দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের মধ্যে থাকা মানুষকে সম্পদ তৈরিতে সক্ষম করে তোলা দরকার। এটি বাংলাদেশে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য কমানো এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নতুন একটি মডেল হতে পারে। এমন মত দিয়েছেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অর্থনীতির অধ্যাপক রবিন বার্গেস। 
রোববার রাজধানীতে ‘দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র এবং জলবায়ু সহনশীলতা: সামাজিক সুরক্ষা কি যথেষ্ট?’ শীর্ষক এক পাবলিক লেকচারে তিনি এ মডেলের ধারণা তুলে ধরেছেন। রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক ভবনে বিআইজিডি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অধ্যাপক রবিন বার্গেস লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টারের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এবং পরিবেশ ও জ্বালানি গবেষণা কর্মসূচির পরিচালক। ব্র্যাক এবং বিআইজিডির সঙ্গে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক বার্গেস দরিদ্রদের তাদের পেশা পছন্দ এবং জীবনকে রূপান্তর করে– এমন সম্পদে বিনিয়োগ করতে সক্ষম করার মডেলটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তাঁর মডেলটি কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও দারিদ্র্যমুক্ত করতে দ্রুত কাজ করবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় বেশ কিছু কার্যক্রম চালু রয়েছে। তবে এভাবে সহায়তা দেওয়া হলে উপকারভোগীর দারিদ্র্যসীমা থেকে বের হওয়ার সুযোগ খুব বেশি নেই। তাই তাঁর মডেলে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ কাউকে গৃহপালিত পশু, ছোট পরিসরে দোকান করে দেওয়া, রিকশা বা ছোট কোনো পরিবহনযন্ত্র কিনে দেওয়ার সুপারিশ করেন। এতে উপকারভোগীরা সেখান থেকে আয় করে দ্রুত দারিদ্র্যসীমার ওপরে চলে আসতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, ব্র্যাক বিশ্বের অনেক দেশের অতিদারিদ্র্য থেকে উত্তরণে সম্পদ দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ মডেল বিশ্বব্যাপী সুফল বয়ে এনেছে। এখানে আরও উদ্ভাবনী শক্তি প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে। যেমন– এর সঙ্গে বীমা যুক্ত করা যেতে পারে। 
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান র‍্যাপিডের চেয়ারম্যান ড.

এম এ রাজ্জাক বলেন, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য স্কিম রয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ১৪০টির মতো স্কিম থাকলেও গরিব মানুষকে টার্গেট করে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনে চ্যালেঞ্জের সঙ্গে সমন্বয় করে গরিব মানুষ যেন দ্রুত দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্ত হতে পারে, সে জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। 

আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. শারমিন্দ নীলোর্মি, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) মহাপরিচালক ড. শরীফ এ. চৌধুরী, বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন প্রমুখ। 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ল

মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ালো ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। সামরিক অভ্যুত্থানের চার বছর পূর্তির একদিন আগে এ ঘোষণা এলো। আজ শুক্রবার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের বরাতে রয়টার্স এ তথ্য জানায়।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সুচির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতাসীন হয়। এরপর থেকে দেশটি গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে। সম্প্রতি বিদ্রোহীরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের জয় পাচ্ছে। দেশের অনেক এলাকা এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে।

এদিকে জান্তা বাহিনী এ বছর নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। সমালোচকরা বলছেন, প্রক্সির মাধ্যমে জেনারেলদের ক্ষমতায় রাখার জন্য একটি প্রহসন হতে পারে এ নির্বাচন। কারণ, সেনাবাহিনী ক্ষমতা ধরে রাখতে বহুবার জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়িয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে আবারও মেয়াদ বাড়ানো পরিস্থিতির ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার চেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।

রাষ্ট্র পরিচালিত এমআরটিভি তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে জরুরি অবস্থা বৃদ্ধির ঘোষণা প্রচার করে বলেছে, সাধারণ নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য এখনো আরও অনেক কাজ বাকি আছে। বিশেষ করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রয়োজন।

নির্বাচনের জন্য কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। তবে জান্তা সরকার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। যদিও তারা দেশের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার লড়াইয়ে ক্লান্ত। কারণ, তারা একাধিক ফ্রন্টে সশস্ত্র বিদ্রোহকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর শাসন শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটি গভীর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এক সময় মিয়ানমারের অর্থনীতি আন্তর্জাতিক বাজারে একটি প্রতিশ্রুতিশীল শক্তি হিসেবে দেখা হলেও এখন তা ব্যাপক চাপে রয়েছে। সামরিক বাহিনী একাধিক ফ্রন্টে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করছে এবং দেশটির জনগণের ওপর চাপ দিন দিন বাড়ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