উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে। ঋণের উচ্চ সুদহার এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সবকিছু মিলিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। চাহিদামতো এলসি খোলা যাচ্ছে না। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ অবস্থায় নতুন সংযোগে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। আবার আইএমএফের সুপারিশে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর কর ও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ। 

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.

আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠকে ব্যবসায়ীরা এমন পরিস্থিতি উল্লেখ করেন। তারা শিল্প প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চান। বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। বিসিআইর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

সভায় বিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে কোম্পানিগুলোর জন্য কোনো এক্সিট পলিসি বা প্রস্থান নীতি নেই। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে ‘এক্সিট পলিসি’ থাকা দরকার। তিনি প্রস্থান নীতির জন্য বড় শিল্পের জন্য ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট, এক বছরের স্থগিতাদেশসহ ১২ বছর মেয়াদে ঋণ পরিশোধের প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট, এক বছরের স্থগিতাদেশসহ ১৫ বছরের মেয়াদ, প্রস্থান নীতির জন্য পৃথক সার্কুলার এবং ঋণ পরিশোধের জন্য বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করার অনুমতির সুপারিশ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, তারাও মনে করেন এক্সিট পলিসি থাকা দরকার। এ জন্য ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে করা নীতি করা সম্ভব হবে।

সভায় শিল্প খাতের সমস্যা তুলে ধরেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, বিজিএমইএ প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি নাজমুল হাসান সোহেল, সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান, বারভিডা সভাপতি আব্দুল হক, কোকা-কোলা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাদাব আহমেদ, বিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী প্রমুখ।
বিসিআই সভাপতি বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পে নগদ সহায়তা পেতে আবেদনের পর ৯ মাস থেকে ১ বছর সময় লাগছে। যার ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠান সময়মতো তাদের পরিচালন ব্যয় মেটানো এবং কর্মীদের বেতনাদি পরিশোধ করতে পারছে না। নগদ সহায়তা প্রদানের সময়সীমা ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে নামিয়ে আনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ব্যাংকে একক গ্রাহকের ঋণসীমা ফান্ডেড ১৫ শতাংশ এবং নন-ফান্ডেড ১০ শতাংশ রয়েছে। এখানে টাকার অবমূল্যায়নকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না। ফান্ডেড অংশ ২৫ শতাংশে রাখা উচিত। এ ছাড়া তিনি ঋণ শ্রেণীকরণের সময়সীমা আগের মতো ৬ মাস রাখার প্রস্তাব করেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সিএমএসই খাত সব থেকে ক্ষতির মুখে পড়েছে। সিএমএসই খাতকে টিকিয়ে রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে। সিএমএসই খাতের বিশেষ তহবিল এবং নিম্ন সুদে সুদের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ খাতে একটি জেলা বা একটি ক্লাস্টার পাইলট ধরে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অর্থায়ন করা যেতে পারে।

গভর্নর ব্যবসায়ীদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল লক্ষ্য এখন মূল্যস্ফীতি কমানো। আশা করা যায়, আগামী জুন নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে থাকবে। বেসরকারি খাতে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। কিন্তু আমানত তেমন বাড়ছে না। আমানতের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ শতাংশ। অর্থ প্রবাহ বাড়াতে হলে আমানত বাড়াতে হবে।
আহসান মনসুর বলেন, ‘বর্তমানে ডলারের সংকট নেই। অর্থনীতি স্বাভাবিক হচ্ছে; কিন্তু একটু সময় লাগবে। আগামী রমজানে যাতে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে আমাদের লক্ষ্য আছে এবং আমরা সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমি মনে করি, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য বন্ড মার্কেটে যেতে হবে। আমাদের করপোরেট বন্ডের জন্য কাজ করতে হবে। 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ইজতেমায় চলবে ১১ বিশেষ ট্রেন, জেনে নিন সময়সূচি

গাজীপু‌রের টঙ্গীর তুরাগ তীরে আজ বৃহস্প‌তিবার বাদ মাগ‌রিব আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এ উপলক্ষে মুসল্লিদের যাতায়াত সুবিধায় ১১টি বিশেষ ট্রেনের চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যদিও এর আগে ১৪টি চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকীর পাঠানো এক সংবাদ সংশোধনী বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম পর্বের ইজতেমায় জামালপুর ও টাঙ্গাইল স্পেশাল ট্রেন দুটি বাদ দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে রেলের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) জুমা স্পেশাল নামে এক জোড়া ট্রেন চালানো হবে। জুমা স্পেশাল-১ ঢাকা থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় ছেড়ে টঙ্গী পৌঁছাবে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে। জুমা স্পেশাল-২ বিকেল ৩টায় টঙ্গী স্টেশন থেকে ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছাবে বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে।

এছাড়া আখেরি মোনাজাতের দিন (২ ফেব্রুয়ারি) পরিচালনা করা হবে ৯টি ট্রেন। এর মধ্যে ঢাকা-টঙ্গী স্পেশাল-১ ঢাকা ছাড়বে ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটে, ঢাকা-টঙ্গী স্পেশাল-২ ঢাকা ছাড়বে ভোর ৫টায়, ঢাকা-টঙ্গী স্পেশাল-৩ ঢাকা ছাড়বে ভোর ৫টা ২৫ মিনিটে এবং ঢাকা-টঙ্গী স্পেশাল-৪ ঢাকা ছাড়বে ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে।

অন্যদিকে, টঙ্গী স্টেশন থেকে ফেরার পথে টঙ্গী-ঢাকা স্পেশাল-১ টঙ্গী স্টেশন ছাড়বে সকাল ৮টা ২০ মিনিটে, টঙ্গী-ঢাকা স্পেশাল-২ টঙ্গী স্টেশন ছাড়বে সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে, টঙ্গী-ঢাকা স্পেশাল-৩ টঙ্গী স্টেশন ছাড়বে সকাল ৯টা ৪২ মিনিটে, টঙ্গী-ঢাকা স্পেশাল-৪ টঙ্গী স্টেশন ছাড়বে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে এবং টঙ্গী-ঢাকা স্পেশাল-৫ টঙ্গী স্টেশন ছাড়বে বেলা ১১টা ৭ মিনিটে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইজতেমায় চলবে ১১ বিশেষ ট্রেন, জেনে নিন সময়সূচি