাই এবং গ্যাস বের হয়ে আসতে পারে। এ ধরনের পাহাড়কে বলা হয় আগ্নেয়গিরি আর ভূগর্ভস্থ পদার্থের নির্গমনকে বলা হয় অগ্নুৎপাত। আবার অগ্নুৎপাত আগ্নেয়গিরির যে পথে নির্গমন ঘটে তাকে বলা হয় জ্বালা মুখ।
পৃথিবীর গভীরের তাপমাত্রা খুবই বেশি যা প্রায় ৬ হাজার ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। আর পৃথিবীর উপরিভাগ কিছু প্লেটের সমন্বয় তৈরি। এখানে রয়েছে সাতটি টেকটনিক প্লেট বা ভারী প্লেট এবং ২৬ টি মাইনর টেকটনিক প্লেট বা হালকা প্লেট। প্লেটগুলো সর্বদা গতিশীল। ফলে প্রায়ই এদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং এদের সংযোগস্থলে চাপের সৃষ্টি হয়। দুই প্লেটের সংযোগস্থলে চাপের ফলে সৃষ্টি হয় পাহাড়। যেমন হিমালয় পর্বত সৃষ্টি হচ্ছে ইন্ডিয়ান প্লেটের সাথে ইউরেশান প্লেটের সংঘর্ষের ফলে। ধাক্কার সময়টি তরঙ্গ সৃষ্টি হয় যাকে আমরা বলি ভূমিকম্প। ভূপৃষ্ঠ এবং পৃথিবীর কেন্দ্রে গলিত লোহার মাঝে একটি কঠিন শিলাস্তর রয়েছে যাকে মেন্টাল বলা হয়। চাপের পাশাপাশি দুই প্লেটের মাঝে-মাঝে প্রচন্ড তাপের সৃষ্টি হয় যা ম্যান্টলকে গলিয়ে ফেলে এবং সৃষ্ট চাপ এই গলিত পদার্থকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করে।
এটনা, ইতালি: এটি মাউন্ট এটনা সিসিলি দ্বীপের পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। এটি ইউরোপের সবচেয়ে উঁচু আগ্নেয়গিরি, যার উচ্চতা ৩৩২৯ মিটার। এটি আফ্রিকা প্লেট এবং ইউরেশিয়া প্লেট এর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। ১৯৭০ সালে এই আগ্নেয়গিরি থেকে ধোঁয়ার কুন্ডলি বার হতে দেখা গিয়েছিল। ২০২০ সালে পুনরায় এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। বছরে একাধিকবার অগ্নুৎপাত ঘটানো মাউন্ট এটনার রুদ্রমূর্তি ধারণে কালো ধোঁয়া আর ছাইয়ে ঢেকে গেছে গোটা সিসিলি দ্বীপ।
আরো পড়ুন:
কোয়ার্টার ফাইনালে ইতালি
বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের ওয়ার্ক পারমিট স্থগিত করলো ইতালি
মাউন্ট নিরাগঙ্গ, কঙ্গো: এই আগ্নেয়গিরি আফ্রিকার কঙ্গোতে অবস্থিত। ১৮৮২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৩৪ বার এই আগ্নেয়গিরি থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। ১৯৭৭ এর বিস্ফোরণে ৬০ মাইল গতিতে লাভা পাশের গ্রামের ছড়িয়েছে এবং এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনে। ওই ঘটনায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি এবং ৭০ জন মানুষ মারা যায়। বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট লাভা হ্রদের গভীরতা এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৭০০ ফুট। এটি পৃথিবীর গভীরতম লাভার হ্রদ। বিবিসির তথ্য, ২০২১ সালের মে মাসে মাউন্ট নিরাগঙ্গ থেকে ঝর্ণার মতো লাভা নির্গত হতে থাকে। এসময় কুড়ি লাখ মানুষ অধ্যুষিত গোমা শহরের আকাশে রক্তিম ঘন মেঘের সৃষ্টি হয়। লাভার স্রোত এক পর্যায়ে শহরের বিমানবন্দর পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়।
মাউন্ট মারাপি, ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি মাউন্ট মারাপি। ২০১০ সালে এখানে ভয়াবহ অগ্নুৎপাত হয়। বিপর্যয়ের আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ আগে ১১ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। হয়েছে। ২০২৩ সালেও ইন্দোনেশিয়ার আগ্নেয়গিরি মারাপিতে আবারও অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটে। এতে দেশটির মিনাংকাবাউ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। ফলে বিমানবন্দরে আটকে পড়েছিল কয়েকশো যাত্রী। লাভা উদগীরণ শুরু হলে প্রায় তিনশো মিটার এলাকাজুড়ে ছাই ছড়িয়ে পড়ে। পরে ওই এলাকার ওপর দিয়ে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
