কুবিতে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ
Published: 12th, January 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা অর্ণব সিংহ রায়কে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টায় তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন তারা।
আটক অর্ণব সিংহ রায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের (কলেজ শাখা) সাবেক সভাপতি এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তিনি সদর দক্ষিণ থানায় মো.
জানা গেছে, অর্ণব সিংহ রায় রবিবার (১২ জানুয়ারি) সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে আসেন। পরীক্ষা শেষে অপেক্ষারত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দেখে তিনি গণিত বিভাগের সভাপতির ওয়াশরুমে অবস্থান নেন। প্রক্টরের উপস্থিতিতে সেখান থেকে প্রক্টর অফিসে আনার সময় তাকে উদ্দেশ্য করে ডিম মারা হয়। পরে প্রক্টর অফিস থেকে মারধর করতে করতে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে অবস্থানরত পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহাদাত তানভীর রাফি বলেন, “সে ছাত্রলীগের নেতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছিল এবং বিপক্ষে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিছিল করেছিল। এছাড়া সে একাধিক মামলার আসামিও। তাই তাকে পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে। এর আগেও কয়েকজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড মো. আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা তার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যেভাবে শিক্ষার্থীরা একপ্রকার মব জাস্টিসের মতো তাকে নিয়ে গেল, সেখানে আমাদের কিছু করার ছিল না। যা হয়েছে, অপ্রত্যাশিত।”
মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা ভিডিও দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”
কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, “সমন্বয়কদের মধ্য থেকে একজন ফোন দিয়ে আমাদের জানান, একজন আসামিকে আটকে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা যাচাই করতে দেখলাম একটি মামলায় তিনি ১২ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি। এরপর আমরা তাকে আটক করে নিয়ে আসি। বর্তমানে অভিযুক্ত ডিবি হেফাজতে আছেন।”
এ ব্যাপারে জানতে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি সাজ্জাদ করিম খানকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দুই প্ল্যাটফর্মের সমান সংখ্যক নেতা নিয়ে নতুন দলের কমিটি, আলোচিত সাবেক শিবির নেতারা থাকছেন না
তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটি কত সদস্যের হবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে কমিটির আকার যা-ই হোক, তাদের দুই প্ল্যাটফর্ম—জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে ৫০ শতাংশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ৫০ শতাংশ নেতাকে নিয়েই দলের আহ্বায়ক কমিটি হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে কমিটির সবার নাম ঘোষণা না–ও হতে পারে। তবে শীর্ষস্থানীয় পদগুলোতে (ছয় বা ততোধিক পদ হতে পারে) মনোনীত নেতাদের নাম ঘোষণা করা হবে বলে জাতীয় নাগরিক কমিটির একজন দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন। অন্য পদগুলোতে মনোনীত নেতাদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে।
অবশ্য নতুন দলের আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব পদে আখতার হোসেনের নাম চূড়ান্ত বলে ইতিমধ্যে খবর বেরিয়েছে। এ ছাড়া মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র পদে সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর নামও অনেকটাই চূড়ান্ত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে।
আলোচিত সাবেক শিবির নেতারা থাকছেন নাএদিকে নতুন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আলী আহসান জোনায়েদের নাম আলোচনায় ছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জোনায়েদ বলেছেন, তিনি নতুন দলে থাকছেন না।
জোনায়েদের এই স্ট্যাটাস ফেসবুকে শেয়ার করে গতকাল ভোরে রাফে সালমান রিফাত (ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আরেক সাবেক সভাপতি) লিখেছেন, তিনিও নতুন দলে থাকছেন না।
শিবিরের আরেক সাবেক নেতা আরেফীন মোহাম্মদ হিযবুল্লাহও নতুন দলে থাকছেন না বলে জানা গেছে। হিযবুল্লাহ ইতিমধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির সহমুখপাত্র পদ থেকে পদত্যাগও করেছেন।
শিবিরের সাবেক এই তিন নেতা নতুন দলে যুক্ত না হলেও একসময় শিবির করতেন, এমন বেশ কয়েকজন নতুন দলে থাকছেন বলে জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল একজন নেতা জানিয়েছেন।
নতুন দলের সম্ভাব্য কমিটিতে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর নাম এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনের নাম শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা সারোয়ার তুষার, তাসনিম জারা ও আরিফুল ইসলাম আদীব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবদুল হান্নান মাসউদসহ কয়েকজন।
অবশ্য নতুন দলের আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব পদে আখতার হোসেনের নাম চূড়ান্ত বলে ইতিমধ্যে খবর বেরিয়েছে। এ ছাড়া মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র পদে সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর নামও অনেকটাই চূড়ান্ত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে।প্রস্তুতির জন্য দায়িত্ব বণ্টনসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের জন্য অনুমতি চেয়ে গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) চিঠি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপকমিটি করে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে বলে নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
শিবিরের সাবেক এই তিন নেতা নতুন দলে যুক্ত না হলেও একসময় শিবির করতেন, এমন বেশ কয়েকজন নতুন দলে থাকছেন বলে জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল একজন নেতা জানিয়েছেন।পুনর্গঠিত হবে নাগরিক কমিটিনতুন দল গঠনের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আগামীকাল শুক্রবার দলের আত্মপ্রকাশের পরও জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি থাকবে। নেতারা জানান, এই প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারের বর্তমান কার্যালয় থেকেই পরিচালিত হবে। নতুন দলের কার্যালয় হবে আলাদা স্থানে।
বাংলামোটরের কার্যালয়ে গতকাল নাগরিক কমিটির একটি বৈঠক হয়। সেখানে নাগরিক কমিটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হলো এক. আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ব্যতীত জাতীয় নাগরিক কমিটির অবশিষ্ট অর্গানোগ্রাম, নির্বাহী কমিটি, সেল ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দলে যোগদানকারী সব কেন্দ্রীয় সদস্যের সদস্যপদ ২৮ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) দল ঘোষণার আগপর্যন্ত বহাল থাকবে। রাজনৈতিক দলে অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সদস্যের নাগরিক কমিটির সদস্যপদ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। দলে যোগ দিচ্ছেন না, এমন সদস্যদের সদস্যপদ বহাল থাকবে।
নেতারা জানান, এই প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারের বর্তমান কার্যালয় থেকেই পরিচালিত হবে। নতুন দলের কার্যালয় হবে আলাদা স্থানে।দুই. আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সংগঠক ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী ১৫ দিন অনানুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁদের উদ্যোগে নাগরিক কমিটির তিনজনের আনুষ্ঠানিক ফোরাম পরবর্তী অর্গানোগ্রাম নির্ধারণ করবে।
তিন. ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন দল আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক দল গঠনের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পন্ন হবে। দল গঠনের পর থেকে নাগরিক কমিটি ‘সিভিল-পলিটিক্যাল’ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থেকে যাবে। আর কোনো দল গঠনের উদ্যোগ নেবে না।
নাগরিক কমিটি থেকে দলের বিভিন্ন পদের জন্য ১২০ জনের একটি তালিকা করা হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট একজন নেতা জানিয়েছেন। যাঁরা দলে যাবেন, তাঁদের বাইরে থাকা অন্যদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠিত হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।