শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনশনে জবি উপাচার্য, ১২ জন অসুস্থ
Published: 12th, January 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে গণ অনশনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে অনশনে বসেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড.রেজাউল করিম। পরে অনশন ভাঙার কথা বললে উপাচার্যকে ফেরত পাঠিয়ে দাবি আদায়ে অটল রয়েছেন তারা।
এদিকে, অনশন চলাকালে ১২ জন শিক্ষার্থীর অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে অনশনে বসেন উপাচার্য। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.
এর আগে, সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে তিন দফা দাবিতে অনশন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবিগুলো হলো- সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের চুক্তি অনতিবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে; পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের স্টিল বেইজড ভবনের কাজ দ্রুত শুরু এবং শেষ করতে হবে; আবাসন ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ৭০% শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে জবি গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি কেএম রাকিব বলেন, “আমরা তিন দাবিতে গণ অনশনে বসেছি। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের জন্য যে বড় একটা আন্দোলন হলো এবং সেখানে মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করতে পারে। কিন্তু আমরা প্রশাসনের এ ব্যাপারে কাজের কোনো অগ্রগতি দেখতে পায়নি। তাই আমরা গণ অনশন কর্মসুচি ঘোষণা করেছি।”
অনশনে বসে উপাচার্য অধ্যাপক ড.রেজাউল করিম বলেন, “তোমরা যে দাবি-দাওয়া করছো, সে দাবি আমারো। তার ব্যাপারে আজ মন্ত্রণালয়ে চিঠি গেছে। আমরা আজ সারাদিন তোমাদের খোঁজ রাখছি। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমরা আমাদের এ আন্দোলনের ফলাফল পাব। আমরা দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কথা দিচ্ছি, আমরা তোমাদের দাবি অনুযায়ী কাজ করব। ছাত্র প্রতিনিধি নিয়ে আমরা একটা কমিটি গঠন করে সকল বিষয় জানাব এবং সিদ্ধান্ত নিব।
এদিকে, তিন দফা দাবিতে সকাল থেকে চলমান অনশনে বসা এখন পর্যন্ত ১২ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন।
তারা হলেন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান তানজিল, দর্শন বিভাগের ১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী তাওহীদুল ইসলাম, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ১৫ ব্যাচের ফয়সাল মুরাদ, ১৩ ব্যাচের উদ্ভিদবিজ্ঞানের বিভাগ একেএম রাকিব, ১৮ ব্যাচের ইসলামি আন্দোলনের আশিকুর রহমানসহ আরো সাত জন।
জানা গেছে, রাত ৯টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তানজিল। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন তাওহীদুল ইসলাম ও ফয়সাল মুরাদ। ধারাবাহিকভাবে ধীরে ধীরে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের আম্বুলেন্সে করে বিভিন্ন মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র অফিসার মো. রাকিব হোসেন বলেন, “তানজিলের ব্লাড প্রেসার কমে গিয়েছে। দুপুরের পর থেকে প্রস্রাবও হয়নি। অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে। এ মুহূর্তে তার প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে।”
মেডিকেল অফিসার রাকিব আরও বলেন, “তাওহীদের ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেছে, আপাতত এখন স্যালাইন দেব না। আর ফয়সালের চোখ ঢেবে গিয়েছে, স্যালাইন দিতে হবে।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে অনশনে কারিগরি শিক্ষার্থীরা
দাবি আদায়ে অনশন শুরু করেছেন চট্টগ্রামের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁরা অনশন শুরুর ঘোষণা দেন। এর আগে নগরের বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।
সকাল থেকেই দাবি আদায়ে নগরের সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কিছু শিক্ষার্থী নগরের ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে যান। সেখানে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও। তাঁরা নিজেদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। একপর্যায়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি দাবি করা ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতি কোটা বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া রয়েছে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত করা, ২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করার দাবি।
গত বুধবার থেকে এসব দাবিতে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। এদিকে গতকাল রোববার জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতি–সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. রেজাউল এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আবেদনটি আগামী ১৮ মে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি করতে বলা হয়েছে।
তবে এতে সন্তুষ্ট নন আন্দোলনরত পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা রায় ও এ–সংক্রান্ত মামলা পুরোপুরি বাতিল চান। তাঁদের দাবি, রায় স্থগিত নয়, বাতিল করতে হবে। এসব দাবিতে তাঁরা সড়ক অবরোধ করে অনশন করছেন।
বেলা তিনটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বসে স্লোগান দিচ্ছেন অর্ধশতাধিক কারিগরি শিক্ষার্থী। এ সময় সড়কের এক পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিকল্প পথ থাকায় সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়নি। কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি তৌকির আহমেদ বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষার মান বাড়তে আট মাস ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের দাবিগুলো যৌক্তিক, তাহলে কেন এগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না? ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয়, মাত্র ৬৫০টি আসন। যতক্ষণ আমাদের দাবি আদায় হচ্ছে না, আমরা অনশনে থাকব।’