বাজারের মুদি দোকান থেকে একবস্তা চাল চুরির অভিযোগে রাজু আহম্মেদ (১৯) নামে এক যুবককে জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। কিন্তু পুলিশ চাল চুরির মামলা না দিয়ে মোটরসাইকেল চুরির মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে তাকে।

অভিযুক্ত যুবককে অন্য মামলায় কারাগারে পাঠানোর এমন অভিযোগ উঠেছে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। এতে সংক্ষুব্ধ ওই যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া জনপ্রতিনিধিসহ পরিবারের লোকজন।

রাজু আহম্মেদ পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের মাহানপাড়া এলাকার আইবুল হকের ছেলে। রবিবার (১২ জানুয়ারি) আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে, গত ১১ জানুয়ারি রাতে হাড়িভাসা বাজারের একটি দোকান থেকে চালের বস্তা চুরির অভিযোগে স্থানীয়রা রাজু আহম্মেদকে হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। পরে ইউপি চেয়ারম্যান চাল দোকানদারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, “চাল চুরির ঘটনায় দোকানদার আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলে আমি পুলিশে খবর দেই। পরে সদর থানার উপ-পরিদর্শক হাফিজুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্সসহ ইউনিয়ন পরিষদে আসেন এবং শতশত মানুষের সামনে থেকে তাকে নিয়ে যান। সেসময় চাল দোকানদার বাদী হয়ে মামলা করতে চাইলে পুলিশ- প্রয়োজন নেই বলেন। কিন্তু পরে যা শুনলাম তাতে আমি বিব্রত এবং হতবাক। পুলিশের এহেন কাণ্ড কোনভাবেই কাম্য নয়।”

জানা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি নাজমুল হুদা (৪৬) নামে এক ব্যক্তি সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে সদর থানায় এজহার দায়ের করেন। সেই মামলাতেই চাল চুরিতে অভিযুক্ত রাজুকে আটক দেখান পুলিশ। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা থানার অপর উপ-পরিদর্শক আবিদ হাসান বাদল।

এই উপ-পরিদর্শক আদালতে আসামি প্রেরণের নথিতে উল্লেখ করেন, ‘গত ৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজু আহম্মেদ অজ্ঞাত আসামিদের সহযোগিতায় মোটরসাইকেলটি চুরি করেছে।’ রাজুকে হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চেয়ারম্যান পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলেও এই পুলিশ কর্মকর্তা নথিতে লিখেছেন, তাকে বাজার থেকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশের এমন আচরণে দিশেহারা রাজুর বাবা বলেন, “আমার ছেলে অপরাধ করেছে আমি স্বীকার করি। যেই অপরাধ করেছে, সেই অপরাধের সাজা হোক। মিথ্যা মামলায় তাকে কেন জড়ানো হচ্ছে? এক বস্তা চাল চুরির সাজা আর লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল চুরির সাজা তো এক হতে পারে না।”

এ বিষয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি রাজুকে আটক করে আনা উপ-পরিদর্শক হাফিজুর রহমানকে।

এদিকে, মুঠোফেনে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন অভিযুক্ত উপ-পরিদর্শক আবিদ হাসান বাদল। বলেন, “থানায় আসেন সাক্ষাতে কথা বলবো।”

সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এস.

এম মাসুদ পারভেজ বলেন, “আমি গতকাল (১১ জানুয়ারি) ছুটিতে ছিলাম, বিষয়টি জানতাম না। আজকে আসার পরও চাল চুরির বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ না থাকলে মামলা হবে কীভাবে?” 

