কোলেস্টেরল নিয়ে দুশ্চিন্তাহীন দিন শুরু করতে আপনাকে সকালের ছোটখাটো কিছু অভ্যাসে আনতে হবে হালকা পরিবর্তন। এর মধ্যে আছে খালি পেটে কুসুম গরম লেবুপানি খাওয়া থেকে দ্রুত হাঁটা। আপনার হৃদ্‌স্বাস্থ্য দিনজুড়ে দারুণ রাখতে এমন চেষ্টা করতেই পারেন।

রক্তের কোলেস্টেরল উপাদানটি কোষ গঠনের জন্য খুব দরকারি। তবে রক্তে এর ঘনত্ব বা মাত্রা বেশি হলে তৈরি হয় সমস্যা। মাত্রার ওপর ভিত্তি করে কোলেস্টেরলকে মোটাদাগে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল), যাকে বলে খারাপ কোলেস্টেরল ও উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল), যা ভালো কোলেস্টেরল নামে পরিচিত।

এলডিএল ধমনিতে চর্বি জমিয়ে হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি করে। অন্যদিকে এইচডিএল রক্তের চর্বিকে যকৃতে পাঠিয়ে দিয়ে ঝুঁকি কমায়। এখন দেখা যাক, সকাল সকাল কোন অভ্যাসগুলো রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমায়।

আরও পড়ুন‘খারাপ’ কোলেস্টেরল কী কী করতে পারে০৯ জুন ২০২৩১.

কুসুম গরম লেবুপানি

সকালে খালি পেটে কুসুম গরম পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খান। এটি পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার করে চর্বি পরিপাকে সাহায্য করে। লেবুতে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এসব উপাদান খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ধমনিতে প্লাক জমতে বাধা দেয়। এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর দিন শুরুর এটাই সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর তরিকা।

আরও পড়ুনকুসুম গরম লেবু–পানি খেয়ে শীতের সকাল শুরু করলে পাবেন এই ৭ উপকারিতা১৬ ডিসেম্বর ২০২৪২. আঁশসমৃদ্ধ নাশতা

দিন শুরু করুন দ্রবণীয় আঁশযুক্ত নাশতা দিয়ে। সকালের নাশতায় ওটস বা চিয়াসিডের মতো খাবার অথবা ফলমূল, যেমন আপেল বা কলা থাকতে পারে। দ্রবণীয় আঁশ অতিরিক্ত কোলেস্টেরলকে এক অর্থে বেঁধে রাখে, যাতে তা রক্তপ্রবাহের সঙ্গে মিশতে না পারে। সকালের নাশতায় এই অভ্যাস শুধু খারাপ কোলেস্টেরল কমাতেই সাহায্য করবে না, দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকার অনুভূতিও দেবে।

আরও পড়ুনমাত্র ১ সপ্তাহ চিয়া সিড খেলে শরীরে যে পরিবর্তনগুলো লক্ষ করবেন০১ আগস্ট ২০২৪৩. একমুঠো বাদাম

সকালের নাশতায় একমুঠো বাদাম রাখতে পারেন। সেটা হতে পারে কাঠবাদাম বা আখরোট। আবার তিসি, তুলসীবীজ বা অন্য কোনো বাদামও হতে পারে। এসব খাবার ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও অসম্পৃক্ত চর্বিসমৃদ্ধ। এসব খাবার ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। মনে রাখবেন, একমুঠো বাদাম মানে একমুঠোই, এর বেশি নয়। কারণ, বাদামে কিন্তু ক্যালরি অনেক বেশি!

আরও পড়ুনদিনে কখন ও কয়টি কাঠবাদাম খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার২৩ ডিসেম্বর ২০২৪৪. দ্রুত হাঁটুন

সকালে ২০ থেকে ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন। এটা কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে। হাঁটার মতো নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং অতিরিক্ত ট্রাইগ্লিসারাইড জমানো কমিয়ে দেয়। ট্রাইগ্লিসারাইড একধরনের চর্বি, যা শরীরে শক্তি সঞ্চয়ের প্রধান উৎস। কিন্তু অতিরিক্ত ট্রাইগ্লিসারাইড হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি তৈরি করে। সকালের হাঁটা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা পুরো দিন চলার জন্য শরীরে ছন্দ এনে দেয়।

আরও পড়ুনকোন বয়সে প্রতিদিন কত মিনিট হাঁটবেন২৫ নভেম্বর ২০২৪৫. যোগব্যায়াম

সকালে সাধারণ কিছু যোগব্যায়াম ও পেশির সংকোচন-প্রসারণ মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এসব ব্যায়াম কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। ‘সর্প’ ও ‘সেতু’র মতো সাধারণ যোগাসন রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এসব আসন কার্ডিওভাসকুলার রোগ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। অর্থাৎ সকালে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটের যোগব্যায়ামই আপনার দুশ্চিন্তা লাঘবে বড় ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুনরোগ প্রতিরোধী যোগব্যায়াম২৭ অক্টোবর ২০২১৬. কফির বদলে গ্রিন টি

আপনি কফিপ্রেমী হলে কষ্ট করে সকালে কফিকে ‘না’ বলুন। এর বদলে বন্ধু পাতান গ্রিন টির সঙ্গে। প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ঠাসা গ্রিন টি খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। সকালে এক কাপ গ্রিন টি আপনাকে যেমন ঝরঝরে করে তুলবে, তেমনি আপনার হৃৎপিণ্ডকে রোগের হাত থেকে রক্ষাও করবে।

