হেল্পলাইন ১০৯৮ চালুর পর থেকে গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কল এসেছে ২০২৪ সালে। শিশু বিষয়ে সহায়তা চেয়ে সাড়ে ৫ লাখ ফোন কল আসে গত বছর। যেখানে ২০২৩ সালে কলের সংখ্যা ছিল সোয়া ৩ লাখ। সমাজসেবা অধিদপ্তরের চাইল্ড সেনসিটিভ সোশ্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ (সিএসপিবি) প্রকল্প সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে বিপদগ্রস্ত শিশুদের সাহায্যের জন্য হেল্পলাইন ১০৯৮ পরিচালিত হয়। ২০১০ সালে অপরাজেয় বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে পাইলট প্রকল্প আকারে এটি চালু হয়। ২০১৬ সাল থেকে পুরোপুরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই হেল্পলাইনের কার্যক্রম চলছে। এতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
২৪ ঘণ্টায় পালা করে টোলমুক্ত এ নম্বরে আসা কল ধরেন ২৮ জন প্রতিনিধি। বর্তমানে গড়ে ১৯৮টি কারণে শিশুর জন্য সহায়তা চেয়ে প্রতিদিন ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ফোনকল আসে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে (জুলাই-আগস্ট) বাড়ে তিন গুণ, যা করোনাকালে ছিল দ্বিগুণ। গত কয়েক বছরে শিশুদের মনোসামাজিক সহায়তা, নির্যাতন-সহিংসতা, ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের তরফ থেকেও এই নম্বরে ফোনকল বেড়েছে।
কত কল, কোথা থেকে, কী বিষয়ে
সিএসপিবি সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে শিশু সহায়তা চেয়ে ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫১টি ফোনকল আসে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকা থেকে সর্বাধিক ২৮ শতাংশ, চট্টগ্রাম থেকে ১৫ শতাংশ, খুলনা থেকে ১৩ শতাংশ, রংপুর থেকে ১২ শতাংশ, ময়মনসিংহ থেকে ১০ শতাংশ, বরিশাল থেকে ৭ শতাংশ এবং রাজশাহী থেকে ১০ শতাংশ কল আসে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কল ছিল ১১ হাজার ৩২১টি। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত ৬ হাজার ৬৭৬ এবং পরিবার সংশ্লিষ্ট ৫ হাজার ৩৮১টি কল ছিল।
যেখানে ২০২৩ সালে ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৪১৪টি কল। এ ছাড়া ২০২২ সালে মোট কল এসেছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তথ্য সহায়তা চেয়ে ১ লাখ ২০ হাজার ৭৯৩টি কল আসে। ২০২৪ সালের ২০ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ৪৫ হাজার ৯১৮টি কল এসেছে, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তিন গুণ।
হেল্পলাইনের তথ্য অনুযায়ী, শিশুর মনোসামাজিক সমস্যা, নিরাপত্তা, মৌলিক চাহিদা বিঘ্নিত, নির্যাতন, বাল্যবিয়ে, যৌন নির্যাতন, সাইবার ক্রাইম, পাচার, গৃহশ্রমে নিযুক্ত শিশুর নির্যাতন, অপহরণ, প্রেমের প্রতারণা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিকভাবে নির্যাতন এমনকি অভিভাবকের নির্যাতন সম্পর্কিত কলও আসে এই হেল্পলাইনে।
আট মিনিটে উদ্ধার
বিদ্যালয়ে ক্লাস শেষ হলে নীলফামারীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে গত বছর বের হয় তিন ছাত্রী। বাড়ি ফেরার জন্য তারা একটি ইঞ্জিনচালিত রিকশায় ওঠে। তাদের বহনকারী রিকশা চলতে শুরু করলে তারা খেয়াল করে, দুটি ছেলে তাদের পিছু নিয়েছে। তারা জানতে পারে, পরিকল্পনা অনুযায়ী একজন ছাত্রীকে তুলে নেওয়ার জন্য দুই ছেলে পিছু নিয়েছে। ওই অবস্থায় কোনো উপায় না পেয়ে হেল্পলাইন ১০৯৮-এ ফোন করে বিষয়টি জানায়। তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা থেকে বিপদগ্রস্ত ছাত্রীদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিতে পাশের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ওসি কল কনফারেন্সে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেন। সেই সঙ্গে আরেক ফোনে টহল দলকে তথ্য দেন। ৮ মিনিটের মধ্যে পুলিশের টহল দল মেয়েদের কাছে পৌঁছে যায়। ওই দুই ছেলেকে আটক করে।
