এখনো ন্যূনতম মজুরির বাইরে ১০০ খাত-উপখাত
Published: 12th, January 2025 GMT
দেশের মোট শ্রমিকশ্রেণির ৮৫ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। তাঁদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়নি। আর দেশের শ্রমিকেরা সব মিলিয়ে ১৪২টি খাত ও উপখাতে কাজ করেন। এর মধ্যে পোশাক ও ট্যানারিসহ মাত্র ৪২টিতে ন্যূনতম মজুরির ঘোষণা আছে। অন্যদিকে হালকা প্রকৌশল, স্টিল রি রোলিং ও শিপ ব্রেকিংসহ ১০০ খাত–উপখাতে এখনো কোনো ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। সেসব খাতের শ্রমিকের জন্য কোনো আইনি সুরক্ষাও নেই।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজিত ‘শ্রমিকের জীবনমান, কর্মপরিবেশ ও অধিকারসংক্রান্ত সংস্কার উদ্যোগ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আজ রোববার এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) মহাসচিব ফারুক আহমেদ, বাংলাদেশ পোশাকশ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আক্তার। সভায় সূচনা ও সমাপনী বক্তব্য দেন ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন; প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তামিম আহমেদ।
শ্রমিকশ্রেণির জীবনমান, কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের অধিকারবিষয়ক স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করা হয় প্রবন্ধে। এসব সুপারিশ হলো আইনগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও পরিচালনগত; যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের।
দেশে শিশুশ্রমের পাশাপাশি জোর করে কাজ করানো (ফোর্সড লেবার) হয় বলেও প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়। এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন এমসিসিআইর সভাপতি কামরান টি রহমান। তিনি বলেন, দেশ থেকে দক্ষ শ্রমিকের বদলে অদক্ষ শ্রমিক বিদেশে বেশি যান। এ জন্যই প্রবাসী আয় কম আসে। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু অধিকারের কথা বলি, দায়িত্বের কথা বলি না। কারখানা লাভ করতে না পারলে বন্ধ হয়ে যাবে। তখন বেকারত্ব বাড়বে।’
সভায় বক্তারা শ্রম খাতের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার দাবি জানান। এ বিষয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এখনই তা করলে সমস্যা হতে পারে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ জানান, দেশে মোট শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে আট কোটি। আগে যেমন দাসত্ব ছিল, এখনো তা আছে। তবে এখন আছে নতুন ধরনের দাসত্ব। শ্রম সংস্কার কমিশনের কাছে তাঁদের প্রত্যাশা অনেক। এ প্রত্যাশার চাপ ও ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় সময়ের চাপে আছে কমিশন। তা ছাড়া এ খাতে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত নেই।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে হকার, গৃহশ্রমিক ও দিনমজুরের জন্য সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। শ্রম খাতের সবাইকে নিয়ে সমন্বিত সুপারিশ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য মজুরির মানদণ্ড, সামাজিক সুরক্ষা ও সাংগঠনিক অধিকার থাকা জরুরি। তাহলে গতিশীল অর্থনীতিতে ন্যায্য হিস্যা প্রতিষ্ঠিত হবে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, পোশাক খাতের পরই বড় হচ্ছে নির্মাণ খাত। অথচ এ খাতে সরাসরি শ্রমিক দেখা যায় না। শ্রমিকদের নিয়োগ দেন ঠিকাদারেরা, যাঁদের সরাসরি দেখা যায় না। শ্রমিকের অধিকার নিয়ে তাহলে কীভাবে কাজ হবে? তাঁর প্রশ্ন, ‘শ্রমিককে কেন মজুরি ও অধিকার পেতে রাস্তায় নামতে হবে? গণমাধ্যমকর্মীদের কেন মানবাধিকার থাকবে না?’ তিনি মনে করেন, সুপারিশ প্রণয়নই শেষ কাজ নয়, সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মাঠেও থাকতে হবে।
প্রবাসী শ্রমিকের কথা তুলে ধরে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, প্রবাসীদের অভিযোগ, তাঁদের টাকায় ব্যালট ছাপানো হয়, অথচ তাঁরা ভোট দিতে পারেন না।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার পরও যাতে কমিশনের কার্যক্রম কিছুদিন অব্যাহত থাকে, সেটা আমাদের অনুরোধ। সুপারিশ বাস্তবায়নে তাঁদের নজরদারিটা কিছুদিন যেন থাকে। যদি শ্রম–সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগওয়ারি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সেল গঠন করা যায়, তাহলে বড় কাজ হবে।’
গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, আগামী এক বছরকে ‘শ্রমকল্যাণ বছর’ ঘোষণা করে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বিন্যস্ত করলে অন্তর্বর্তীকালীন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন সহজ হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে উদ্যোক্তারা সব সুপারিশ বাস্তবায়নে এখনই প্রস্তুত রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা প্রস্তুত থাকতে পারেন। কিন্তু অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের উদ্যোক্তারা প্রস্তুত নন।’
শ্রম খাতের জন্য জীবন, জীবিকা ও জবানের অধিকারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন পোশাকশ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আক্তার। বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে শ্রমশক্তির গুরুত্ব ও শ্রমশক্তির মর্যাদা সামনে রেখে কাজ করতে হবে। অনেকেই শ্রমিকদের কাজকে ছোট কাজ মনে করেন। যেমন ঘরে–বাইরে শ্রমিকদের ‘তুই’ বলে সম্বোধন করা হয়, যা অপমানকর।
শ্রম আদালত থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত আইনের বাংলা ভাষা ব্যবহার করার প্রতি জোর দেন তাসলিমা আক্তার, যাতে শ্রমিকদের বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, শ্রমিকের অধিকার নিয়ে শিল্প পুলিশকে ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না। শ্রম অসন্তোষ দূর করাই যেন তাঁদের অন্যতম কাজ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চেয়েছিলাম এখনই সংলাপটা শুরু করবো, পারি নাই
‘আমরা চেয়েছিলাম যে এখনই আমরা সংলাপটা শুরু করবো, পারি নাই। সংলাপ শুরু হতে হতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে। যেগুলো আমরা সময়মতো করতে চেয়েছি, ওই সময়ে করতে পারিনি।’- এ কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় সাত মাসে সংলাপ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সংস্কার ও নির্বাচন, ছাত্র নেতৃত্বের নতুন দল গঠনসহ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন ড. ইউনূস। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেছেন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতির প্রশ্নেও।
প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির। সমকাল পাঠকদের জন্য ঈষৎ সংক্ষেপ করে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
বিবিসি বাংলা: সর্বশেষ যখন আপনার সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিলো ঠিক এক বছর আগে, এরমধ্যে একটা বিশাল পরিবর্তন হয়ে গেছে বাংলাদেশে। আপনি তখন একটা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ছিলেন, আপনি বলছিলেন, গ্রেপ্তার আতঙ্কের কথা। সেখান থেকে আপনি প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন, যার ছয় মাস পার হয়ে গেছে। এই ছয় মাসকে আপনি কীভাবে দেখেন? আপনি যা করতে চেয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে, তাতে কতটা সফল হয়েছেন?
প্রধান উপদেষ্টা: প্রথমেই একটা সংশোধনী বলি, প্রেপ্তার আতঙ্ক– আমার কাছে কোনো আতঙ্ক ছিল না। একটা সম্ভাবনা ছিল যে আমাকে নিয়ে যাবে। ‘আই ওয়াজ টেকিং ইট ইজি’- যে নিলে নেবে, আমারতো করার কিছু নাই। যেহেতু আইন-কানুন নাই দেশে, কাজেই তারা যা ইচ্ছা তা করতে পারে। ওরমধ্যে দিয়ে জীবন চলছিলো আমার। সরকার যখন গঠন হলো, আমার কোনো চিন্তা ছিল না, ভাবনা ছিল না যে আমি হঠাৎ করে একটা সরকারের প্রধান হবো, দায়িত্ব পাবো। এবং সেই দেশ এমন দেশ, যেখানে সব তছনছ হয়ে গেছে। কোনো জিনিস আর ঠিকমতো কাজ করছে না। যা কিছু আছে ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হবে।
কাজেই আমার প্রথম চেষ্টা ছিল সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে আসল চেহারাটা বের করে আনা। মানুষের দৈনন্দিন জীবন সহজ করে আনা। সেই চেষ্টাটার মধ্যে ছিলাম। তারপর আস্তে আস্তে ভবিষ্যতটা কী হবে, সেটার জন্য চিন্তা করা– কোনদিকে আমরা অগ্রসর হবো।
প্রথম চিন্তা আসলো যে একটা সংস্কার দরকার আমাদের। কারণ, যে কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে, ফ্যাসিবাদী সরকার চলতে পেরেছে। ১৬ বছর ধরে চলতে পেরেছে, আমরা কিছুই করতে পারি নাই। তিন-তিনটা নির্বাচন হয়ে গেলো, ভোটারের কোনো দেখা নাই। এই যে অসংখ্য রকমের দুর্নীতি এবং ব্যর্থতা, ‘মিসরুল’ ইত্যাদি– সেখান থেকে আমরা কীভাবে টেনে বের করে আনবো। টেনে বের করে আনতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলো করতে হবে। সেজন্য প্রথমে আমরা ঠিক করলাম...
