মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘নগদে কিছু ব্যত্যয় পাওয়া গেছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নগদকে মেরে ফেলা হচ্ছে না; বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে সেটাকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে, যাতে বিকাশের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে।’

গতকাল রোববার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত ‘ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল ইকোসিস্টেম: ব্রিজিং দ্য গ্যাপস’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ কথা বলেন।

এমসিসিআইয়ের রাজধানীর গুলশানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে বক্তারা বলেন, দেশে ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে স্মার্টফোনের দাম কমানো প্রয়োজন। পাশাপাশি ইন্টারনেটের গতি বাড়ানো জরুরি এবং দেশে ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে যত রকমের ব্যবস্থা আছে, তার সব কটিকে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা দরকার।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এমসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করীম ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সিমিন রহমান এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক বজলুল হক খন্দকার।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে করপোরেট করহার অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে অতীতের সরকারগুলো ক্ষীণ দৃষ্টির পরিচয় দিয়েছে। এত বেশি হারে কর থাকলে শিল্প খাতে বিনিয়োগ কমে যায়। বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।

দেশে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে কিউআর কোড গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই কিউআর কোড ব্যবহারের জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়, তা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বেশি হয়ে যায় বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ক্ষেত্রে যে ইন্টার অপারেটিভিলিটি চালু হওয়ার কথা ছিল, তা একরকম ব্যর্থ হয়েছে। সাবেক সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে এটা হয়েছে।

দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিসের গেটওয়েতে নানা সমস্যা থাকলেও গত এক দশকে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করেন বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল কাদীর। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিকাশ গ্রাহকদের যে ক্ষুদ্রঋণ দিয়েছে, তা অনেকটাই সফল হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৬ লাখ মানুষকে তা দেওয়া হয়েছে। দেখা গেছে, বড় বড় ঋণগ্রহীতার তুলনায় এসব ঋণগ্রহীতার মধ্যে খেলাপি হওয়ার প্রবণতা খুবই কম।

কামাল কাদীর আরও বলেন, ডিজিটাল সেবা যথাযথভাবে দেওয়া গেলে বিদ্যমান অবকাঠামোতে অনেক কিছু করা যায়; ঠিক যেভাবে ইউএসএসডি সেবার মাধ্যমে এমএফএস বা মোবাইলে আর্থিক সেবাকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

অনুষ্ঠানে একটি উপস্থাপনা দেন এমসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট হাবিবুল্লাহ এন করীম ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক বজলুল হক খন্দকার। এতে তাঁরা দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট সেবার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করেন এবং এই খাতের বিভিন্ন সম্ভাবনা ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘বিনিময়’ নামের প্লাটফর্ম ছিল শেখ হাসিনার ছেলের শেল কোম্পানি: গভর্নর

আন্তঃব্যাংক মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) এগোতে না পারার একটা বড় কারণ এটাকে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়া হয়েছিল। আন্তঃব্যাংক এমএফএস পরিচালনার জন্য ‘বিনিময়’ নামে প্লাটফর্ম করা হয়েছিল সেটি ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের শেল কোম্পানি।

আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে এমন তথ্য জানিয়েছেন।

প্রথম আলো আয়োজিত ‘ডিজিটাল লেনদেনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা: পরিপ্রেক্ষিত ভ্যাট বৃদ্ধি’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে। আলোচনায় অংশ নেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খিন চৌধুরী, প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান তানজিল এ চৌধুরী, সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিনসহ অনেকে।

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা কর হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর অনুরোধ জানান। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আগামী বাজেটে একটা বড় পরিবর্তন দেখবেন। তবে এজন্য ব্যবসায়ীদের স্বচ্ছতার ওপর জোর দিতে হবে। যার যে কর আসে সেটা দিতে হবে।

গভর্নর বলেন, আমাদের কর ব্যবস্থাপনার পূর্ণ অনলাইন প্রয়োজন, ভ্যাট- ট্যাক্স দেওয়ার ক্ষেত্রে পূর্ণ অনলাইন না হলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি বন্ধ হবে না। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরই থেকে ট্যাক্স ফাইল জমা দিতে গিয়ে একটি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিল। আমাদের ম্যানেজারকে ডেকে নিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করছিল। তা না দেওয়ায় পরে ৫ কোটি টাকা কে বসিয়ে দিয়ে পরে বদলি হয়ে গেছে। এরকম হলে কি করবে বলেন।

তিনি আরও বলেন, একটি পণ্য আমদানি থেকে উৎপাদন ও বিক্রি পর্যন্ত ১০% এর ওপরে ভ্যাট হওয়া উচিত না। আমি মনে করি বর্তমানে যে ১৫% পর্যন্ত ভ্যাট দিতে হচ্ছে তা সকালের জন্য কঠিন হবে। তিনি বলেন, ইমিডিয়েটলি রাজস্ব খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন হবে না। এখানে অনেক ধরনের সংস্কার দরকার রয়েছে। যা করতে ৩-৪ বছর লাগবে। বর্তমান সরকার হয়তো এই সময়টা পাবে না, তবে আমরা শুরু করব। 

গভর্নর বলেন, ‘অনেকে মূল্যস্ফীতি এর ক্ষেত্রে পলিসি কাজ করছে না’ এমন মন্তব্য করছেন, আমি বলব পলিসি ইজ ওয়ার্কিং একটু কন্ট্রোল ইনফ্লেশন। উন্নতশীল দেশগুলোতেও পদক্ষেপ নেওয়ার পর ১০ থেকে ১২ মাস সময় প্রয়োজন হয়।  আমরা আশা করছি আগামী জুনের মধ্যে ভালো একটা সুফল পাব।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে এখন যে ডিপোজিট গ্রোথ রয়েছে তা খুবই কম। আমি মনে করি আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরের ন্যূনতম ১৪ থেকে ১৬% পর্যন্ত ডিপোজিট গ্রোথ হওয়া দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বিনিময়’ নামের প্ল্যাটফর্ম ছিল শেখ হাসিনার ছেলের শেল কোম্পানি: গভর্নর
  • ‘বিনিময়’ নামের প্লাটফর্ম ছিল শেখ হাসিনার ছেলের শেল কোম্পানি: গভর্নর