লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড এলাকায় টিউলিপ সিদ্দিক যে ফ্ল্যাটে কয়েক বছর বসবাস করেন, সেই ফ্ল্যাট কেনা হয়েছিল একটি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে। করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে নিবন্ধিত ওই কোম্পানির নাম পেডরক ভেঞ্চারস। এই কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের দুজন ব্যবসায়ীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

২০০০ সালে ২ লাখ ৪৩ হাজার পাউন্ড দিয়ে পেডরক ভেঞ্চারস ফ্ল্যাটটি কেনে। ২০১৬ সালে ফাঁস হওয়া পানামা পেপারস এবং ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) সরবরাহ করা নথিতে দেখা যায়, হারবার্টন এস এ নামে একটি অফশোর কোম্পানি পেডরক ভেঞ্চারস কিনে নেয়। এরপর পেডরক ভেঞ্চারস বন্ধ হয়ে যায়।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির মালিক দুজন। তাঁরা হলেন নাসিম আলী ও মাসুদ আলী নামের দুই। দুজনই বাংলাদেশি। ১৯৮৩ সালে ঢাকায় নিবন্ধিত শ্যামলিমা লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির যৌথ মালিক তাঁরা। বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, এমন বিদেশি জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলোকে লোকবল সরবরাহ ছাড়া আরও বেশ কিছু সেবা দিয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠান।

শ্যামলিমা লিমিটেডের পরিচয় দিতে গিয়ে একে ‘বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ‘দীর্ঘ অভিজ্ঞতা’। পাশাপাশি এ–ও বলা হয়েছে যে তাদের ‘প্রকল্পে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মীর কাছ থেকে ঘনিষ্ঠ ও পূর্ণ সহযোগিতা’ পাওয়া যায়, যা এ কাজে ‘বড় ধরনের সাহায্য’ করে থাকে। তাদের গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে শেভরন, শেল ও চীনের রাষ্ট্রমালিকানাধীন একাধিক তেল কোম্পানি। এই দুই ব্যক্তির এলএনজি ও সৌরশক্তির পৃথক ব্যবসাও রয়েছে।

১৯৭০ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান নাসিম আলী (৭০)। সেখানে বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রী একজন শিল্পী। তাঁদের সন্তানেরা উত্তর লন্ডনের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে পড়েন। তিনি মাঝেমধ্যে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা নথিতে বলা হয়, তাঁর ভাই অর্থাৎ মাসুদ আলী যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ব্যবসায়ের অংশীদার শহীদ ইনাম চৌধুরীর সঙ্গে মিলে তাঁরা শুধু পেডরক বা হারবার্টন এস এ নয়, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে আরও একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এর মধ্যে একটি শ্যামলিমা লিমিটেড।

২০০৫ সালের জানুয়ারিতে এসে নাসিম আলী ও মাসুদ আলী হারবার্টন এস এ বন্ধ করে দিতে বলেন। এর ২৪ ঘণ্টার কম সময় পরে হ্যাম্পস্টিডের সেই ফ্ল্যাটের মালিকানা মঈন গনি নামের এক ব্যক্তিকে উপহার হিসেবে হস্তান্তর করা হয়। মঈন গনি একজন বাংলাদেশি আইনজীবী (ব্যারিস্টার)। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। পরে তিনি শেখ হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর ছবিও আছে। আন্তর্জাতিক একটি প্যানেলে ভূমিকা রাখতে শেখ হাসিনাই তাঁকে বলেছিলেন উল্লেখ করে মঈন গনি লিখেছিলেন, এটা তাঁর জন্য অত্যন্ত সম্মানের বিষয়।

ঢাকার একটি সূত্র বলেছে, মঈন গনির বাবা–মায়ের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁরা একবার একটা রেস্তোরাঁ দিয়েছিলেন, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা প্রায়ই যেতেন। এসব বিষয়ে বক্তব্যের জন্য নাসিম আলী ও মাসুদ আলী এবং মঈন গনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।
২০০৯ সালের মার্চে সেই ফ্ল্যাট টিউলিপের বোন আজমিনাকে উপহার দেন মঈন গনি। আজমিনার বয়স তখন ১৮ বছর। সে সময় তাঁর কোনো আয়রোজগার ছিল না।

অনেক বছর এই ফ্ল্যাটের সঙ্গে নাসিম আলীর কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তবে আজমিনা সিদ্দিককে ফ্ল্যাটটি হস্তান্তরের সময় ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিতে নাসিম আলী যে স্বাক্ষর করেছিলেন, তার সঙ্গে পানামা পেপার্সে থাকা স্বাক্ষরের মিল রয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিক বেশ কয়েক বছর ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। ২০১২ ও ২০১৪ সালে নিজের ঠিকানা হিসেবে তিনি এই ফ্ল্যাটের উল্লেখ করেছিলেন। টিউলিপের স্বামী ক্রিশ্চিয়ান পারসিও ২০১৬ সালে তাঁর ঠিকানা হিসেবে ওই ফ্ল্যাটের উল্লেখ করেছিলেন। এর এক বছর পর যুক্তরাজ্যের এমপি নির্বাচিত হন টিউলিপ। পরে এই ফ্ল্যাট ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি করেন তাঁর বোন আজমিনা সিদ্দিক।