বিবিসি বাংলা: কতটা টেনে বের করে আনতে পেরেছেন বলে মনে হয় আপনার কাছে?
প্রধান উপদেষ্টা: সংস্কারের বিষয়ে? সংস্কারতো এখনও শুরু করিনি...
বিবিসি বাংলা: না, যে বিষয়ে আপনি বলছিলেন যে যখন প্রধান উপদেষ্টা হলাম তখন এক ধরনের পরিস্থিতি ছিল...
প্রধান উপদেষ্টা: অনেক পরিবর্তন...
বিবিসি বাংলা: কতটা পরিবর্তন? আপনার চোখে কী মনে হয়?
প্রধান উপদেষ্টা: বহু পরিবর্তন। এটা আমি বলবো, যে ধ্বংসাবশেষ থেকে এসেছিলাম, তার নতুন চেহারা আসছে। ভেসে উঠছে যে, আমরা অর্থনীতি সহজ করেছি। দেশ-বিদেশের আস্থা অর্জন করেছি। এটাতো পরিষ্কার- সারা দুনিয়ায় আমরা আস্থা স্থাপন করতে পেরেছি। এটা কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না যে আমি অমুক দেশের আস্থা অর্জন করতে পারিনি। যে দেশেই বলুন, তারা আমাদের উপর আস্থা স্থাপন করেছে। শুধু আস্থা স্থাপন করেছে না, বিপুলভাবে করেছে। তারা বলছে আমরা অতীতে যা করি নাই তারচেয়ে বেশি করবো এখন, যেহেতু আমরা দেখছি যে সুন্দরভাবে সরকার চলছে এখন। সেইজন্য তারা বলছে। কাজেই এটা একটাতো বড় প্রমাণ। যখনই আপনি দেশের সারিগুলা দেখবেন- প্রত্যেকটা দেশ নিজে এসে বলেছে, আমরা তোমাদের সমর্থন করছি। তোমাদের যা দরকার আমরা দেবো। অবিশ্বাস্য রকমের সহায়তা দিয়েছে তারা।
বিবিসি বাংলা: বিদেশে আপনি আস্থা এবং সমর্থনের কথা বলছেন। আমি যদি দেশের প্রসঙ্গে, আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে আসি। আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে কিন্তু অনেক সমালোচনা হচ্ছে। এবং আমি যদি পুলিশের এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান দেখি, অপরাধ কিন্তু বেশ কিছুটা বেড়েছে। তো এটা আপনারা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না?
প্রধান উপদেষ্টা: আস্থার কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, আস্থার কথাতেই ফিরে যাই, দেশ-বিদেশের আস্থা। দেশের মানুষের আস্থা আছে কিনা আমাদের ওপর এটাইতো বড় কথা।
আমার মনে হয়, দেশের মানুষের আস্থা আমাদের ওপর আছে। বিপুল পরিমাণে আছে। কাজেই সেটা হলো বড় প্রমাণ। আমরা কী করছি না করছি- এগুলো খুচরো বিষয় আছে। আমাদের খুচরো বিষয় এটাতে ভালো, ওটাতে মন্দ- কিছু ভালো, কিছু মন্দ, হতে থাকবে। এটা একটা অপরিচিত জগৎ, আমরা এসেছি। আমরা কোনো এক্সপার্ট এখানে এসে বসি নাই। আমরা এসেছি যার যার জগৎ থেকে এসেছি, নিজের মতো করে চেষ্টা করছি; কীভাবে করতে পারি। তারমধ্যে ভুলভ্রান্তি হতে পারে। কিছু ভালো করেছে, কিছু ভালো করতে পারেনি। এটা হতে পারে। এটা আমিতো অস্বীকার করছি না।
বিবিসি বাংলা: ভালো হয়নি কোনটা আপনার চোখে?
