দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে নাজুক, তা জানতে গবেষণার প্রয়োজন হয় না। প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে বিচিত্র ও ভীতিকর অপরাধের খবরই তার প্রমাণ। সাম্প্রতিক কালে ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদার দাবিতে ব্যবসায়ীকে হত্যা বা আহত করা এবং অপহরণের ঘটনাও ঘটছে একের পর এক। অপহরণের হাত থেকে রক্ষা পাননি চিকিৎসকও। এর পাশাপাশি যে খবরটি বেশি উদ্বিগ্ন করে, সেটি হলো আত্মগোপন অবস্থা থেকে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসা।

শুক্রবার রাতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বিপণিবিতান মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে চাঁদা না পাওয়ায় একজন ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত করেছে ইমন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা। গত ২২ ডিসেম্বর ইমন গ্রুপের লোকজন এহতেশামুল হকসহ দুই ব্যবসায়ীর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছিল। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ব্যবসায়ী এহতেশামুল মাল্টিপ্ল্যান কম্পিউটার সিটি থেকে বেরিয়ে সড়কে এলে একদল দুর্বত্ত তাঁকে রাস্তায় ফেলে চাপাতি দিয়ে কোপাতে শুরু করে। এর আগে শেওড়াপাড়ায় অপহৃত হয়েছিলেন রাসেল নামের এক ব্যবসায়ী। মামলার এজাহার অনুযায়ী, অপহরণকারীরা রাসেলের গলায় চাকু ঠেকিয়ে তাঁর কাছে ১০ লাখ চাঁদা দাবি করেন এবং ওই টাকা আনতে তাঁকে দিয়ে তাঁর মা-বাবা ও স্ত্রীকে ফোন করান। পরে পুলিশ এলাকার একটি বাসা থেকে তাঁকে উদ্ধার করে।

গাজীপুরের শ্রীপুরে অপহরণের ৯ ঘণ্টা পর আমিনুর রহমান নামের এক চিকিৎসক মুক্তি পেয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যায় মাওনা চৌরাস্তায় মহাসড়কের পাশ থেকে তাঁকে অপরহণ করা হয়। রোববার ভোরে গাজীপুরের হোতাপাড়া ও রাজেন্দ্রপুরের মাঝামাঝি স্থানে তাঁকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। তাঁর পরিবারের সদস্যদের দাবি অনুযায়ী, অপহরণকারীরা ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। ৬ জানুয়ারি যশোরের চৌগাছায় ধীরেন্দ্র দে (৬৫) নামের এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ঝালকাঠিতে সুদেব হালদার নামের এক মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় বাউকাঠি বাজারে তাঁর মোবাইল ফোন বিক্রি ও সার্ভিসিংয়ের দোকান আছে।

ওপরে বর্ণিত ঘটনাগুলোর বাইরেও সাম্প্রতিক কালে অনেক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যার খবর আমরা জানি না। অনেকে নিরাপত্তার ভয়ে থানা–পুলিশ করতেও সাহস পান না।

গত বছর আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে অপরাধীদের ধরতে বিভিন্ন এলাকায় রেইড ব্লক দেওয়া বলা হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অনেক স্থানে পুলিশ নিষ্ক্রিয়। কিন্তু ৫ মাস পরও একই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়, যেখানে পুলিশ বহিনীর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সশস্ত্র বাহিনী, র‍্যাব ও বিজিবির সদস্যরাও সহায়তা করছেন।

উদ্বেগের বিষয় হলো, চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনীর যেসব সদস্য আগে কারাগারে ছিল, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাদের অনেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে রাজনৈতিক কারণে কারাবন্দী করা নিঃসন্দেহে অন্যায়। কিন্তু তার চেয়ে বেশি অন্যায় রাজনৈতিক হয়রানির শিকার দেখিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের জেল থেকে ছাড়িয়ে আনা। সে সময় এ নিয়ে প্রতিবাদ হলেও সরকারের নীতিনির্ধারকেরা খুব আমলে নিয়েছেন বলে মনে হয় না।

হালে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, তার সঙ্গে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসার যোগসূত্র আছে। কিন্তু দৈত্য একবার কৌটা থেকে বের করার পর আবার কৌটায় ভরা কঠিন। প্রতিটি অপরাধের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। যে সমাজে অপরাধীরা অপরাধ করে পার পেয়ে যায়, সেই সমাজে অপরাধ দমন করা কেবল কঠিন নয়, অসম্ভবও বটে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেমের প্রস্তাবে রাজ না হওয়ায় মাদরাসাছাত্রীকে ‘অপহরণ’

ঝালকাঠির নলছিটিতে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মাদরাসা ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা নলছিটি থানায় গতকাল বুধবার মামলা করেছেন। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নলছিটি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুস ছালাম। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের জোয়ার আওরাবুনিয়া এলাকার মো. জলিল হাওলাদারের ছেলে মো. ইমরান হোসেন সুজন মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রায়ই প্রেমের প্রস্তাব দিতেন। তাতে রাজি না হওয়ায় গত ২৬ জানুয়ারি বিকেলে ওই ছাত্রী বাড়ির সামনে গেলে ইমরান, তার বোন সীমা বেগম ও আলিম মিলে মোটরসাইকেলে তুলি অপহরণ করে। 

ছাত্রীর মা জানান, তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি তার মেয়েকে ফেরত চান।

নলছিটি থানার ওসি বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ ভুক্তভোগীকে উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুবি শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি
  • মোহাম্মদপুরে অভিযানের মধ্যেই ঘটছে অপরাধ
  • ইজতেমায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‌্যাব
  • প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মাদরাসাছাত্রীকে ‘অপহরণ’
  • প্রেমের প্রস্তাবে রাজ না হওয়ায় মাদরাসাছাত্রীকে ‘অপহরণ’
  • ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদ পেতে অপহরণ, গ্রেপ্তার ৬ 
  • ‘ইজতেমার নিরাপত্তায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ হাজার সদস্য’
  • ফেসবুকে পরিচয়, দেখা করতে গিয়ে অপহৃত গ্রাফিক ডিজাইনার
  • বাসে বিএম কলেজছাত্রী লাঞ্ছিত, বাস শ্রমিক-শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাংচুর
  • নারীর ফাঁদে ঢাকার গ্রাফিক্স ডিজাইনার বন্দরে অপহরণ, গ্রেপ্তার ৬