নাসিম আলী ও মাসুদ আলীর দুই প্রতিষ্ঠানের ঢাকা কার্যালয়ের কর্মীরা জানান, দুই পরিচালক কোথায় আছেন, এ বিষয়ে তাঁরা কিছু জানাতে পারবেন না। মুঠোফোনেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারবেন না। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, এমন একটি সূত্র পরে জানায়, পরিচালকেরা এ বিষয়ে জানতেন না। ঢাকায় মঈন গনির কার্যালয়ে যোগাযোগ করেও একই ধরনের সাড়া পাওয়া যায়। তাঁর কার্যালয়ের কর্মীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর থেকে মঈন গনি লন্ডনে আছেন। উত্তর–পশ্চিম লন্ডনের সার্কেলউড এলাকায় নাসিম আলীর বাড়িতে গিয়ে দরজায় কড়া নেড়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।          

টিউলিপ সিদ্দিক ইতিমধ্যে বলেছেন, এই ফ্ল্যাটটি তাঁর বোন আজমিনার নামে। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গেও কথা বলা উচিত। তবে বিষয়টি নিয়ে জানতে আজমিনা সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অস্কার মঞ্চে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরলেন অশ্রুসিক্ত জো

জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৯৭তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস। এবারের আসরে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগের পুরস্কার জিতেছেন আমেরিকান তারকা জো সালদানা। ‘এমিলিয়া পেরেজ’ চলচ্চিত্রে একজন আইনজীবীর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে এই স্বীকৃতি উঠেছে তাঁর হাতে।

স্প্যানিশ-ভাষার সংগীতনির্ভর ছবিটি পরিচালনা করেছেন ফ্রান্সের জ্যাক অঁদিয়ার। অস্কারের মতো এমন অর্জন হাতে নেওয়ার পর অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন এই অভিনেত্রী।

মঞ্চে উঠে আবেগাপ্লুত জোয়ি তাঁর মাকে স্মরণ করেন এবং ‘এমিলিয়া পেরেজ’-এর সব শিল্পী ও কলাকুশলীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি শিল্প জগতে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘আমার দাদি ১৯৬১ সালে এই দেশে এসেছিলেন। আমি গর্বিত একজন অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তান, যারা স্বপ্ন, সম্মানবোধ ও কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা নিয়ে বড় হয়েছেন। আমি ডোমিনিকান বংশোদ্ভূত প্রথম আমেরিকান, যে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করছে। আমি জানি, আমি শেষ ব্যক্তি নই। আমি আশা করি, এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই চরিত্রে আমি গান গাওয়ার ও স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। যদি আমার দাদি আজ বেঁচে থাকতেন, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হতেন।’

তার এই বক্তব্য এমন এক সময়ে দিলেন যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসন নীতিতে কঠোর আগ্রাসন চালাচ্ছে।

চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ একাডেমি পুরস্কার তথা অস্কারের আয়োজন চলছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে হলিউডের ডলবি থিয়েটারে। অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটায়। আয়োজনের প্রথম পুরস্কারটি পেয়েছেন আমেরিকান অভিনেতা কিয়েরান কালকিন। ‘আ রিয়েল পেইন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেতার স্বীকৃতি পেলেন তিনি।

অন্যদিকে, এবার সেরা অ্যানিমেশন ছবি (স্বল্পদৈর্ঘ্য) হিসেবে ‘ইন দ্য শ্যাডো অব সাইপ্রেস’, ফিচার অ্যানিমেশন হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে ‘ফ্লো’। সেরা মেকআপ এবং হেয়ারস্টাইল বিভাগে পুরস্কার জিতেছে গেল বছরের অন্যতম আলোচিত ছবি ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’।

সেরা অ্যাডাপ্ট চিত্রনাট্যর পুরস্কার পেয়েছে আলোচিত ছবি ‘কনক্লেভ’। এছাড়া পল ট্যাজওয়েল ‘উইকেড’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা পোশাক পরিকল্পনাকারী এবং শন বেকার ‘আনোরা’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহজাদপুরে আগুনে নিহত চারজনের মরদেহ ঢামেকে
  • অনিয়মের খোঁজ নেওয়ায় সাংবাদিকের চাকরি খাওয়ার হুমকি বেরোবি কর্মকর্তা
  • ইসরায়েলে ছুরি হামলায় নিহত ১, আহত ৩
  • ভোলায় চুরির অভিযোগে একজনের দুই চোখে গুরুতর জখম, কাটা হলো দুই আঙুল
  • ৭টি মৌলিক হক
  • ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডা: পশ্চিমাদের জেগে ওঠার বার্তা
  • নদীতে ভেসে উঠল আরেকজনের লাশ, নিহত বেড়ে ৫
  • হাতে ভাজা মুড়ি, শাশুড়ির পেশাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অর্চনা
  • অস্কার মঞ্চে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরে কাঁদলেন মার্কিন অভিনেত্রী
  • অস্কার মঞ্চে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরলেন অশ্রুসিক্ত জো