প্রধান উপদেষ্টা: কোনোটাই ভালো হয়নি সে অর্থে। যত ইচ্ছা আমাদের–আমাদের ইচ্ছাতো অনেক। রাতারাতি দেশ পরিবর্তন করতে চাই। সেটাতো আমরা পারি নাই। সময় লাগবে।
আমরা চেয়েছিলাম যে এখনই আমরা সংলাপটা শুরু করবো। এটাও পারি নাই। সংলাপ শুরু হতে হতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে। এগুলা আর কি। যেগুলো সময়মতো আমরা করতে চেয়েছি, ওই সময়ে করতে পারিনি।
আমরা অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছি। আমাদেরকে ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনের রিপোর্ট দেওয়ার কথা। তারা দিতে পারে নাই। আমি অভিযোগ করছি না। কারণ বিশাল একটা কাজ। আরেকটু সময় চেয়েছে- এক মাস, দুই মাস। ওইটুকু একটু পিছিয়ে গেছে। এগুলো আর কী। কাজ করতে গেলে যা হয়।
‘অপরাধের পরিমাণ মোটেই বাড়েনি’
বিবিসি বাংলা: সংস্কারের কথা বলছিলেন, আমরা যদি আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে ফিরে আসি, পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছে, অনেকেই বলছেন যে তারা নানা রকম ভয়ে আছেন, আতঙ্কে আছেন – যেহেতু অপরাধটা তারা দেখছেন, রাস্তাঘাটে যেটা হচ্ছে। এটা আপনারা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না?
প্রধান উপদেষ্টা: অবনতিটা কোন পয়েন্ট থেকে হয়েছে? এটা বলতে হবেতো আমাকে। আপনি বলছেন অবনতি হয়েছে। কোন রেফারেন্স পয়েন্ট থেকে অবনতিটা হয়েছে? সেটা না দিলেতো আমরা বুঝতে পারবো না।
বিবিসি বাংলা: আমি যদি সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের কথা বলি, গত বছর এই সময় থেকে অপরাধের পরিমাণ রাস্তাঘাটে যেমন...
প্রধান উপদেষ্টা: আমিতো হিসাব নিচ্ছি। অপরাধের পরিমাণ মোটেই বাড়েনি। আগের মতোই হয়েছে।
বিবিসি বাংলা: আমি যদি একটা পরিসংখ্যান আপনাকে দেই, গত ছয় মাসে ...
প্রধান উপদেষ্টা: একটা দিয়েতো আর বিচার হবে না; সমস্ত কিছু নিয়ে আসতে হবে।
বিবিসি বাংলা: ছয় মাসে ডাকাতির সংখ্যা ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এটা পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী। সেটা আমি বলছি। হয়তো পরিসংখ্যান বিভিন্ন হতে পারে, কিন্তু এটা আছে এবং হচ্ছে সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে?
প্রধান উপদেষ্টা: চেষ্টা করছি আমরা। সমস্যা আপনিও জানেন, আমিও জানি। প্রথম দিকে সমস্যা ছিল যে পুলিশ বাহিনী যাকে দিয়ে আমরা কাজ করাচ্ছিলাম, তারা ভয়ে রাস্তায় নামছিল না। দুইদিন আগে তারা এদেরকে গুলি করেছে। কাজেই মানুষ দেখলেই সে ভয় পায়। কাজেই তাকে ঠিক করতে করতেই আমাদের কয়েক মাস চলে গেছে। এখন মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে। এখন আবার নিয়মশৃঙ্খলার দিকে আমরা রওনা হয়েছি। কাজ করতে থাকবো।
বিবিসি বাংলা: সেই অপরাধের পাশাপাশি আরেকটা বিষয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে, যেটাকে মব বা দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা বলা হচ্ছে। যেমন গণপিটুনির একটা বিষয় দেখা গেছে। কিছুদিন আগের কথা যদি বলি, ধানমন্ডি ৩২সহ সারাদেশে অনেক ভবনে ভাঙচুর হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে এগুলো চললেও সরকারের কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন ভূমিকা দেখা যায়নি। তখন কেন তেমন ভূমিকা দেখা গেল না? আপনি পরে এটা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখন কেন কার্যকর ভূমিকা পালন করেনি?
