সরকারি কর্মচারীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে গৃহীত ঋণ মূল্যেও তুলনায় কম মূল্যে দলিল সম্পাদন নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ‘গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮’ এর কিছুটা সংশোধন করেছে। এর ফলে একদিকে সরকারি রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা কমবে অন্যদিকে ঋণ গ্রহীতারা ও হয়রানি হওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত একটি সংশোধনীতে অনুমোদন দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদ।

জানা গেছে, প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮ সংক্রান্ত পরিপত্র বিগত ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই জারি করা হয়। বিগত ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর উক্ত নীতিমালায় কতিপয় সংশোধন আনা হয়।

নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৭.১ গ(২) অনুযায়ী ঋণ প্রদানের জন্য ডেট-ইক্যুইটি অনুপাত হবে ৯০:১০। এর অর্থ হচ্ছে ঋণদানকারী ব্যাংক ফ্ল্যাটের/সম্পত্তির মূল্যের সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ ঋণ দেবে এবং ঋণগ্রহীতা কমপক্ষে ১০ শতাংশ ব্যয় নির্বাহ করবে। উক্ত ঋণ-ইক্যুইটি অনুপাত অনুসরণ করে ঋণ সংক্রান্ত ব্যাংকের কাগজপত্র (যেমন-মঞ্জুরিপত্র, রিপেমেন্ট সিডিউল) যাচাই করে সঠিক প্রাপ্তি সাপেক্ষে ঋণ আবেদন নিস্পত্তি করা হচ্ছে। সম্প্রতি অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন ও টিডিএম) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঋণ ও সুদ ভর্তুকি মঞ্জুরের আবেদন প্রক্রিয়াকালে ঋণগ্রহীতা/বাস্তবায়নকারী সংস্থার কাছে বায়নানামা, বন্ধকি দলিল ও ক্রয় দলিল দাখিলের অনুরোধ করা হচ্ছে। সুদ ভর্তুকি মঞ্জুরের আবেদন প্রক্রিয়াকালে প্রাপ্ত উক্ত দলিল পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ঋণের অঙ্কের চেয়ে কম মূল্যে দলিল রেজিস্ট্রি হচ্ছে; মৌজা মূল্যে ফ্ল্যাট/জমি রেজিস্ট্রি করার সুযোগ থাকা এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন না করায় এমনটি ঘটছে।

সূত্র জানায়, ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক/হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন প্রদত্ত ঋণের অংক দলিল মূল্যে প্রতিফলিত হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন না করে ব্যাংক-ক্লায়েন্ট সম্পর্কের ভিত্তিতে কাগজপত্র সঠিক পেলে ঋণ প্রদান করে আসছে। চলমান প্র্যাকটিস অনুযায়ী মৌজা মূল্যে রেজিস্ট্রিকৃত ফ্ল্যাট/জমির ক্ষেত্রে গৃহ নির্মাণ ঋণ চালু হবার পর হতে অর্থাৎ জুলাই, ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত দলিল মূল্য নির্বিশেষে ব্যাংক হতে গৃহীত ঋণের ওপর মাসিক ভিত্তিতে সরকারি সুদ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। তবে গৃহীত ঋণের চেয়ে কম মূল্যে দলিল রেজিস্ট্রি হলে পুরো ঋণের ওপর সুদ ভর্তুকি পাওয়া যাবেনা এমন বিষয়টি সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮ এ উল্লেখ নেই। কিন্তু ঋণের সাময়িক অনুমোদন দেওয়ার পর নভেম্বর ২০২৪ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনকালে প্রকৃত ঋণ মূল্যের ভিত্তিতে সুদ ভর্তুকি প্রদানের শর্ত আরোপ করায় ঋণ গ্রহীতাগণ ঋণের মঞ্জুরি আদেশ ও সুদ ভর্তুকি প্রাপ্তিতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন মর্মে আবেদনে জানিয়েছেন। এতে করে তারা ব্যাংকের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ করতে পারছেন না।

বিষয়টি পর্যালোচনায় করে কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে, যারা সরকারি সুদ ভর্তুকি পাবেন, তাদের কাছ থেকে জমিসহ তৈরি বাড়ি। ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনকালে সরকার যথাযথ রাজস্ব পাবে এবং এ বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হবে-
(ক) সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮ সংশোধন করে উক্ত নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৭.১(গ) এর উপানুচ্ছেদ (১)-এ নিম্নবর্ণিত বাক্যটি সংযোজন করা যেতে পারে-
‘এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনের সময় ঋণগ্রহীতা অন্ততপক্ষে ঋণের প্রকৃত মূল্য দলিলে প্রদর্শন করবে’

