জুলাই বিপ্লবে ছাত্র হত্যায় জড়িত পাবিপ্রবি কর্মকর্তার শাস্তি দাবি
Published: 12th, January 2025 GMT
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) স্টোর শাখার প্রধান মো. রফিকুল ইসলাম পাবনায় জুলাই বিপ্লবে (৪ আগস্ট) ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানোর ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তারা এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৪ আগস্ট পাবনা শহরে ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণ করেন পাবনা ৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। যেখানে প্রিন্সের পাশে তার সহকারী হিসেবে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-স্কুল বিষয়ক সম্পাদক রিয়াদ হোসেন রাসেল উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি ৪ আগস্টে পাবনা শহরে আওয়ামী নেতা-কর্মীদের গুলি করার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। সেই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করছেন। গুলি করার সময় গোলাম ফারুক প্রিন্সের পিছনে পিছনে পাবিপ্রবি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ আহমেদ রাসেল দৌড়াচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, কিছুদিন আগে আমাদের কাছে ৪ আগস্ট পাবনায় ছাত্র-জনতার উপর গুলির একটা ভিডিও আসে। ভিডিওটি অনেক যাচাই-বাছাই করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ আহমেদ রাসেল দাঁড়িয়ে আছেন। আর পাবনার ৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স শিক্ষার্থীদের মিছিলের উপর গুলি করছেন।
তারা আরো জানান, ৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগ নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ না করলেও কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম একটি দপ্তরের প্রধান হিসেবে স্বপদে বহাল, যা আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের ও সংশয়ের। তারা কাদের শেল্টারে এখনো ক্যাম্পাসে মুক্ত ভাবে চলাফেরা করে আমরা বর্তমান প্রশাসনের কাছে এর জবাব চাই। পাশাপাশি অতিদ্রুত তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমন্বয়ক মিরাজুল ইসলাম মিরাজ বলেন, “জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার একটি ভিডিও ফুটেজে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে দেখা যায়। এই কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করেছি। আশা করি প্রশাসন দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেবে।”
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা ওই কর্মকর্তারা বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার ওইদিন আমি অফিস করে শহরের দিকে যাই। তবে ওই ভিডিও বা ছবির সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন মেনে চাকরি করি। এখানে আমার নামে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা মিথ্যা।”
ঢাকা/আতিক/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি–জামায়াতের বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর নির্বাচনী জোট করা ছাড়া পথ কী
অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সব পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের দমকা হওয়া উঠেছিল। কিন্তু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কারের পালে হঠাৎ করে হাওয়া কমে গেছে বলেই মনে হচ্ছে।
দ্বিদলীয় গণতন্ত্রে এক দল পলাতক হলে অন্য দল যে খোলা মাঠে গোল দিতে নির্বাচন চাইবে, সেটা স্বাভাবিক। অন্যদিকে নির্বাচন গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রাণভোমরা। তাই নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করাতে গণতন্ত্রকামী অন্য দলগুলোও তাদের নির্বাচনী হিসাব মেলাতে বাধ্য হওয়ার কথা। এমনকি নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করা দলও তাদের বৈধতা প্রমাণ করতে নির্বাচনের রাজনীতির দিকেই ঝুঁকবে।
কিন্তু একদলীয় নির্বাচনী ভাগ্যচক্রে অন্য দলগুলো কী পরিণতি আশা করতে পারে?
ভোটের হিসাবে বিএনপির পর দ্বিতীয় শক্তিশালী দল জামায়াত কোনো নির্বাচনেই পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। তাই তাদের পক্ষে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫টি আসন পেতেই হিমশিম খাওয়ার কথা। দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির দলগুলো এক নেতা, এক দল; তাই তারা সম্মিলিতভাবে ১০টির বেশি আসনে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয় না। কিন্তু তাদের আসনে বিএনপি যদি প্রার্থী দেয়? তাহলে বোধ হয় তারা নিজেরাই বিশ্বাস করে না যে তারা ১০ ভাগ ভোট পেতে পারে। জিতে আসা তো অনেক দূর।
বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।ছাত্রদের নতুন দলে হাতে গোনা কয়েকজনের জাতীয় পরিচিতি থাকলেও এলাকার রাজনীতি তাঁরা করেননি। তাই রাষ্ট্রীয় সমর্থনবিহীন নির্বাচনী পাশা খেলায় তাঁরা নিজ নিজ আসনে কতটা কী করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এদিকে বিএনপি বুঝতে পারছে যে একদলীয় নির্বাচনে ২৯০ সিট জিতে আসা তাদের জন্য বিপজ্জনক। বিরোধী দল না রাখার শেখ সাহেবের ’৭৩ সালের ভুল তাদের স্মরণে আছে নিশ্চয়ই। সে জন্য তারা তাদের মিত্রদের কাছে ১০০ সিট ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এই সুযোগে মিত্র দলগুলো এখনই সংসদের সবুজ চেয়ারে বসার স্বপ্নের ডানায় উড়াল দিয়ে ফেলেছে।
এই স্বপ্নের যাত্রায় গণতন্ত্রের পক্ষের যে দলগুলো আওয়ামী জুলুমের সময় রাস্তায় ছিল, তারাও কি বুঝতে পারছে যে একবার বিএনপির আশীর্বাদের চাদরে ঢুকে গেলে তাদের ইনু-মেনন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না? আর ইনু-মেননরা যেহেতু রাস্তার রাজনীতি বিসর্জন দিয়েই যেহেতু সংসদে বসার দাসখত দেন, সামনের বিএনপির সময়েও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো এই কায়দায় রাস্তায় নামতে না পারার ঝুঁকিতে পরতে পারে।
আর রাস্তা ফাঁকা থাকলে মানুষ তো আর বসে থাকবে না। তখন হয়তো তারা তাদের স্বার্থেই আওয়ামী লীগকে ডেকে আনবে!
এমন একই পটভূমিতে ইতিহাস যাতে গুম-খুনের আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার বাঁক নিতে বাধ্য না হয়, সে জন্য বিএনপির বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের নতুন-পুরোনো সব দল মিলে একটা নির্বাচনী জোট গড়ে তোলা ছাড়া কোনো সমাধান নেই।
বাংলাদেশের মানুষের অভিজ্ঞতা বলে যে বিএনপি আসলে আওয়ামী লীগেরই অন্য পিঠ। তাই মানুষের পক্ষের নির্বাচনী জোট সামনে এলে আগামী নির্বাচনে চমক দেখানোর সম্ভাবনা উজ্জ্বল। সেই নির্বাচনে যদি তারা পঞ্চাশের কম আসনও পায়, তারাই হবে প্রধান বিরোধী জোট। সেই সংসদে বিএনপি জোর জুলুম করতে চাইলে হয়ে সংসদে তারা জোরালো কণ্ঠে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে।
বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।
সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মী
[email protected]