মাউন্ট ভিসুভিয়াস, ইতালি: মাউন্ট বিশুভিয়াস ইতালির নেপলস উপসাগরীয় একটি আগ্নেয়গিরি। ব্যাপকস থেকে নয় কিলোমিটার পূর্বে সমুদ্র উপকূলের খুব কাছেই এর অবস্থান। বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে অগ্নুৎপাত হচ্ছে। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯ অব্দের অগ্ন্যুৎপাতে রোমান শহর পম্পেই এবং হারকিউলানিয়াম লাভার নিচে চাপা পড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। অনেক পরে ১৮শ’ শতকে ঘটনাক্রমে শহরগুলো আবার খুঁজে পাওয়া যায়।
পোপোকেটাপেটল, মেক্সিকো: মেক্সিকোর অতি সক্রিয় পোপোকেটাপেটল আগ্নেয়গিরি। এটি উত্তর আমেরিকার মেক্সিকো অঞ্চল অবস্থিত একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। পোপোকেটাপেটল কথার অর্থ হলো ধোঁয়ার পাহাড়। মেক্সিকোর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ এই আগ্নেয়গিরি এল পেপো নামেও পরিচিত।ডয়চে ভেলের তথ্য, ২০০৫ সাল থেকে সক্রিয় এই আগ্নেয়গিরি।
কিলাওয়া আগ্নেয়গিরি, হাওয়াই: এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। এখানে ভূ-অভ্যন্তরের ম্যাগমা, গলিত পাথর, ম্যান্টাল ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং প্রবাহিত হতে থাকে মাসের পর মাস। লাভার পথে কোন কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
সাকুরাজিমা, জাপান: হিন্দুস্তান টাইমস-এর তথ্য, ২০১৯ সাল থেকে জেগে উঠেছে এই আগ্নেয়গিরি। জাপানের অন্যতম সক্রিয় এই আগ্নেয়গিরি থেকে ক্রমাগত উপচে পড়ে ম্যাগমা, লাভার স্রোত। কাগোসীমা প্রশাসনিক অঞ্চলে একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি সাকুরাজিমা। ১৯১৪ সালে অগ্নুৎপাতের ফলে মিশ্রিতলা ধারা বুতো পূর্ব দ্বীপটি অসুমী উপদ্বীপের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যায়। বর্তমানে এই আগ্নেয়গিরির সক্রিয় রয়েছে। আগ্নেয়গিরির ফলে অঞ্চলটিতে সাদা বালির একটি স্তর সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শনে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক
চীনের অর্থায়নে এক হাজার শয্যার আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেছেন রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হারুন অর রশিদ। মঙ্গলবার তিনি নীলফামারী সদর উপজেলার টেক্সটাইল মিলসংলগ্ন জায়গাটিকে ‘প্রথম পছন্দ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক সাইদুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রাজ্জাক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর ডা. জুবায়ের আল মামুন ও জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্তের খবরের পর মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা নেমে এসেছে। উচ্ছ্বসিত এ জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মিছিলও হয়েছে।
ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, উপদেষ্টা মহোদয় রংপুর বিভাগের আশপাশে ১০ থেকে ১২ একরের মধ্যে একটি জায়গা নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এখানে ২০ থেকে ২৫ একর জমি পাওয়া যাবে। ফলে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য এটি আরও উপযোগী হয়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসক এ জায়গাটির বিষয়ে প্রস্তাব দেন। সার্বিক দিক বিবেচনায় এটি উপযোগী স্থান। এই জায়গা নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ দ্বিমত পোষণ করেননি।
ডা. হারুন অর রশিদ আরও বলেন, নিরাপত্তার দিক থেকে উত্তরবঙ্গের মানুষ অত্যন্ত সহনশীল ও শান্তিপ্রিয়। পাশেই সৈয়দপুর বিমানবন্দর এবং সড়ক পথে অন্যান্য জেলার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা এই স্থানটিকে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য আরও উপযুক্ত করে তুলেছে।