প্রধান উপদেষ্টা: সময় নিচ্ছে। তারা প্রস্তুত হয়ে নিয়ে তাদের মানসিকতা থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেনি। এটা একটা জিনিস হতে পারে। আরেকটা হলো যে আমরা তাদের বলেছি, যেকোনো পুলিশ স্টেশনে তারা যেকোনো রিপোর্ট করতে পারে। আইনের আশ্রয় নিতে পারে এবং সেটাকে আমরা সহজ করেছি এখন। বলছি তোমরা ইন্টারনেটে দিয়ে দিতে পারো, অনলাইন পেজ করতে পারো। যাতে মামলা করতে গিয়ে, হয়রানি হয়– বরাবরই বাংলাদেশের যে ঐতিহ্য, থানাতে গেলে যে সমস্ত হয়রানি হয়, সেটা থেকে বাঁচার জন্য যেন অনলাইন করে। সেই অনলাইনের ব্যবস্থা করছে। যা যা আমাদের মনে হয়েছে যে মানুষকে সহজ করা যাবে, তাদের তথ্য আদানপ্রদান সহজ করা যাবে এবং মামলা করা সহজ করা যাবে, ইত্যাদি।
বিবিসি বাংলা: অনলাইনে তারা করতে পারছেন, সেটা আপনারা সহজ করেছেন কিন্তু আসল কাজটাতো পুলিশকে করতে হবে। আপনি যে বলছেন পুলিশ সেই পর্যায়ে যেতে পারেনি, তারা নিজেরা আস্থা পাচ্ছে না বা তারা সেভাবে সক্রিয় হচ্ছে না। প্রায় সাত মাস হয়ে গেছে, এখনও তাদের আস্থার সংকটটা দূর করা গেল না?
প্রধান উপদেষ্টা: এখনও সম্ভব হয়নি। বাট চেষ্টা করছি। অনেক ইম্প্রুভ হয়েছে। কিন্তু সমাধান হয় নাই।
ঐক্যের মধ্যে ফাটল?
বিবিসি বাংলা: আপনার দায়িত্ব গ্রহণর প্রসঙ্গে আসি। আপনি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, তার আগে যে আলোচনা হয়েছে, সেখানে তিনটি পক্ষকে সক্রিয় দেখা গিয়েছিল। একটি হচ্ছে সেই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া ছাত্ররা, রাজনৈতিক দলগুলো এবং তৃতীয় হচ্ছে সেনাবাহিনী। এই তিন পক্ষের সবাই আপনাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তখন আপনাদের অন্তর্বর্তী সরকারের যে সম্পর্কটা ছিল, এখনও কি সেটা আছে? নাকি এখন সেই অবস্থা আর নেই?
প্রধান উপদেষ্টা: আমারতো অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। কেউ আমাকে অসমর্থন করছে, এরকম কোনো খবরতো আমি পাই নাই এখনও। সবাই সমর্থন করছে, সবাই চাচ্ছে যে সুন্দরভাবে দেশ চলুক, তাদের সবার মধ্যে ঐক্য আছে। রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। কিন্তু তার মানে এই নয়, ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরেছে। এরকম কোনো ঘটনা ঘটে নাই।
বিবিসি বাংলা: আমি যদি একজনের কথা বলি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটি বক্তব্যে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে।
বিবিসি বাংলা: ছাত্রদের প্রসঙ্গে... ছাত্ররা একটা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। বা এরইমধ্যে করে ফেলেছে। সে বিষয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে সরকার তাদের সহায়তা করছে। সরকার কি সহায়তা করছে তাদেরকে বা করেছে?
