সখীপুরে ৭৫ বছর ধরে হয়ে আসা ‘ফাইলা পাগলার মেলা’ এবার বন্ধ করল প্রশাসন
Published: 12th, January 2025 GMT
টাঙ্গাইলের সখীপুরে ৭৫ বছর ধরে চলা ‘ফাইলা পাগলার মেলা’ বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। আজ রোববার বিকেল চারটায় উপজেলার দাড়িয়াপুরে অবস্থিত ফাইলা পাগলার মাজারে যৌথ বাহিনীর অভিযান চালিয়ে মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে আগামী তিন দিন শুধু দিনের বেলা মেলার দোকানপাট খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন।
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দাড়িয়াপুরে দিন দশেক আগে মাসব্যাপী ফাইলা পাগলার মেলা শুরু হয়। রোববার বিকেলে মেলায় যৌথ বাহিনী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় ব্যবসায়ী ও আগত দর্শনার্থীদের মেলাস্থল ত্যাগ করতে ১৫ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। পরে দোকানপাট সরিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের দুই ঘণ্টা সময় দেয় যৌথ বাহিনী। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল রনি।
জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী ফাইলা পাগলার মেলা প্রায় ৭৫ বছর ধরে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। হিজরি রজব মাসের প্রথম দিন থেকে মেলা শুরু হয়ে মাসব্যাপী চলে এর কার্যক্রম। পূর্ণিমার রাতে হয় বড় মেলা। তবে মানতকারী ভক্ত–দর্শনার্থীদের আনাগোনা থাকে সারা মাস। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার লোকজন মানত করা মোরগ, খাসি, গরু নিয়ে এসে লালমাটির পাহাড়ি অঞ্চল দাড়িয়াপুরকে এক মিলনকেন্দ্রে পরিণত করে। মাজারের চারপাশের প্রায় এক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লোকজন মোরগ, গরু-খাসি জবাই করে মানত পূরণ করে।
আরও পড়ুনসখীপুরে ফাইলা পাগলার মেলা চলছে১১ জানুয়ারি ২০১৭তবে অভিযোগ রয়েছে, মাজার ঘেঁষেই পাগল ভক্তদের বসার আস্তানা। সেখানে প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন করা হয়। এই সুযোগে দূরদূরান্ত থেকে আসা যুবকেরা অনেকটা প্রকাশ্যেই মাদক গ্রহণ করেন। এ ছাড়া মেলাকে কেন্দ্র করে অশ্লীল নৃত্য, জুয়ার আসরের আয়োজন করা হয় বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল রনি প্রথম আলোকে বলেন, মেলার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ ছিল। অভিযানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছেন। এ কারণে মেলাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলার দারিয়াপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মেলা বন্ধ করে দেওয়ায় ভক্ত ও ব্যবসায়ীরা খুবই দুঃখ পেয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে মাদক ও জুয়া বন্ধ করার শর্তে শুধু দিনের বেলায় আগামী তিন দিন মেলা চলার অনুমতি আনা হয়েছে।
আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি রাত নয়টায় এ মেলায় জেএমবি বোমা বিস্ফোরণ ঘটালে মাজারের খাদেম আবদুল গণিসহ আটজন নিহত ও ১৫ জন আহত হন। ওই সময় কয়েক বছর মেলায় লোকসমাগম কম ঘটলেও পরে মেলায় আগের পরিবেশ ফিরে আসে।
আরও পড়ুনফাইলা পাগলার মেলায় বোমা হামলার ১৩ বছর১৯ জানুয়ারি ২০১৬.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রূপগঞ্জে আড়ত দখল নিয়ে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৬
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি পাইকারি আড়তের দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংঘর্ষ চলাকালে ১১টি যানবাহন অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার সাওঘাট এলাকায় সংঘর্ষ হয়। আহতদের ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) মো. মেহেদী ইসলাম বলেন, “দুই পক্ষের সংঘর্ষে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে শুনেছি। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
আরো পড়ুন:
সাতক্ষীরায় বিএনপির ২ পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ১৪৪ ধারা জারি
৫ আগস্টের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কথা স্বীকার আদিলুরের
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, সাওঘাট এলাকায় বিসমিল্লাহ আড়তের দখল নিয়ে সেলিম প্রধান ও মজিবুরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কয়েকদিন আগে দুই পক্ষের লোকজনকে ডেকে আড়ত থেকে টাকা তুলতে নিষেধ করেন।
আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মজিবুরের লোকজন সেলিম প্রধানের অফিসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় সেলিমের লোকজন তাদের লক্ষ্য করে ইট, ককটেল ও গুলিবর্ষণ করে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে স্বপন, রাজু, আলামিন, বাবু, রফিক ও সাগর নামে ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সময় সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুরসহ ১০টি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেটকার আগুনে পুড়িয়ে দেয় প্রতিপক্ষের লোকজন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে ১১টি গুলির খোসা ও একটি তাজা ককটেলসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, “সংঘর্ষের খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।”
ঢাকা/অনিক/মাসুদ