‘ওষুদ দেওনের সুইডাও নাই তারার খাছে’
Published: 12th, January 2025 GMT
‘হাসপাতালো চিকিৎসা খিতা করবায়। সুইডাও নাই তারার খাছে। ওষুদপত্রও থাহে না। তারার খাছে আইলে ফাডাই দেয় অন্যহানোত ...।’ চুনারুঘাটের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রত্যাশিত চিকিৎসাসেবা না পাওয়ায় এভাবেই নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন এক রোগীর স্বজন। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি জানান, চিকিৎসকরা নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেন। তবে সরঞ্জাম না থাকলে তাদেরই-বা কী করার আছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরে চিকিৎসা নিতে গেলে তাদের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চিকিৎসা শুধু নামেই, আসলে বিশেষ কোনো সেবা তারা পাচ্ছেন না ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী ও জনবল নেই। রোগীদের চাপ থাকলেও নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক। প্রতিমুহূর্তে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয় চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের।
উপজেলার ৫ লাখ মানুষের জন্য চারজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। ঝামেলা এড়াতে রোগীদের প্রায়ই পাঠিয়ে দেওয়া হয় অন্য কোথাও। হাসপাতাল সূত্র জানায়, এ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে চুনারুঘাট হাসপাতালে। গড়ে প্রতিদিন এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন ৫ শতাধিক মানুষ। তবে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট থাকায় সেবা পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকমতো।
চারজন চিকিৎসক দিয়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দিতে না পারার কথা স্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষও। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় জরুরি ক্ষেত্রে রোগীদের স্থানান্তর করা হয় হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল বা সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সাত মাস ধরে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর সরবরাহ নেই। এতে চিকিৎসক ও নার্সরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসা নিতে গিয়ে চাপে পড়ছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। সরকারিভাবে ক্যানুলা ও সিরিঞ্জ সরবরাহ কম হওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়ার পর প্রয়োজনীয় ওষুধের অধিকাংশই বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। এতে তাদের আর্থিক চাপ বাড়ছে। অনেকে সেবা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
হাসপাতালের নার্স সুবর্ণা ও তানিয়া জানান, চিকিৎসা দিতে গেলে ক্যানুলা, সিরিঞ্জ ও স্যালাইনের মতো অতিপ্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী যথেষ্ট পরিমাণে থাকতেই হবে। বাধ্য হয়ে রোগীদের সেগুলো কিনতে হচ্ছে।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন সেখানে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। এ ছাড়া বহির্বিভাগে বহু রোগী ভিড় জমান। এসব রোগীর পক্ষে ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী বাইরের ফার্মেসি থেকে কেনা কঠিন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রীর মজুত কম। তবুও চেষ্টা থাকে জনগণের কষ্ট লাঘবের।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চীনের ফেরত দেওয়া বোয়িং কিনতে চায় ভারত
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের সুফল পেতে পারে ভারতীয় বেসরকারি বেসামরিক বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া ও আকাশ এয়ার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের দরুন চীন সরকার সে দেশের উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোকে মার্কিন বিমান না কেনার হুকুম জারি করায় ভারতের কাছে এই সুযোগ চলে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে চীনা সংস্থাগুলোর দেওয়া উড়োজাহাজগুলো এবার ভারতে চলে আসতে পারে। ভারতীয় সংস্থাগুলোকে উড়োজাহাজ পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না।
মার্কিন সংস্থা বোয়িংকে চীনের বিভিন্ন এয়ারলাইনস প্রায় ১০০টি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স জেট উড়োজাহাজের বরাত দিয়েছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে শুল্কযুদ্ধ শুরু হওয়ায় সেই বরাত বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। এতে ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া ও আকাশ এয়ারের লাভ হতে পারে। তারাও ওই একই মডেলের বিমানের বরাত বোয়িংকে দিয়েছে। পাশাপাশি ১১টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারেরও বরাত দিয়েছে ওই দুই সংস্থা। চীনের সিদ্ধান্তের দরুন ভারতীয় সংস্থাগুলোর বিমান পেতে দীর্ঘ অপেক্ষার প্রয়োজন হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
যাত্রীসংখ্যা বাড়লেও পর্যাপ্ত উড়োজাহাজের অভাবে এই দুই ভারতীয় সংস্থাকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। মার্কিন সংস্থা বোয়িং ছাড়াও ভারতীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো ফ্রান্সের এয়ারবাসের ওপর নির্ভরশীল।
ওয়াকিবহাল সূত্রের বরাতে সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে আজ মঙ্গলবার বলা হয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার মালিক টাটা গোষ্ঠী বোয়িংকে এই বিষয়ে অনুরোধ করতে চলেছে। চীনকে সরবরাহ দিতে যেসব উড়োজাহাজ প্রস্তুত, সেগুলোকে দ্রুত যাতে তাদের দেওয়া যায়, অনুরোধে সে কথাই বলা হবে। এতে ভারতীয় সংস্থাগুলোর মতো বোয়িংয়েরও লাভ হবে। তৈরি উড়োজাহাজ ফেলে না রেখে তারা অন্যত্র সরবরাহ করতে পারবে।
বোয়িং অনুরোধ রাখলে ভারতীয় সংস্থা যেমন লাভবান হবে, তেমনি তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটবে। এভাবে অতীতেও এয়ার ইন্ডিয়ার লাভ হয়েছিল। চীন বরাত না নেওয়ায় ৪১টি ৭৩৭ ম্যাক্স জেট এয়ার ইন্ডিয়ায় চলে এসেছিল।
ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক চাপানোয় চীনও পাল্টা শুল্ক বাড়িয়েছে। মার্কিন পণ্যের ওপর চাপানো হয়েছে ১২৫ শতাংশ শুল্ক। এই মুহূর্তে ১০টি উড়োজাহাজ পুরোপুরি তৈরি অবস্থায় বোয়িংয়ের কাছে পড়ে আছে। আনুষ্ঠানিকভাবে অবশ্য এ বিষয়ে এয়ার ইন্ডিয়া বা আকাশ এয়ার কর্তৃপক্ষ এখনো গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করেনি।
ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী তেলুগু দেশম পার্টির নেতা রাম মোহন নাইডু গতকাল সোমবার হরিয়ানার গুরুগ্রামে এয়ার ইন্ডিয়ার সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি ওই সংস্থার নিরাপত্তা উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। বিমান পরিবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ওপর এয়ার ইন্ডিয়া বিশেষ জোর দিয়েছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রী সেখানে বলেন, এয়ার ইন্ডিয়ার পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয় যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে। টাটা গোষ্ঠীর এই সংস্থা বিশ্বের অন্যতম সেরা সংস্থা হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। ভারত সরকার তাদের সব রকমের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
আকাশ এয়ার সংস্থার যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালে। উড়োজাহাজ পেতে দেরি হওয়ায় এই নতুন সংস্থাকে সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। সংস্থাটির কাছে যত উড়োজাহাজ রয়েছে, তার চেয়ে বেশি রয়েছেন পাইলট। ভবিষ্যতের প্রয়োজনের কথা মনে রেখে তাঁদের নিযুক্তি দেওয়া হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়ার মতো তারাও দ্রুত বিমান পেতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যুদ্ধংদেহী মনোভাব এই দুই সংস্থার সন্তুষ্টির কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।