প্রধান উপদেষ্টা: না, সরকার কোনো সহায়তা করে না। যে রাজনীতি করতে চায়, সে নিজেই ইস্তফা দিয়ে চলে গেছে। তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি ছিল সরকারের ভেতরে। যিনি রাজনীতি করতে মন স্থির করেছেন, তিনি ইস্তফা দিয়ে সরকার থেকে চলে গেছেন। উনি প্রাইভেট সিটিজেনশিপে রাজনীতি করবেন, কার বাধা দেওয়ার কী আছে?
বিবিসি বাংলা: কিন্তু আপনি দায়িত্ব নেওয়ার আগে এবং পরে বিভিন্ন সময় বলেছেন যে ছাত্ররাই আপনার বা আপনাদের নিয়োগকর্তা। সে কারণেই কি তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতি একটা সমর্থন আছে সরকারের?
প্রধান উপদেষ্টা: দেখিনিতো এখনও। দেখলে না ঠিক করবো যে ওদের কাজকর্ম ভালো হচ্ছে কিনা। প্রত্যকেরতো মনোভাব থাকবে যে ওই রাজনৈতিক দলটা সুন্দর কাজ করছে, ওই রাজনৈতিক দলটা ঠিক কাজ করছে না। এটা মনোভাব হতে পারে ব্যক্তিগতভাবে। সরকার হিসেবে আমাদের কোনো পজিশন নাই।
বিবিসি বাংলা: তাহলে আপনি কি বলবেন যে অভিযোগটা করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সেটা সঠিক নয়?
প্রধান উপদেষ্টা: সঠিক নয় মোটেই।
সেনাবাহিনী কি সহযোগিতা করছে?
বিবিসি বাংলা: সেনাবাহিনী থেকে কি আপনি সহযোগিতা পাচ্ছেন?
প্রধান উপদেষ্টা: সর্বাত্মকভাবে।
বিবিসি বাংলা: আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে সম্প্রতি সেনাপ্রধান একটি বক্তব্য দিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, অনেক বিষয়ে তিনি এবং আপনি একমত। তারমধ্যে তার একটি বক্তব্য ছিল যে, সবাই একসাথে কাজ করতে না পারলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে বা বিপন্ন হতে পারে। আপনি কি এই বক্তব্যের সাথে একমত?
প্রধান উপদেষ্টা: এটা ওনার বক্তব্য উনি বলবেন। আমার ওনাকে এনডোর্স করা না করারতো বিষয় না।
বিবিসি বাংলা: যেহেতু উনি বলেছেন অনেক বিষয়ে কথা হয়। আপনি অনেক বিষয়ে একমত। অথবা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা? সরকার প্রধান হিসেবে আপনি কী মনে করেন?
প্রধান উপদেষ্টা: এটাতো সবসময় থাকে। একটা পলাতক দল দেশ ছেড়ে চলে গেছে বা তাদের নেতৃত্ব চলে গেছে। তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছে এটাকে আনসেটেল করার জন্য। এটাতো সবসময় থ্রেট আছেই। প্রতি ক্ষনেই আছে, প্রতি জায়গাতেই আছে। কাজেই এটাতো সবসময় থাকবে।
বিবিসি বাংলা: হুমকিটা কি আপনি বলছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ থেকে?
প্রধান উপদেষ্টা: অবশ্যই। এটাতো অবভিয়াস। তারা মাঝে মাঝেই ঘোষণা করছে। বক্তৃতা দিচ্ছে। এড্রেস করছে। আপনি-আমরা সবাই শুনছি। মানুষ উত্তেজিত হচ্ছে।
বিবিসি বাংলা: আওয়ামী লীগের বিষয়ে আপনারা বলেছেন বা আপনি এখন যেটা বললেন, তাদের দিক থেকে নানা কর্মকাণ্ড আছে। হুমকিটা কোথায়?
প্রধান উপদেষ্টা: এই যে এড্রেস করছে। জাগো, কাজে নামো ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক আহ্বান জানাচ্ছে না- কর্মসূচি দিচ্ছে, হরতাল করো, অমুক করো। মানুষ কীভাবে নেবে এটাকে বলেন? এটা কি মিষ্টি মুখে চলে যাবে সব?
বিবিসি বাংলা: অন্তর্বর্তী সরকারের একটা বড় লক্ষ্য হিসেবে আপনি সংস্কারের কথা বলেছেন। এটি নিয়ে আপনি অনেকগুলো কমিশনও গঠন করেছেন। কিন্তু এখন যেহেতু আপনারাই বলছেন যে বছরের শেষে নির্বাচন হবে। তো এই অল্প সময়ের মধ্যে আপনারা সংস্কার কতটা করতে পারবেন বলে মনে করেন?
