একটি বাগানের একজন মালিক ছিলেন। লোকটি ছিলেন খুবই আল্লাহভীরু। তিনি বাগানের ফসলের নির্দিষ্ট একটি অংশ গরিব-মিসকিনদের দান করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর তিন ছেলে সেই বাগানের মালিক হলো। তিন ছেলের মধ্যে দুজন ভাবল, তাদের পরিবারের লোকসংখ্যার তুলনায় বাগানের ফসল খুবই কম। ফসলের নির্দিষ্ট অংশ আর গরিব-মিসকিনকে দান করা সম্ভব নয়। ছেলের মধ্যে একজন অবশ্য গরিব-মিসকিনকে দান করতে চাইল। কিন্তু বাকি দুই ছেলে তার কথায় কান দিল না। পরদিন সকালে ভিক্ষুক আসার আগেই তারা ফসল কেটে নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করল। প্রতিজ্ঞা করার সময় তারা ইনশা–আল্লাহ (আল্লাহ চাইলে) বলল না। ইনশা–আল্লাহ না বলায় এবং গরিব-মিসকিনকে কিছু না দেওয়ার অপরাধে আল্লাহ তাদের বাগানের ওপর গজব নাজিল করলেন।
তিন ভাই ঘুমিয়ে থাকার অবস্থায় প্রচণ্ড ঝড় বয়ে গেল। এতে বাগানের ফসলের বিরাট ক্ষতি হলো। সকালে তারা ফসল কাটতে যাওয়ার সময় চুপি চুপি বলল, ‘সাবধান, আজ যেন কোনো ভিক্ষুকের দল ভিড় জমাতে না পারে।’ তারা আসার আগেই ফসল তোলার কাজ শেষ করতে হবে। ভিক্ষুক ও গরিবদের তাড়িয়ে দেওয়ার মনোভাব নিয়ে তারা বাগানে পৌঁছাল।
বাগানে গিয়ে তারা দেখল লণ্ডভণ্ড পরিস্থিতি। সেটা দেখে তারা বলল, ‘মনে হয় আমরা পথ ভুল করে অন্য কোনো বাগানে চলে এসেছি। এটা তো আমাদের বাগান নয়।’ তাদের যে ভাইটি দরিদ্রদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল, সে বলল, ‘তোমাদের বলেছিলাম, আল্লাহর সঙ্গে নাফরমানি কোরো না। ভিক্ষুকদের বঞ্চিত করার ইচ্ছা অহংকারের পরিণতি ছাড়া কিছুই নয়। এখনো সময় আছে, গুনাহ থেকে তওবা কর।’
তারা তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার মহিমা প্রকাশ করছি। আপনিই মহাশক্তিধর। আপনি আমাদের ক্ষমা করুন। আমরা সীমালঙ্ঘন করে ফেলেছি। ক্ষমা না করলে আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’
আরও পড়ুনসুলায়মান (আ.) আল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছিলেন১৩ নভেম্বর ২০২৩
পবিত্র কোরআনে আছে, ‘আমি ওদের পরীক্ষা করব, যেভাবে আমি পরীক্ষা করেছিলাম সেই বাগানের মালিকদের, যখন ওরা শপথ করে বলেছিল যে ওরা সকালে বাগানের ফল পেড়ে আনবেই কোনো ব্যতিক্রম না করে (ইনশা–আল্লাহ না বলে)। তাই যখন ওরা ঘুমিয়েছিল তখন তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে এক বিপর্যয় সেই বাগানে হানা দিল, ফলে তা পুড়ে গিয়ে রাতের আঁধারের মতো কালো হয়ে গেল। সকালে ওরা একে অপরকে ডেকে বলল, যদি ফল তুলতে চাও, তবে সকাল-সকাল বাগানে চলো। তারপর ওরা ফিসফিসিয়ে কথা বলতে বলতে চলল, আজ যেন কোনো মিসকিন বাগানে তোমাদের কাছে ভিড়তে না পারে। ওরা তাদেরকে ঠেকাতে পারবে এই বিশ্বাসে সকালে বাগানের দিকে গেল। তারপর ওরা যখন বাগানের চেহারা দেখল (তখন) বলল, আমরা তো দিশা হারিয়েছি! না, আমরা তো ঠকে গেছি! ওদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো লোকটা বলল, আমি কি তোমাদেরকে আল্লাহর পবিত্র মহিমা ঘোষণা করতে বলিনি? তখন ওরা বলল, আমরা আমাদের প্রতিপালকের পবিত্র মহিমা ঘোষণা করছি, নিঃসন্দেহে আমরা সীমালঙ্ঘন করেছিলাম। তারপর ওরা পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করতে লাগল। ওরা বলল, হায়, দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো সীমালঙ্ঘন করেছিলাম। আশা করি, আমাদের প্রতিপালক এর পরিবর্তে আমাদের আরও ভালো বাগান দেবেন। আমরা আমাদের প্রতিপালকের দিকে মুখ ফেরালাম। শাস্তি এভাবেই আসে, আর পরকালের শাস্তি আরও কঠিন, যদি ওরা জানত!’ (সুরা কলম, আয়াত: ১৭-৩৩)