অভিযোগ না থাকলে অন্য মামলায় আটক দেখানো যাবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যে আটক করছে তার কাছে মোটরসাইকেল চুরির তথ্য থাকলে আটক করতে পারে। একজন চোরতো একাধিক চুরির সঙ্গে জড়িত থাকতেই পারে।”

ঢাকা/নাঈম/এস

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

ঠিকাদার বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ২ প্রকৌশলীকে হুমকির অভিযোগ

খুলনা নগরীর খানজাহান আলী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোল্লা সোহাগের বিরুদ্ধে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) দুই প্রকৌশলীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কুয়েটের একটি ভবনের ছাদের ওয়াটারপ্রুফিংয়ের কাজে ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে লাভ আরও বেশি নির্ধারণের কথা বলেছিলেন ওই ঠিকাদার। এ নিয়ে প্রকৌশলীদের তিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

এ প্রেক্ষাপটে কুয়েটের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) শেখ আবু হায়াত ও নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. গোলাম কিবরিয়া সোমবার কুয়েট উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করে নিরাপত্তা চেয়েছেন। 

সূত্র জানায়, কুয়েটের ১৩ নম্বর ভবনের ছাদের ওপর ওয়াটারপ্রুফিংয়ের কাজ নিয়েছেন মোল্লা সোহাগ। কাজটি কয়েকদিন আগে শুরু হয়। গত রোববার বিকেল ৩টার দিকে ঠিকাদার সোহাগ প্রথমে নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়ার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এ বি এম মামুনুর রশিদ এবং অন্য নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াতকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকি দেন। গালাগাল করতে নিষেধ করলে তিনি গোলাম কিবরিয়াকেও গালাগাল ও হুমকি দেন। পরে তিনি একই পরিচয় দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াতকে ফোনে গালাগাল ও হুমকি দেন।

উপাচার্যের কাছে দুই নির্বাহী প্রকৌশলী লিখিত অভিযোগে বলেন, ওয়াটারপ্রুফিংয়ের কাজের দর প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের প্রকৌশলীরা বাজারদরের সঙ্গে সরকারি নিয়মে ভ্যাট, আইটি ও ১০ শতাংশ প্রফিট বা লাভ (পূর্বনির্ধারিত) যুক্ত করে নির্ধারণ করেন। ঠিকাদার সোহাগ ১০ শতাংশ লাভ কেন যুক্ত করে দর নির্ধারণ করা হয়েছে, তাঁকে আরও বেশি লাভ দিতে হবে বলে ফোনে প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়াকে জানান। এ কথা বলার পর প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু কোনো কথা না শুনে ফোনে প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া ও শেখ আবু হায়াতকে গালাগাল ও মারধরের হুমকি দেন সোহাগ। এ অবস্থায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াত বলেন, রোববার বিকেল ৩টার কিছু আগে খানজাহান আলী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়ে আমাকে ফোন দিয়ে বলে– ‘তুই চেয়ারের পরে বসে সবাইরে ১০ লাখ ২০ লাখ টাকার কাজ দিস। আমাকে দিছিস টেন পারসেন্ট লাভে।’ এই বলে আমাকে যাচ্ছেতাই বলে গালাগাল করেন। পাঁচ মিনিট পর ফোন দিয়ে আমাকে দেখে ছাড়বেন, আমার বাড়ি আক্রমণ করবেন, ফুলবাড়িগেটে গেলে আমাকে দেখে নেবেন– এসব বলে হিুমকি দেন। 

নিজের সাংগঠনিক পরিচয় ও প্রকৌশলীকে ফোন দেওয়ার কথা স্বীকার করেন মোল্লা সোহাগ। তবে কোনো ধরনের ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলে দাবি করেন। মোল্লা সোহাগ বলেন, আমার নেতার অর্ডার আছে– আমি কোনো জায়গায় কোনো টেন্ডারেও যাই না, কোনো ঠিকাদারিতেও নেই। আমার কোনো কাজ কুয়েটে চলে না। আমার ট্রেড লাইসেন্সই নেই, কাজ পরের কথা। আমি তাদের (প্রকৌশলী) ফোন দিয়েছিলাম, কথা হয়েছে, তবে কোনো হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়নি।

কোনো কাজ চলছে না, তাহলে প্রকৌশলীদের কার হয়ে ফোন দিয়েছিলেন– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা আবু হায়াত ও গোলাম কিবরিয়াকে ফোন দিলে ভালোভাবে জানতে পারবেন।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