শিল্প কারখানায় নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিকে আত্মঘাতী হিসেবে দেখছে ইন্ডাষ্ট্রি এক্সিকিউটিভ ফোরাম (আইইএফ)। এ পরিকল্পনা বাতিল করা এবং চলমান গ্যাস সংকট নিরসন করে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। শনিবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়। 

আইইএফ হচ্ছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন নির্বাহীদের প্ল্যাটফর্ম। আজই এ ফোরামের আত্মপ্রকাশ হয়। শিল্প ও শ্রমিক কর্মকর্তাদের স্বার্থে কাজ করবে এ ফোরাম। বস্ত্র ও পোশাক, সিরামিক খাতসহ বৃহৎ অন্যান্য শিল্প খাতের প্রতিনিধিরা রয়েছেন এ ফোরামে। 

‘শিল্পোৎপাদন, সাশ্রয়ী জ্বালানি, কর্মসংস্থান ও টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক মত বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন যমুনা গ্রুপের হুরাইন হাইটেক ফেব্রিকের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মো.

আব্দুল হাকিম, মিথিলা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মো. সাজেদুর রহমান তালুকদার, প্যারাগন সিরামিকসের সিনিয়র জিএম মোসাহেব কাক্কা ও জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্সের নির্বাহী পরিচালক (বিপণন) মো. শফিকুর রহমান। আইইএফ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এস এইচ ফাহিম সভা সঞ্চালনা করেন। 

বর্তমানে শিল্প কারখানার বড় সংকট হিসেবে গ্যাস পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন বক্তারা। তারা বলেন, ২০১৯ সাল থেকে দ্রুত এবং ঘনঘন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় ২০২২ এর জুনে ১৫ দশমিক ৫২ শতাংশ, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৮৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, ২০২৪ এর ফেব্রুয়ারিতে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং মে মাসে ২ দশমিক ৪৪  বাড়ানো হয়। সে সময়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের প্রতিশ্রুতি, শিল্পের প্রতিষ্ঠানের চাহিদা, পণ্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের বাধ্যবাধকতা এবং সর্বোপরি অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে শিল্প মালিকেরা মূল্যবৃদ্ধি মেনে নেন। যদিও এ কারণে উৎপাদনের ব্যয় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশের অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়েছে। কিছু কারখানা বন্ধের পথে রয়েছে। 

সভায় গ্যাস সমস্যা সমাধানে আইইএফ বেশকিছু  প্রস্তাবনা সরকারের বিবেচনার জন্য তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- গ্যাস বিক্রি করে মুনাফার চেষ্টা না করা, এলএনজি আমদানি থেকে শুল্ক-কর প্রত্যাহার। দ্রুততম সময়ে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করে মজুত সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি পর্যালোচনা করা ও গ্যাসরে ওপর চাপ কমাতে শিল্পে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করা।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার কাতার সফরে গুরুত্ব পাবে কী কী

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন–২০২৫’–এ যোগ দিতে আজ সোমবার কাতার যাচ্ছেন। চার দিনের এ সফরের সময় তিনি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল–থানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। যেখানে ব্যবসা ও জ্বালানি সহযোগিতার পাশাপাশি ভিসা উন্মুক্ত করা এবং জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পেতে পারে।

দোহা থেকে কূটনৈতিক একটি সূত্র এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, ২৩ বা ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ও কাতারের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠক আয়োজনের প্রস্ততি চলছে।

আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে কাতার থেকে এলএনজি সরবরাহের যে সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে, তা এগিয়ে নিতে অনুরোধ জানানো হতে পারে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য পর্যটনসহ নানা খাতে ভিসা চালু করা এবং ব্যবসা, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা খাতে সহায়তার বিষয়গুলো আসতে পারে।কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদারকে উদ্ধৃত করে বাসস জানায়, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির আমন্ত্রণে এ সফরে যাচ্ছেন। প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের চারজন জাতীয় নারী ক্রীড়াবিদ প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে কাতারে যাচ্ছেন। এই চার ক্রীড়াবিদ হলেন ফুটবলার আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আখতার রিপা এবং ক্রিকেটার সুমাইয়া আখতার ও শারমিন সুলতানা।

ওই সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হলে কাতারের আমির সংযুক্তি, পর্যটনসহ নানা খাতে বিনিয়োগ ও ব্যবসার সম্ভাবনা খুঁজতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫

