চা বাগানের মদের পাট্টা (বন্দোবস্ত) ভাঙার জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। 

রোববার বিকেল ৪টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমা বাগান মাঠে আয়োজিত চা শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘চা বাগানের বৈষম্য নিয়ে আগামীর বাংলাদেশে কথা বলতে চাইলে আগে বাগানের মদের পাট্টা ভাঙুন। মাথা যদি ঠিক থাকে, তাহলে কেউ মাথা কিনতে পারবে না। এমন একটা চক্রান্ত করা হয়েছে, যেন আমাদের মাথাই ঠিক না থাকে।’

সারজিস আরও বলেন, ‘১৬ বছর ধরে উন্নয়নের গল্প শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল যে আমরা বাংলাদেশে নেই, মঙ্গলগ্রহে বসবাস করি। এই উন্নয়ন কোথায়? শেখ হাসিনার চোখ কি গোপালগঞ্জ থেকে এই কমলগঞ্জে আসেনি? টুঙ্গিপাড়া থেকে চা শ্রমিকদের পাড়ায় তার চোখ কি পড়েনি?’

ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডসহ সব চা বাগান অবিলম্বে চালু করা, শ্রমিক ও চা শিল্প রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা নেওয়া এবং মানবিক মজুরি, শিক্ষা স্বাস্থ্য বাসস্থান ও চাকরি নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন দাবিতে চা শ্রমিকদের এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কুরমা চা বাগান মাঠে পঞ্চায়েত কমিটি ও চা ছাত্র যুব সংঘের আয়োজনে চা শ্রমিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন মনু দলই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরী।

চা শ্রমিক আপন ব্যানার্জী রুদ্র ও ভিম্পল সিংহ ভোলার যৌথ সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, সংগঠক প্রীতম দাশ, সমন্বয়ক শ্যামলী সুলতানা জ্যানি, আসাদুল্লাহ গালিব ও কুরমা চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক ইউসুফ খান।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মুগ্ধতা ছড়ানো মণিপুরিদের প্রাচীন উৎসব ‘লাই হারাওবা’

খোলা মাঠ পার হয়ে দমকা হাওয়া আছড়ে পড়ছে গাছে গাছে। হাওয়ায় ঝুমুর নাচে দুলে উঠছে গাছের শাখা-প্রশাখা। বাতাস বৈশাখের ভ্যাপসা গরমকে তেতে উঠতে দিচ্ছে না। একটা মনোরম, মন ভালো করা বিকেল তৈরি হয়েছে গ্রামে। মাঠের মধ্যে কিছু ভ্রাম্যমাণ দোকান বসেছে। খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান। আছে পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুভাজি, ঝালমুড়ি, চানাচুরসহ নানা রকম মুখরোচক খাবারের দোকানও।

বিকেলটা যত নুয়ে পড়ছে সন্ধ্যার দিকে, গ্রামের কাঁচা-পাকা পথ ধরে তত নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীসহ নানা শ্রেণির মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। শিশু, কিশোরী, তরুণী অনেকের খোঁপায় দুলছে ময়ূরের পেখমের মতো পালক। তারা অংশ নেবে নাচে, সে জন্য এ প্রস্তুতি। রঙিন হয়ে উঠেছে বিকেলটি। এই আয়োজন, ভিড় তৈরি হয়েছে একটি উৎসবকে ঘিরে। মণিপুরি জনগোষ্ঠীর একটি প্রাচীন ও তাৎপর্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ‘লাই হারাওবা’ বা ‘দেবতাদের আনন্দ’ উৎসব এখানে ডাক দিয়েছে সবাইকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের তেতইগাঁওয়ে অবস্থিত মণিপুরি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে এমন ভিড় জমেছিল। আগের দিন তিন দিনের এই উৎসব শুরু হয়। এর পর থেকে চলছে নানা আচার-অনুষ্ঠান। শেষ হয় আজ শুক্রবার। এতে অর্থায়ন করেছে ইউনেসকো-আইসিএইচ, উৎসব বাস্তবায়নে ছিল বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। সহযোগিতা ও পরিচালনায় ছিল আইসিএইচ পিডিয়া বাংলাদেশ (সিআইবি), সাধনা-দক্ষিণ এশীয় সংস্কৃতির অগ্রগতি কেন্দ্র।

বিকেলটা ঘনিয়ে আসতে থাকলে জমে ওঠে মণিপুরি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণ। ক্রমে শ্রোতা-দর্শকে পূর্ণ হয়ে ওঠে শামিয়ানার নিচে পেতে রাখা খালি চেয়ারগুলো। আচার-অনুষ্ঠান, নাচে অংশ নিতে কুশীলবেরাও সক্রিয়, সচল হয়ে ওঠেন। ঢোল-খোল, বাঁশিসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের সুর বেজে ওঠে, প্রাঙ্গণজুড়ে চলতে থাকে সুরের ঝংকার। বাইরে সন্ধ্যার আঁধার নামলে উন্মুক্ত মঞ্চে উপস্থিত হন সমবেত শিল্পীরা। ক্রমে নারী, তরুণী ও শিশু-কিশোরীরা নৃত্যে অংশ নিতে থাকেন। গান ও সুরের তালে, নানা মুদ্রায় দীর্ঘ সময় ধরে নাচ চলতে থাকে। একটা সময় অনেকজনের অংশগ্রহণে উন্মুক্ত মঞ্চটি জলতরঙ্গের মতো দুলতে থাকে, ভাসতে থাকে। একদিকে খোলা হাওয়া, অন্যদিকে গান ও সুরের মূর্ছনা সন্ধ্যাটিকে প্রার্থনার মতো স্নিগ্ধ মুগ্ধতায় ডুবিয়ে রাখে।

ঢেউতরঙ্গে চলছে নাচ। বৃহস্পতিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মণিপুরি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিখোঁজের এক দিন পর রেললাইনের পাশে লাশ উদ্ধার, স্বজনদের অভিযোগ হত্যাকাণ্ড
  • মুগ্ধতা ছড়ানো মণিপুরিদের প্রাচীন উৎসব ‘লাই হারাওবা’