Samakal:
2025-03-03@14:22:01 GMT

ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট

Published: 12th, January 2025 GMT

ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট

ঈশ্বরদীর মানিকনগর গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম সরদার। শুক্রবার বিকেলে ক্ষেতের ফুলকপি কেটে ফেলছিলেন তিনি। এ সবজির আবাদ করেছিলেন দুই বিঘা জমিতে। ফলনও ভালো হয়েছিল। উৎপাদিত সবজি বিক্রির পর পাকা ঘর করার ইচ্ছা ইচ্ছা ছিল তাঁর। তবে দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারে নেওয়ার খরচও উঠছে না। রাগে-ক্ষোভে ক্ষেতের ফুলকপি গাছসহ কেটে গরুকে খাওয়াচ্ছেন তিনি। এ কৃষকের ভাষ্য, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার কৃষকের একই অবস্থা।

পাবনার ঈশ্বরদী শীতকালীন সবজি উৎপাদনের জন্য বেশ পরিচিত। উপজেলায় অন্তত ২১ হাজার কৃষক সবজি উৎপাদনে যুক্ত। এর মধ্যে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক ১৫ জন। উৎপাদিত সবজি যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে চলতি মৌসুমে ভালো ফলন হলেও কৃষক রয়েছেন বিপদে, দাম পাচ্ছেন না। ফলে মনিরুলের মতো অনেকে ক্ষেতেই মিশিয়ে দিচ্ছেন বা গবাদি পশুকে খাওয়াচ্ছেন। ক্রেতা কম থাকায় জমিতে নষ্ট হচ্ছে অনেক সবজি। 

স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিজ্ঞানীদের ভাষ্য, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। আর বাজারজাতকরণের জন্য বিপণন বিভাগ রয়েছে। তাদের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা নেই। এতে কৃষক কষ্ট করে ফসল ফলালেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শ্রমিকের মজুরি দিয়ে সবজি তুলে বাজারে বিক্রি করলে খরচ ওঠে না।
কৃষি বিভাগ বলছে, সারাদেশে একযোগে শীতকালের সবজি উঠতে শুরু করায় দরপতন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ এবং বিপণন অধিদপ্তরের সমন্বয় না থাকায় বেকায়দায় পড়তে হয়েছে কৃষককে। ঈশ্বরদীর পাইকারি বাজারে দেখা গেছে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা মণ। মুলার কেজি ৫০ পয়সা। শিম ৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বেগুন পাওয়া যাচ্ছে ১০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচের কেজি ২০ টাকা।
চার বিঘা জমিতে মুলার আবাদ করেছেন সাহাপুর ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামের কৃষক শাহিনুজ্জামান শাহিন। তবে বাজারে ক্রেতা না থাকায় ২০ টাকা মণ বা ৫০ পয়সা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এতে শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহন খরচও ওঠে না। এ কারণে সবজি তুলছেন না তিনি। আরেক কৃষক আমিরুল ইসলামের এক বিঘা ফুলকপির আবাদে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। সঙ্গে রয়েছে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ। এ সবজি ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।