পাচার হওয়া মেয়েকে ফিরে পান মা-বাবা
রাজধানীর অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী গত বছর বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে পাচার চক্রের এক নারী সদস্য তাকে ভুলিয়ে নিয়ে যৌনপল্লিতে বেচে। ১৪ বছরের সেই শিশু কৌশলে ১০৯৮ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানায়। শিশুটিকে উদ্ধার করে তার পরিবারে ফেরত দেয়। শিশুটি যেন নিয়মিত পড়াশোনা করতে পারে এবং পরিবারও যেন এ ঘটনা নিয়ে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে না থাকে, সেজন্য বাবা-মাকে কাউন্সেলিং করে ১০৯৮ কর্তৃপক্ষ।
ভোলায় ২২০ শিক্ষার্থী পেল প্রবেশপত্র
ভোলার এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গত বছর ভুলে ২২০ শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আটকে যায়। জেলা প্রশাসক, শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হলেও সমাধান হচ্ছিল না। এ সময় কোনো এক শিক্ষার্থীর বাবা ১০৯৮ নম্বরে কল করে সহযোগিতা চান। তখন ১০৯৮ টিম তথ্য সংগ্রহ করে সত্যতা পায়। স্থানীয় পর্যায় এবং পরে বোর্ডে কথা বলা হয়। জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের অধিকারের কথা। এর দু’দিন পর শিক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র পায়।
প্রকল্পের মেয়াদ শেষ
গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে এ প্রকল্প। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে চলবে ১০৯৮। কিন্তু শিশুদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠা এ হেল্পলাইনের কার্যক্রম এখনও চলছে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্প শেষ হলেও নতুন বছরের প্রথম ১০ দিনে সহায়তা চেয়ে ৩১ হাজার ২২৬ শিশু কল করেছে।
কর্মকর্তার বক্তব্য
হেল্পলাইনের ব্যবস্থাপক চৌধুরী মো.
তিনি জানান, প্রকল্প শেষ হলেও বন্ধ হবে না এই শিশু সহায়তা নম্বরটি। কারণ, এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গ্রহণযোগ্য। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় সিএসপিবি চালু রাখা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা না হলেও কার্যক্রম চলছে। আগামীতে এই প্রকল্পের আওতায় জনবল বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রেল সেতুতে ধাক্কা, রূপসা নদীতে ডুবল লাইটারেজ জাহাজ
খুলনায় রূপসা রেল সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে রূপসা নদীতে ডুবে গেছে লাইটারের জাহাজ এমভি সেভেন সার্কেল-২৩। জাহাজটিতে ১ হাজার ১৭৫ টন সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ছিল বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জাহাজের সুকানি ইমাম হোসেন লিটু ও গ্রীজার অমিত কুমার শীল জানান, তারা মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকা থেকে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল নিয়ে রূপসায় সেভেন রিংস সিমেন্ট ফ্যাক্টরির দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় রূপসা রেল সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে জাহাজটি ডুবে যায়।
জাহাজে থাকা ১৩ জন কর্মচারীকে জাহাজ কর্তৃপক্ষের ২টি ট্রলার এসে উদ্ধার করে তীরে উঠায়।
ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে জাহাজটি উদ্ধার কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।