গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগ ভয়ংকররূপে ফেরার পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, ছাত্রদের উচিত ছিল আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা। কিন্তু সবাই ভাগ–বাঁটোয়ারা আর ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে ব্যস্ত।

রোববার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শ্রমিক অধিকার পরিষদের জাতীয় প্রতিনিধি সভায় নুরুল হক এ কথা বলেন। এ সময় আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শ্রমিক অধিকার পরিষদের কাউন্সিলের ঘোষণা দেন তিনি। কাউন্সিল উপলক্ষে চার সদস্যের নির্বাচন কমিশনও গঠন করা হয়েছে। সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন দলের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ।

প্রতিনিধি সভায় গণ অধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক বলেন, ‘আমরা সবাই শ্রমিক, সেটা প্রধান উপদেষ্টা হোক কিংবা প্রধানমন্ত্রী হোক। এমপি–মন্ত্রীরাও শ্রমিক, তাঁরাও বেতন নেন; হয়তো কাজের ধরন ভিন্ন।’ শ্রমিক অধিকার পরিষদ জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে দাবি করেন তিনি।

জুলাই ঘোষণাপত্রে গত ১৫ বছরে বিরোধী মতের সবার ত্যাগ অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান নুরুল হক। তিনি বলেন, শুধু জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত কিংবা নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে নয়, গত ১৫ বছরে লড়াই করতে গিয়ে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদেরও সহযোগিতা করতে হবে। যাঁরা জীবন দিয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারকেও সহযোগিতা করতে হবে।

দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘জালিয়াতি ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন’ আখ্যায়িত করে নুরুল হক বলেন, ২০০৮ সালেও ভারতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাতানো নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। ভারতের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ পাখির মতো মানুষ হত্যা করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। আওয়ামী লীগের হাত থেকে রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, আলেম, সাংবাদিক—কেউ রেহাই পাননি।
সভায় গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো.

রাশেদ খান বলেন, শতাধিক পণ্যের ভ্যাট–ট্যাক্স বাড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকার জুলুম শুরু করেছে। অনতিবিলম্বে এই ভ্যাট–ট্যাক্স প্রত্যাহার করতে হবে।

রাশেদ খান আরও বলেন, ‘সরকারকে বলব, হাসিনার স্টাইল অনুসরণ করবেন না। তাহলে পরিণতিও হাসিনার মতো হবে। আপনারা রাষ্ট্র সংস্কারের আগে আওয়ামী হাইকমান্ড ও শেখ পরিবারের গুন্ডাদের গ্রেপ্তার করে দেখান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও নিবন্ধন স্থগিত করে নিজেদের সাহসিকতার পরিচয় দিন।’
শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে সংগঠনের সভাপতি আবদুর রহমান, গণ অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যাকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে অনেক দেশ। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।

বাংলাদেশের প্রধান দুই রপ্তানি বাজারের একটি যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের একটি বড় অংশ রপ্তানি হয় দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি হয় প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার, যা প্রধানত তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তান ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলারে।

নতুন করে উচ্চ মাত্রায় এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।

ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্যের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, ‘আজ খুব ভালো খবর’ থাকবে। এ সময় দর্শক সারি থেকে করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়।

এই দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ অভিহিত করেন ট্রাম্প। নতুন শুল্ক আরোপকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, এই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করছে।

ট্রাম্পের পাল্টা এই শুল্ক আরোপে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩৪ শতাংশ।

এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে।

অন্যান্য যেসব দেশের পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

পাল্টা এই শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকা ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’।

যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব গাড়ি উৎপাদন করা হয় তার ৮০ শতাংশের বেশি সেদেশে বিক্রি হয়। আর জাপানে যেসব গাড়ি বিক্রি হয় সেগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি সেদেশে তৈরি হয়। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি বিক্রি হয় খুব সামান্য।

মার্কিন কোম্পানি ফোর্ড অন্যান্য দেশে খুব কম গাড়ি বিক্রি করে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অন্য যে কোনো দেশে তৈরি মোটরযানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং এটা আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।

শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, আজকের দিনকে আমেরিকান শিল্পের ‘পুনর্জন্ম’ এবং আমেরিকাকে ‘আবার সম্পদশালী’ করার দিন হিসেবে স্মরণ করা হবে।

এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাধার মুখে রয়েছে।

অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা আরও খারাপ অবস্থা তৈরি করেছে।

বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মেধাসত্ত চুরিসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ করেছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