ব্রিটিশরা চক্রান্ত করে মদ খাইয়ে চা–শ্রমিকদের মনোযোগ অন্যদিকে নিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি চা–শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘চা–বাগানের ভাইদের কাছে অনুরোধ, কলিজাটা বড় করে চা-বাগানের মদের পাট্টাগুলো ভেঙে ফেলুন। মাথা যদি ঠিক থাকে, কেউ মাথা কিনতে পারবে না।’

আজ রোববার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কুরমা চা-বাগানে চা-শ্রমিক সমাবেশে সারজিস আলম এ কথা বলেন। ব্রিটিশদের কিছু নীলনকশা ছিল উল্লেখ করে সমাবেশে তিনি আরও বলেন, ‘সাদা চামড়ার এই মানুষেরা চলে গেছে; কিন্তু আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে গেছে। চা–বাগানে এখনো মদের পাট্টা আছে। এগুলো একটা চক্রান্ত। চা–বাগানের ভাইয়েরা যেকোনো বৈষম্যে সিনা টান করে লড়াই করার কথা ছিল, সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা চক্রান্ত করে মদ খাইয়ে আমার ভাইদের মনোযোগ অন্যদিকে নিয়ে গেছে।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির আয়োজনে এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ চা–শ্রমিক ইউনিয়নের মনু ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি। এতে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, কেন্দ্রীয় সংগঠক প্রীতম দাশ, চা–শ্রমিক নারীনেত্রী গীতা কানু, খায়রুন আক্তার প্রমুখ।

সমাবেশে উপস্থিত চা–শ্রমিকদের একাংশ। আজ রোববার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কুরমা চা–বাগানে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

করাতকলে সাবাড় বন

কমলগঞ্জ উপজেলায় তিনটি বনবিটসহ রাজকান্দি বন রেঞ্জের বিস্তীর্ণ সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে হুমকির মুখে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে  উপজেলার বন ও চা বাগান থেকে মূল্যবান গাছ নেওয়া হচ্ছে স্থানীয় করাতকলগুলোতে।

গাছ ও বাঁশমহালসমৃদ্ধ কমলগঞ্জের এই অংশে নজর অসাধু বনখেকো চক্রের। দায়িত্বশীলদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চক্রটি এসব গাছ কেটে নিয়ে বিক্রি করছে করাতকলগুলোতে। সে ক্ষেত্রে বিলুপ্ত বা বিরল প্রজাতির পাশাপাশি মহামূল্যবান পুরোনো গাছগুলোই কাটা হচ্ছে বেশি। এতে করে এসব প্রজাতির বনজ বৃক্ষের অস্তিত্ব তীব্র সংকটের মুখে পড়েছে। সম্প্রতি বন বিভাগ অভিযান চালিয়ে সতিঝির গ্রামের করাতকল থেকে ৪২ টুকরো আকাশি গাছের গুঁড়ি জব্দ করে। একইভাবে উপজেলার বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে ৩২টি করাতকলে নিয়মিতই চলছে বিরল এসব গাছের নিধন। শুধু তাই নয়, গাছলুটেরা এবং অবৈধ করাতকলগুলোর মালিকরা বন বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তাব্যক্তির সঙ্গে আঁতাত করেই এই চক্র পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রভাবশালী এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজকান্দি বনরেঞ্জ ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে নিয়মিতই গাছ লুট করা হচ্ছে। এ ছাড়া  উপজেলার ২২টি চা বাগানের ছায়াবৃক্ষগুলোও নেওয়া হচ্ছে করাতকলে। একই পরিস্থিতি কামারছড়া, আদমপুর ও কুরমা বনবিটের। রাজকান্দি রেঞ্জের তিনটি বিট থেকে প্রতি রাতেই কোনো না কোনোভাবে গাছ ও বাঁশ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এই অভিযোগের সত্যতাও জানা গেছে। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বক্তব্য দিতে রাজি নন তারা।

এর পাশাপাশি চা বাগানের টিলাভূমি থেকেও গাছ কেটে পাচার হচ্ছে। এসব গাছের বড় অংশ বিভিন্ন করাতকলের আঙিনায় স্তূপ করো রাখা আছে। উপজেলার এই ৩২টি করাতকলের অর্ধেকেরই বৈধতা নেই। অবৈধ করাতকলগুলো কৌশলে উচ্চ আদালতে রিট করে তাদের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

এসব করাতকলের কয়েকটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সারি সারি স্তূপ করে রাখা আছে আকাশি, মেনজিয়াম, কড়ই, গর্জন, গামার, চিকরাশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাহাড়ি গাছের গুঁড়ি। করাতকলগুলোতে নিয়ে আসা গাছের খণ্ডাংশের মালিকানাসংবলিত রেজিস্টার ব্যবহার করার কথা থাকলেও সেখানে এসবের কিছুই নেই, যা প্রমাণ করে, এসব গাছ বৈধভাবে করাতকলগুলোতে আসেনি।

সেখানে অবস্থানকালে দেখা যায়, ট্রলি, পিকআপ, ট্রাক ও ট্রাক্টরে করাতকলগুলোতে আনা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের খণ্ডাংশ। সংরক্ষিত বন, চা বাগান কিংবা বাড়ির গাছ যাচাই-বাছাইয়েও কোনো ব্যবস্থা নেই সেখানে। এভাবে প্রতিটি করাতকলেই আসছে গাছ।

করাতকল মালিকরা জানান, এখানে বাড়িঘরের গাছগাছালিই বেশি। সেগুলোই চেরা হচ্ছে। বন ও চা বাগানের গাছ মাঝে মাঝে আসে। পরিমাণে খুব কম। অথচ করাতকলগুলোর সামনের অংশেই দেখা যায়, পাহাড়ি বনাঞ্চল ও চা বাগানে ছায়াবৃক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত বিশেষ প্রজাতির গাছের গুঁড়ির স্তূপ। 

স্থানীয় দুই গাছ ব্যবসায়ী জানান, করাতকলগুলোর  মালিকরা বন বিভাগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে মিলে গাছ আনেন। অবৈধ মিলগুলোও তাদের ম্যানেজ করেই চলছে।

পরিবেশকর্মী আহাদ মিয়া ও শিক্ষক জমসেদ আলী জানান,  করাতকলগুলোতে যে হারে বন ও চা বাগানের গাছ কাটা হচ্ছে, তাতে প্রাকৃতিক বন ও চায়ের টিলা বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়বে দ্রুতই। এতে করে একদিকে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল বিলুপ্ত হচ্ছে। অন্যদিকে ছায়াবৃক্ষের অভাবে চা বাগানের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।

রাজকান্দি বন রেঞ্জ অফিসের দায়িত্বে থাকা সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) প্রীতম বড়ুয়া জানান, করাতকলগুলোতে নজরদারি আছে কর্তৃপক্ষের। সম্প্রতি সতিঝির গ্রামে একটি করাতকলে অভিযান চালিয়ে  সেখানে থাকা গাছগুলোর কোনো বৈধতা পাওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • করাতকলে সাবাড় বন