প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন ব্যক্তি এবং নারী ও শিশুদের সুরক্ষা মাথায় রেখে আইন প্রণয়ন জরুরি। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ও মতামত গ্রহণের পাশাপাশি আইনের অপব্যবহার রোধে সংজ্ঞাগুলোর স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। অনুমোদিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা উঠে আসে।

রোববার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি), সাইবার টিনস ফাউন্ডেশন এবং সেফটি নেট এ সভার আয়োজন করে।

এতে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য সুমাইয়া ইসলাম বলেন, অভিবাসী নারী শ্রমিক অনেক সময় মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহারের শিকার হন। দৃষ্টি, বাক্‌প্রতিবন্ধী নারীরা আদালতে বৈষম্যের সম্মুখীন হন। আইনে তাঁদের সুরক্ষার বিষয়টি স্পষ্টভাবে থাকতে হবে।

আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ বলেন, এই অধ্যাদেশের নামটি ভুল। এটা সাইবার সুরক্ষা না, নিরাপত্তা হবে। এই আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

অধ্যাদেশটিতে শিশুদের সুরক্ষার বিষয়ে কিছু নেই উল্লেখ করে আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, নারীদের প্রসঙ্গটিও স্পষ্ট নয়। ব্ল্যাকমেলের বা অশ্লীলতার দায়ে মামলা পর্নোগ্রাফি আইনে নাকি সাইবার আইনে বিচার হবে, তা স্পষ্ট করা জরুরি।

সভায় বিভিন্ন কমিউনিটির নারীরা নিজেদের চ্যালেঞ্জের কথাগুলো তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, সাইবার প্রক্রিয়া, তথ্যের ব্যবহার সহজীকরণের পাশাপাশি সব থানায় একজন সাইবার বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রিয়া আহসান চৌধুরী ব্লাস্টের পক্ষে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের উদ্বেগ ও সুপারিশ তুলে ধরেন। অধ্যাদেশের প্রধান প্রিয়া আহসান চৌধুরী উদ্বেগ হিসেবে বলেন, সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শের অভাব, সংজ্ঞা ও অপরাধের অস্পষ্টতা, বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রকে যুক্ত করে তা কার্যকর আরও জটিল করে তুলবে, বাক্‌স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন, গ্রেপ্তার, তল্লাশি, জব্দ, তদন্ত, বিচারের বিষয়ে অস্পষ্টতা, শাস্তিসংক্রান্ত নির্দেশিকার অভাব। আইনের অপব্যবহার রোধে বিধানগুলো স্পষ্ট করা প্রয়োজন।

আইআইডির প্রধান নির্বাহী পরিচালক সাইদ আহমেদের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন ব্লাস্টের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা মনীষা বিশ্বাস ও লিগ্যাল স্পেশালিস্ট আয়শা আক্তার, অগ্নি ফাউন্ডেশনের সভাপ্রধান এবং মেয়ে নেটওয়ার্কের সংগঠক তৃষিয়া নাশতারান, প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদের সদস্য শারমিন আকতার, দলিত নারী ফোরামের কমিউনিটি মবিলাইজার পূজা রানী, অ্যাকটিভিস্ট ও লেখক ম্যা মো খাইং প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাজউক চেয়ারম্যানসহ চারজনের প্রতি আদালত অবমাননার রুল

আদালতের আদেশ অনুসরণ না করে ‘মিলেনিয়াম সিটি’ প্রকল্পের মাটি ভরাট অব্যাহত রাখায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানসহ চারজনের প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত অবমাননার অভিযোগে করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রুল দেন। অপর তিনজন হলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলা প্রশাসক ও মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

আদালত অবমাননার অভিযোগে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেওয়া হয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফ আলী। তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী এস হাসানুল বান্না।

আদেশের বিষয়ে পরে আইনজীবী এস হাসানুল বান্না প্রথম আলোকে বলেন, মাটি ভরাটসহ মিলেনিয়াম সিটি প্রকল্পের কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব রাজউক চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকার জেলা প্রশাসকের। আদেশ অনুসারে তা প্রতিপালন না হওয়ায় চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনটি করা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত রাজউক চেয়ারম্যানসহ চারজনের প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়েছেন।

এর আগে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত টোটাইল মৌজায় বিদ্যমান টোটাইল খাল, খাল–সংলগ্ন নিচু কৃষিজমি ও জলাশয়ে মাটি ভরাটের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জনস্বার্থে গত বছর একটি রিট করে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২২ জানুয়ারি হাইকোর্ট  টোটাইল খাল, খাল–সংলগ্ন নিচু কৃষিজমি ও জলাশয়ে মাটি ভরাট কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেন। একই সঙ্গে টোটাইল খাল ভরাট করে গড়ে ওঠা মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেডের অননুমোদিত মিলেনিয়াম সিটি প্রকল্পের সব কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।

বেলা জানায়, হাইকোর্টের আদেশে টোটাইল খাল, খাল–সংলগ্ন নিচু কৃষিজমি ও জলাশয়ের বর্তমান অবস্থা তদন্ত, মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেড কর্তৃক মাটি ভরাটের ফলে টোটাইল খালের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে, তা নিরূপণ এবং হাউজিং কোম্পানি কর্তৃক টোটাইল মৌজায় অবস্থিত জলাশয়, বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল ও নিচু কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন প্রতিরোধ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকার জেলা প্রশাসককে আদালতের আদেশ পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

অন্তর্বর্তীকালীন ওই আদেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেড আপিল বিভাগে আবেদন করে। বেলা জানায়, আপিল বিভাগ শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৯ এপ্রিল পক্ষগুলো মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মাটি ভরাটের সব কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। এর ফলে মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেড অননুমোদিত মিলেনিয়াম সিটি প্রকল্পে নতুন করে মাটি ভরাটসহ কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করার সুযোগ নেই। আদালতের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তা লঙ্ঘন করে সম্প্রতি মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেড কর্তৃক অননুমোদিত মিলেনিয়াম সিটি প্রকল্পে মাটি ভরাটসহ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলমান রেখেছে এবং প্লট তৈরি করে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে চটকদার বিজ্ঞাপন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পোস্টার আকারে প্রচার করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদনটি করে।

আরও পড়ুনখাল ভরাট ও মিলেনিয়াম সিটি প্রকল্পের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা২২ জানুয়ারি ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদা না পেয়ে হামলা ও লুটপাট, আহত ১২
  • রাজউক চেয়ারম্যানসহ চারজনের প্রতি আদালত অবমাননার রুল
  • কাঁদতে কাঁদতে কামাল মজুমদার বলেন, ‘আর রাজনীতি করব না, আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি’
  • ‘এমিলিয়া পেরেজ’ নয়, পুরস্কার জিতল ব্রাজিলের সিনেমা
  • জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে খালাসের রায় বহাল
  • ত্বকী হত্যার বিচার শুরু করার দাবিতে ১৫ বিশিষ্টজনের বিবৃতি
  • খালেদা জিয়ার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি সোমবার
  • সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের মরদেহ উদ্ধার
  • কলাবাগানে সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের মরদেহ উদ্ধার
  • লোকমান খালাস, মে মাসে মোহামেডানের নির্বাচন