আর্থনার ওয়েবসাইটে প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী, দোহায় ২২ ও ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় এবারের আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’। কাতার ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আর্থনা সেন্টার ফর আ সাসটেইনেবল ফিউচার এই শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক। দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত এই শীর্ষ সম্মেলনে কাতারের উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে দেশটির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও অনন্য প্রতিবেশগত বৈচিত্র্যকে কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হবে। শীর্ষ সম্মেলন আলোচনার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করবে, যেখানে প্রথাগত জ্ঞান ও আধুনিক উদ্ভাবনের সমন্বয়ের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের নতুন দিক উন্মোচন এবং এক সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গঠনের উপায়গুলো উঠে আসবে। এই শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করবেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

এই চার ক্রীড়াবিদ হলেন ফুটবলার আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আখতার রিপা এবং ক্রিকেটার সুমাইয়া আখতার ও শারমিন সুলতানা।দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের অগ্রাধিকার

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, দোহায় ২৩ বা ২৪ এপ্রিল অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির বৈঠক হতে পারে। ওই বৈঠকে গত বছরের এপ্রিলে কাতারের আমিরের ঢাকা সফরের সময় নেওয়া সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা হবে। এর পাশাপাশি ব্যবসা, বিনিয়োগ, জ্বালানি, বিশেষত এলএনজি রপ্তানি, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা চালু করা এবং প্রতিরক্ষা খাতে সহায়তার মতো বিষয়গুলো আলোচনায় আসতে পারে।

২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিল দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি। ওই সময়কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার পর দুই দেশ পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই করেছিল। ওই চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়বস্তুগুলো ছিল ব্যবসা, বাণিজ্য, সংযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা। ওই সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হলে কাতারের আমির সংযুক্তি, পর্যটনসহ নানা খাতে বিনিয়োগ ও ব্যবসার সম্ভাবনা খুঁজতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।

কাতার থেকে প্রতিবছর ১৫ লাখ মেট্রিক টন এলএনজি আমদানির জন্য ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পেট্রোবাংলা ও কাতার গ্যাসের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে নতুন এ চুক্তি কার্যকর হবে।

বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের অন্যতম উৎস কাতার। কাতার এখন যে এলএনজি বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করে, সেগুলো জাহাজে করে বন্দরে বহির্নোঙরে এনে সরবরাহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এলএনজি সরবরাহের জন্য তাদের টার্মিনাল তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে সমুদ্রবন্দর অবকাঠামো কাজে লাগিয়ে কাতার এলএনজি সরবরাহব্যবস্থায় যুক্ত হতে আগ্রহ দেখিয়েছে। কাতার থেকে প্রতিবছর ১৫ লাখ মেট্রিক টন এলএনজি আমদানির জন্য ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পেট্রোবাংলা ও কাতার গ্যাসের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে নতুন এ চুক্তি কার্যকর হবে।

জানতে চাইলে কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কাতারের আমিরের বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। পরিকল্পিত ওই বৈঠকে ২০২৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা করা হবে। এর পাশাপাশি আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে কাতার থেকে এলএনজি সরবরাহের যে সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে, তা এগিয়ে নিতে অনুরোধ জানানো হতে পারে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য পর্যটনসহ নানা খাতে ভিসা চালু করা এবং ব্যবসা, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা খাতে সহায়তার বিষয়গুলো আসতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এলএনজি সরবরাহের জন্য সমঝোতা স্মারক নবায়নের প্রতিশ্রুতি কাতারের
  • টিসিবির জন্য দুই কোটি ২০ লাখ লিটার পাম অয়েল কিনবে সরকার
  • আরও এক কার্গো এলএনজি কেনা হচ্ছে, দাম প্রতি ইউনিট সাড়ে ১২ ডলার
  • জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দুই প্রস্তাব অনুমোদন, ব্যয় ৫৯৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা
  • কাতারের সঙ্গে শ্রমবাজার ও ভিসা ইস্যুতে আলোচনা হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • গ্যাসে ৭৫ কোটি ডলারের বকেয়া কমে এখন ২৪ কোটি ডলার
  • প্রধান উপদেষ্টার কাতার সফরে গুরুত্ব পাবে কী কী