প্রধান উপদেষ্টা: সেটা আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমরা একেবারে প্রত্যেকটা সুপারিশ দেবো। সুপারিশের সঙ্গে কথা থাকবে যে, আপনার রাজনৈতিক দল এটা কি সমর্থন করে? এটাতে রাজী আছেন? রাজী থাকলে বলেন, রাজী না থাকলে বলেন। বা এই যে সুপারিশটা আছে সেটার মধ্যে যদি কোনো একটা সংশোধনী এনে রাজী হবেন, সেটা বলেন। এটা কি নির্বাচনের আগে সংশোধন করা ঠিক হবে নাকি নির্বাচনের পরে – সব প্রশ্নের এখানেই সমাবেশ আছে।
রাজনৈতিক দলকে শুধু বলতে হবে কোনটা? সবকিছু মিলালে আমরা এটা ঠিক করবো কোন সুপারিশে সবাই একমত হয়েছে। সেটা আলাদা করবো যে এটাতে সবাই একমত হয়েছে। এরকম যে সমস্ত সুপারিশে তারা একমত হয়েছে, সেগুলো আমরা আলাদা একটা কাগজে নিয়ে আসবো যে এইসব বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। তবে এটাকে আমরা বলবো একটা চার্টার – জুলাই চার্টার।
এবং সবাইকে আহ্বান জানাবো, আপনারা সবাই যেহেতু একমত হয়েছেন এটাতে সই করে দেন। জুলাই চার্টারের মতোই আমরা চলবো। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই নির্বাচনটা হবে। নির্বাচনের আগে যেটা বলেছেন সেটা নির্বাচনের আগে হবে, যেটা নির্বাচনের পরে বলেছেন সেটা নির্বাচনের পরে হবে। এটা আপনাদের বিষয়। কিন্তু আপনারা একমত হয়েছেন। সেই ঐকমত্যই আমরা নির্বাচন করার চেষ্টা করছি।
'ভারতের সাথে মাঝখানে কিছু কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে'
বিবিসি বাংলা: গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি দেখা গেছে। দুই দেশের সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে আছে?
প্রধান উপদেষ্টা: খুবই ভালো। আমাদের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয় নাই। আমি যেভাবে ব্যাখ্যা করে এসেছি আমাদের সম্পর্ক সবসময় ভালো থাকবে। এখনও ভালো আছে, ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে।
বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ভালো না থেকে উপায় নেই। আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, আমাদের পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা এত বেশি এবং ঐতিহাসিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের এত ক্লোজ সম্পর্ক, সেটা থেকে আমরা বিচ্যুত হতে পারবো না। তবে মাঝখানে কিছু কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, আমি বলেছি মেঘ দেখা দিয়েছে। এই মেঘগুলো মোটামুটি এসেছে অপপ্রচার থেকে। অপপ্রচারের সূত্র কারা সেটা অন্যরা বিচার করবে। কিন্তু এই অপপ্রচারের ফলে আমাদের সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। সেই ভুল বোঝাবুঝি থেকে আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি।
বিবিসি বাংলা: ভারত সরকারের সঙ্গে আপনার সরাসরি যোগাযোগ হচ্ছে?
প্রধান উপদেষ্টা: সবসময় যোগাযোগ হচ্ছে। তারা এখানে আসছে, আমাদের লোকজন সেখানে যাচ্ছে। প্রাইম মিনিস্টার মোদীর সঙ্গে আমার প্রথম সপ্তাহেই কথাবার্তা হয়ে গেছে।
বিবিসি বাংলা: ইলন মাস্কের সঙ্গে সম্প্রতি আপনার কথা হয়েছে এবং তাকে আপনি বাংলাদেশে আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। এটা কি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সাথে একটা সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা?
প্রধান উপদেষ্টা: এটা মূলত ছিল স্টারলিংক নিয়ে। এটা ব্যবসায়ীক একটা সম্পর্কের বিষয় ছিল। সেবিষয়ে আমরা আলাপ করছি যে স্টারলিংকের কানেকশনটা আমরা নিতে চাই।
আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হবে বা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না?