(খ) উক্ত সংশোধনটি ‘প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২১’ এবং ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৯’ তেও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

(গ) অর্থ বিভাগ ইতোমধ্যে যেসব ঋণের ক্ষেত্রে প্রদেয় সুদ ভর্তুকির সাময়িক মঞ্জুরি আদেশ জারি করা হয়েছে এবং চূড়ান্ত আদেশ জারি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ৫(ক) এর শর্ত প্রযোজ্য হবে না অর্থাৎ আদেশ জারির তারিখ থেকে তা কার্যকর হবে।

৬। উপর্যুক্ত পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদের প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টা অনুমোদনের জন্য পেশ করা হলে তিনি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।

সূত্র জানায়, অর্থ উপদেষ্টা অনুমোদন দেওয়ার পর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণ ঋণ মঞ্জুরির ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা দূর হবে পাশাপাশি দলিলে কম মূল্যে গৃহ ক্রয় বা নির্মাণ দেখনোর প্রবণতা কমবে এবং সরকারি রাজস্ব আদায়ে সুবিধা হবে।

ঢাকা/হাসনাত/এসবি

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে এখন মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৭ লাখ: সিইসি

বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। রোববার জাতীয় ভোটার দিবসের উদ্বোধন আনুষ্ঠানে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। ২০২৪ সালে হালনাগাদ করা চূড়ান্ত এ ভোটার তালিকা আজ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। 

সারাদেশে আজ ২ মার্চ পালিত হচ্ছে ‘জাতীয় ভোটার দিবস’। ‘তোমার আমার বাংলাদেশে, ভোট দেব মিলেমিশে’ এই প্রতিপাদ্যে সারাদেশে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সপ্তমবারের মতো জাতীয় ভোটার দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের ভোটার দিবসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভোটাধিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ২ মার্চ থেকে দিনটি পালন করে আসছে সংস্থাটি। কমিটির সভাপতি ও নির্বাচন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামানের সই করা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোটার দিবস উপলক্ষে মাঠ পর্যায়ে জেলা, উপজেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে র‌্যালি, আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘গণতন্ত্র, নির্বাচন ও ভোটাধিকার বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে’ প্রতি বছরের ১ মার্চকে জাতীয় ভোটার দিবস হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। তবে পরের বছর ২০২৯ সাল থেকে এই ভোটার দিবস উদযাপনের তারিখ পরিবর্তন করে ২ মার্চ করা হয়। এ দিবস উদযাপন উপলক্ষে ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশন সচিবালয় হতে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, জাতীয় ভোটার দিবস উদযাপন উপলক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকাতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এবং মাঠপর্যায়ে থানা বা উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসগুলোতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

ঢাকায় সকাল ৯টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক নির্বাচন ভবনের সামনে থেকে জাতীয় ভোটার দিবস ২০২৫-এর শুভ উদ্বোধন করা হবে। এ সময় নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত থাকবেন। এরপর নির্বাচন ভবনের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের করা হবে। সকাল ১১টায় নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে ভোটার দিবস নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইসির আলোচনা সভায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্য থেকে ১০ জন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি, ইউএনডিপির প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে অবজারভার গ্রুপ থেকে কয়েকজন ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।  

জাতীয় ভোটার দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকে ‘বিশেষ প্রকাশনা’ প্রকাশ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে ভোটার দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের বিষয়ে বিশেষ টকশো প্রচারিত হবে। মাঠপর্যায়ে জেলা, উপজেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসগুলোতেও র‍্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সহকারী পরিচালক জনসংযোগ মো. আশাদুল হক।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাদক মামলায় খালাস পেলেন ডা. ঈশিতা
  • ঘুরেফিরে তারাই খেলে সেমিতে
  • সংস্কৃতি ও রাজনীতির সংঘাত ও সমন্বয়
  • ঋণ নেওয়ার আগে যা ভাববেন
  • খালেদা জিয়ার খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি ৩ মার্চ
  • দেশে এখন মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৭ লাখ: সিইসি
  • এডিপি বাস্তবায়নে সুপারিশ উপেক্ষিত, ৩ বছরে ব্যয়ের লক্ষ্য ৯,০৮,৬০০ কোটি টাকা
  • রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যৌথবাহিনীর তল্লাশি
  • অ্যাপল, গুগল ও মেটার কাছে থাকা ব্যবহারকারীদের তথ্য কি নিরাপদ
  • দাবির বন্যা সামলাতে সরকারকে যা করতে হবে