মুলাডুলির আমিনুর রহমান বাবুর শিমের ক্ষেত পরিচর্যায় প্রতিদিনই খরচ করতে হয়। এখন প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা মণ। অথচ দিনে শ্রমিকের মজুরি ৬০০ টাকা। তিনিও ক্ষেত থকে সবজি তোলা বন্ধ রেখেছেন। জানা গেছে, উপজেলার সাহাপুর, সলিমপুর, মুলাডুলি, দাশুড়িয়া, লক্ষ্মীকুণ্ডা ও পাকশী ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়। গত বছর ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮১১ টন সবজি উৎপাদন হয়েছিল। এবার ৪০০ হেক্টরে বেগুন, ৯০০ হেক্টরে ফুলকপি, ২১৫ হেক্টরে বাঁধাকপি, ৩৮০ হেক্টরে ওলকপি, ৯২০ হেক্টরে গাজর, ৭০ হেক্টরে টমেটো, ১৫০ হেক্টরে লাউ, ১ হাজার ১৮০ হেক্টরে শিম, ১১০ হেক্টরে লালশাক, ৯০ হেক্টরে মটরশুঁটি, ৯৩৩ হেক্টরে মুলা, ১২০ হেক্টরে পালং শাক, ১১০ হেক্টরে পুঁইশাক এবং ১৫০ হেক্টরে ধনেপাতা আবাদ করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, প্রতি হেক্টরে ২৫ টন লাউ, ২১ টন ফুলকপি, ৪০ টন বাঁধাকপি, ২০ টন ওলকপি, ৪০ টন গাজর, ৫৫ টন টমেটো, ৪৫ টন লাউ, ২২ টন শিম, ১২ টন লালশাক, ৯ টন মটরশুঁটি, ৩৫ টন মুলা, ১২ টন পালং শাক, ৩৫ টন পুঁইশাক ও ১০ টন ধনেপাতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা।
সাহাপুর গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম সরদার গত বছর তাঁর ৩ বিঘা জমিতে সবজির আবাদ করেছিলেন। খরচ বাদে লাভ হয়েছিল ৪ লাখ টাকা। এবারও লাভের আশায় শীতকালীন সবজির আবাদ করেছেন ৪ বিঘা জমিতে। তবে এবার খরচও উঠবে না বলে জানান তিনি। মিরকামারি গ্রামের আব্দুল বারি ওরফে কপি বারীর ভাষ্য, এবার প্রায় ২১ হাজার ছোট ছোট কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
অরণকোলা মিয়াপাড়ার মাসুম মণ্ডল বলেন, মৌসুমের প্রথমে অতিবৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষক। এখন দাম কমে যাওয়ায় ভরাডুবি হতে চলেছে তাদের। কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, উপজেলায় ৩৮ হাজার কৃষকের মধ্যে ২১ হাজারই সবজির আবাদ করেন। জাতীয় কৃষকের তালিকায় রয়েছেন প্রায় ৭০০ জন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঈশ্বরদীতে সব ধরনের সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক দরপতন ঘটেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রহল্লাহ কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘আমরা কৃষি উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত ও প্রতিবেদন জেলা বিপণন অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করি।’ এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জেলার জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও জবাব পাওয়া যায়নি।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দেড় ঘণ্টায় শেষ সুলভ মূল্যের ডিম-দুধ, পাননি অনেকেই

নির্ধারিত এলাকায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের গাড়ি পৌঁছায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। এরপর শুরু হয় সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও গরুর মাংস বিক্রি। দুপুর ১২টার কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল গাড়িতে ডিম ও দুধ নেই। কেবল ১৬ কেজি গরুর মাংস অবশিষ্ট রয়েছে। অর্থাৎ মাত্র দেড় ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে সুলভ মূল্যে বিক্রির জন্য আনা দুধ ও ডিম।

আজ সোমবার চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী ওয়্যারলেস এলাকায় দেখা গেছে এমন চিত্র। এদিন নগরের ওয়্যারলেস ও টেক্সটাইল এলাকায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। এই কর্মসূচির আওতায় পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও ডিম প্রতি ডজন ১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ প্রতিটি গাড়িতে ২০০ লিটার দুধ, ১ হাজার ৫০০ পিস ডিম ও ৭৫ কেজি করে মাংস ছিল। সে হিসেবে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ২০০ লিটার দুধ ও ১২৫ ডজন ডিম বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। তবে দুপুর ১২টার দিকে তেমন ভিড় দেখা যায়নি সেখানে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, তাঁরা অনেকে আগে এসেও পণ্য পাননি।

এদিন অন্তত ১০ ক্রেতা দুধ-ডিম না পেয়ে ফেরত গেছেন। ডিম কিনতে আসা ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি দুপুর ১২টার দিকে এসে ডিম পাই নাই। বাসা থেকে আসতে আসতেই দেখি সব শেষ। তাঁরা নাকি দেড় হাজার ডিম আনছে। তাহলে আমরা পাই নাই কেন?’

গাড়ি থেকে এসব পণ্য কেনার জন্য প্রথমে টাকা দিয়ে স্লিপ নিতে হয়। কর্মকর্তারা জানান, একজন সর্বোচ্চ এক ডজন ডিম, এক বা দুই লিটার দুধ ও এক কেজি মাংস কিনতে পারেন। কেউ চাইলে শুধু ডিম, দুধ অথবা মাংস কিনতে পারবেন। তবে মাংসের চাহিদা তুলনামূলক কম।

দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকায় ফ্রিজার ট্রাক রয়েছে। ফলে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য পণ্য নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু চট্টগ্রামে সে সুযোগ নেই। তাই পরিমাণ কম। আবার দ্রুত ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা বোয়ালখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুমন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সবাইকে পণ্য দেওয়া হয়েছে। মাংসের চাহিদা কম থাকায় কিছু মাংস থেকে গেছে। ডিমের চাহিদা বেশি ছিল। দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