বিবিসি বাংলা: আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা গেছে, বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলছেন। এটা নিয়ে আপনার অবস্থানটা কী?
প্রধান উপদেষ্টা: ওই যে ঐকমত্য। আমরা বরাবরই ফিরে যাচ্ছি ঐকমত্যে। সবাই মিলে যা ঠিক করবে আমরা তাই করবো।
বিবিসি বাংলা: এ বিষয়ে আপনার সরাসরি অবস্থান নেই বা আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হবে বা রাজনীতি করবে কিনা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না?
প্রধান উপদেষ্টা: আমি অত ডিটেইলসে যাচ্ছি না। আমার বরাবরই পজিশন হলো যে আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। আমাদের এই দেশের ওপরে সমান অধিকার।আমরা সব ভাই ভাই। আমাদেরকে এই দেশেই বাঁচতে হবে। এ দেশকেই বড় করতে হবে। কাজেই যে মত-দল করবে, তার মতো করে, সবকিছু করবে। এই দেশ থেকে কারও অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনো উপায় নাই। কিন্তু যে অন্যায় করেছে, যার বিচার হওয়া উচিৎ, তার বিচার হতে হবে। এটুকুই শুধু।
বিবিসি বাংলা: বাংলাদেশের যে রাষ্ট্রীয় কাঠামো তাতে সরকার প্রধানের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির একটা নিয়মিত যোগাযোগ থাকার কথা। বর্তমান রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কি আপনার যোগাযোগ হয়?
প্রধান উপদেষ্টা: যখনই প্রয়োজন হয়। শুধু শুধুতো গিয়ে ওনার সময় নষ্ট করার দরকার নাই। যখনই দরকার হয়, আমিতো তার কাছে যাই।
বিবিসি বাংলা: এর আগে সাক্ষাৎকারে আপনি একটা কথা বলেছিলেন যে এক-এগারোর সময় আপনি যে একটা রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন, সেটা নিয়ে কথা হচ্ছিলো এবং আপনি বলেছিলেন যে আপনার রাজনীতিতে আসাটা ভুল হয়েছে। এখন আপনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পদে রয়েছেন। এখন আপনার কী মূল্যায়ন? এখানে আসা কি আপনার সঠিক হয়েছে নাকি এখনই বিচার করতে চান না?
প্রধান উপদেষ্টা: না, বিচার করবো। প্রথম কথা, আমি রাজনৈতিক দল গঠন করি নাই। গঠন করার কথা বলেছিলাম। এবং দশ সপ্তাহ যাবৎ এই কথা জারি ছিল। দশ সপ্তাহ পর আমি বলেছি- না, আমি রাজনীতিতে যাব না। আমি বলেছি যে পলিটিক্স ইজ নট মাই কাপ অফ টি। এবং ওটা ওখানেই সমাপ্ত, এরপর আমাকে রাজনীতির কাছে কেউ টানতে পারেনি। সবাই চেষ্টা করেছে দেশের নেতৃত্ব নেন, আপনি প্রধানমন্ত্রী হন। সবাই চেষ্টা করেছে। আমি ওটা চাই নাই। আমি বলেছি, ওই চ্যাপ্টার শেষ। এই দশ সপ্তাহ- দ্যাটস এনাফ। কাজেই ওইভাবেই আছি এখন। এখানে আমি রাজনীতিতে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। রাজনীতি করিও না।
বিবিসি বাংলা: কিন্তু এটা একটা রাজনৈতিক পদ, সরকার প্রধান...
প্রধান উপদেষ্টা: এটা টেকনিক্যালি হলে হবে। আমিতো এই পদে আসতেও চাই নাই। আমাকে অনুরোধ করেছে, বহুবারই করেছে। তারপর আমি শেষ পর্যন্ত সম্মত হয়েছি। সেটার দায়িত্ব নিয়েছি। রাজনৈতিক পদ যদি হয়ে থাকে, এটা বাই ডেফিনেশন। আমি রাজনীতি করি না।
বিবিসি বাংলা: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিবিসি বাংলাকে সময় দেওয়ার জন্য।
প্রধান উপদেষ্টা: ধন্যবাদ আপনাকেও।