আরও পড়ুনগ্রিন টি কি সত্যিই ওজন কমায়? ০৯ জুলাই ২০২৪৭. সকালে চিনিযুক্ত খাবারকে ‘না’

সকালের নাশতায় চিনিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারকে ‘না’ বলুন। অতিরিক্ত চিনি ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। সকালে যদি আপনার রসনা চিনিযুক্ত খাবার ছাড়া তৃপ্ত না-ই হতে চায়, তাহলে মধু বা তাজা ফল খেতে পারেন।

এভাবে রোজ সকালে ছোটখাটো কিন্তু ধারাবাহিক পরিবর্তন আনলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারবেন। তাই আজই এসব অভ্যাস শুরু করুন আর খারাপ কোলেস্টেরলকে বলুন বিদায়।

সূত্র: হেলথ লাইন

আরও পড়ুন১৪ দিন চিনি না খেলে যেসব আশ্চর্য উপকার আপনি পাবেন ২৯ জুলাই ২০২৪

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৩শ’ শয্যা হাসপাতালের রোগীদের সেবায় জেলা প্রশাসনের হুইল চেয়ার বিতরণ

৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জের রোগীদের সেবায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হুইল চেয়ার বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকাল দশটায় শহরের খানপুর এলাকায় ৩০০ শয্যা হাসপাতালে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

এসময়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা হাসপাতালের প্রতিটি স্থান ও ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করেন এবং হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের সাথে কথা বলেন। 

এসময়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে সেবা নিতে আসা অসুস্থ রোগীদের জন্য পাঁচটি হুইল চয়ার বিতরণ করলাম।

তারা রিক্সা কিংবা ভ্যান করে হাসপাতালে আসার পরে হেঁটে হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারে না সেইসব রোগীদের জন্য এই হুইল চেয়ার। 

আগে যে হুইল চেয়ার গুলো ছিল তার অধিঅংশই নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে অনুরোধ করেছিল রোগীদের সবার জন্য কিছু হুইল চেয়ার দেওয়ার জন্য আমরা তাদের সেই অনুরোধের প্রেক্ষিতেই আমরা আজকে হুইল চেয়ার গুলো তাদের মাঝে বিতরণ করলাম। 

আমরা জানি হাসপাতালে যারা আসেন তারা সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তে এবং অসহায় রোগীরাই আসেন। যখন তারা অসহায় সময়টা আসবেন তারা যেন তাদের সঠিক সেবাটা পায়। 

তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমরা এই হাসপাতালের একটা গ্রীন এন্ড ক্লিন একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। সে আলোকেই আমরা বিভিন্ন ধরনের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কাজ শুরু করেছি। এই হাসপাতালে তারা অনেকটাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছে অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে। 

আর হাসপাতালে যে বর্জ্য ব্যবস্থা রয়েছে সে বিষয়ক কথা হয়েছে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের সাথে কথা এটাকে কিভাবে পরিষ্কার করা যায় এবং ডেইলি নেওয়া যায় সেটা আমরা চেষ্টা করব। আর এই হাসপাতালে আমরা এক হাজারের মতন গাছ লাগাব হাসপাতালকে সবুজের অরণ্য হিসেবে গড়ে তুলবো। 

তিনি বলেন, আমরা আজকে হাসপাতালের প্রতিটি স্থান ও ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করেছি এবং সেবা নিতে আসা রোগীদের সাথে কথা বলেছি। আপনারা যেন হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়ে যাওয়ার পরে অনেকেই সেটিসফেশন করে না এবং আমাদের কাছে অনেক ধরনের অভিযোগ করেছে। 

কিন্তু আজকে আমরা যাদের সাথে কথা বলেছি তারা কিন্তু আমাদেরকে বলেছে যে না আমরা এখানে সঠিক সেবা পাচ্ছি। তবে আউট সাইডে মাদকাসক্তরা রয়েছে তার বিভিন্ন সময় চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা আছে।

এগুলো প্রতিরোধে আমরা আজ থেকে এখানে মোবাইল নিয়মিত মোবাইল কোড পরিচালনা করব। রাতে করে আজকের পর থেকে এখানে কোন মাদকাসক্ত বা না আসতে পারে এবং চুরির বিষয়টা আমরা কঠোরভাবে মনিটরিং করব। 

তিনি আরও বলেন, এটি কিন্তু একটি বড় ধরনের হসপিটাল। আমাদেরকে অবশ্যই এখানে সিকিউরিটিটা এন্ড শিওর করতে হবে। আগামী মাসে আমাদের পাশের যে নতুন ভবনটিও রয়েছে এটার চারতলা পর্যন্ত কমপ্লিট হয়েছে। আগামী মাসে আমরা মিনিস্টারিতে কথা বলব এটার অনুভূতি পেলে আমরা এর কার্যক্রম চালু করব। 

এর মাধ্যমে এর কার্যবিধি বৃদ্ধি পাবে আর আমরা এখানে একটি আনসার ফোর্স নিয়োগ থাকবে যাতে করে এখানকার সিকিউরিটি ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এখানে যারা আনসাররা থাকবে তাদের রুমগুলোকে আমরা সংস্কার করে দিব।

যদি এখানে কমপ্লিট একটিভ আনসার টিম পাই তাহলে রাতের বেলা এখানে সিকিউরিটিটা জোরদার হবে এবং চুরিও মাদক থেকে আমরা উত্তোলন হতে পারব। 

আর হাসপাতালে দালালদের বিষয়ে আমাদের কঠোর নির্দেশনা নির্দেশনা রয়েছে। যদি তাদের সাথে আমাদের কোন কর্মকর্তা জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ আবুল বাসারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।  এসময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আলমগীর হোসাইনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