আরও পড়ুনমন্দ আচরণ নিয়ে আল্লাহর বক্তব্য সুরা সাফে১৪ নভেম্বর ২০২৩সুরা কলম পবিত্র কোরআনের ৬৮তম সুরা। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। কলমের শপথ করে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে এই সুরায় বলা হয়েছে, তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহে তুমি পাগল নও। ইনশা–আল্লাহ না বলে যারা বড়াই করেছিল, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
আরও পড়ুনরুমির ‘মসনভি’তে কোরআনের মর্মবাণী১৫ নভেম্বর ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দেড় ঘণ্টায় শেষ সুলভ মূল্যের ডিম-দুধ, পাননি অনেকেই
নির্ধারিত এলাকায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের গাড়ি পৌঁছায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। এরপর শুরু হয় সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও গরুর মাংস বিক্রি। দুপুর ১২টার কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল গাড়িতে ডিম ও দুধ নেই। কেবল ১৬ কেজি গরুর মাংস অবশিষ্ট রয়েছে। অর্থাৎ মাত্র দেড় ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে সুলভ মূল্যে বিক্রির জন্য আনা দুধ ও ডিম।
আজ সোমবার চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী ওয়্যারলেস এলাকায় দেখা গেছে এমন চিত্র। এদিন নগরের ওয়্যারলেস ও টেক্সটাইল এলাকায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। এই কর্মসূচির আওতায় পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও ডিম প্রতি ডজন ১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ প্রতিটি গাড়িতে ২০০ লিটার দুধ, ১ হাজার ৫০০ পিস ডিম ও ৭৫ কেজি করে মাংস ছিল। সে হিসেবে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ২০০ লিটার দুধ ও ১২৫ ডজন ডিম বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। তবে দুপুর ১২টার দিকে তেমন ভিড় দেখা যায়নি সেখানে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, তাঁরা অনেকে আগে এসেও পণ্য পাননি।
এদিন অন্তত ১০ ক্রেতা দুধ-ডিম না পেয়ে ফেরত গেছেন। ডিম কিনতে আসা ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি দুপুর ১২টার দিকে এসে ডিম পাই নাই। বাসা থেকে আসতে আসতেই দেখি সব শেষ। তাঁরা নাকি দেড় হাজার ডিম আনছে। তাহলে আমরা পাই নাই কেন?’
গাড়ি থেকে এসব পণ্য কেনার জন্য প্রথমে টাকা দিয়ে স্লিপ নিতে হয়। কর্মকর্তারা জানান, একজন সর্বোচ্চ এক ডজন ডিম, এক বা দুই লিটার দুধ ও এক কেজি মাংস কিনতে পারেন। কেউ চাইলে শুধু ডিম, দুধ অথবা মাংস কিনতে পারবেন। তবে মাংসের চাহিদা তুলনামূলক কম।
দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকায় ফ্রিজার ট্রাক রয়েছে। ফলে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য পণ্য নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু চট্টগ্রামে সে সুযোগ নেই। তাই পরিমাণ কম। আবার দ্রুত ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা বোয়ালখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুমন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সবাইকে পণ্য দেওয়া হয়েছে। মাংসের চাহিদা কম থাকায় কিছু মাংস থেকে গেছে। ডিমের চাহিদা বেশি ছিল। দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে।