জমির মাটি, নদীর বালু সবই খাচ্ছে এক সিন্ডিকেট
Published: 12th, January 2025 GMT
দৈত্যাকার এক্সক্যাভেটর ক্ষণে ক্ষণে থাবা বসাচ্ছে। খুবলে নিচ্ছে মাটি। সেই মাটি ট্রাকসহ বিভিন্ন বাহনে করে নেওয়া হচ্ছে বিক্রির জন্য। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী নদী থেকে নিয়মিত বালু উত্তোলন চলছে কোনো অনুমোদন ছাড়াই। আর এই পুরো যজ্ঞ চলছে একটি মাত্র চক্রের আধিপত্যে।
কোনো ধরনের বৈধ অনুমোদন বা নির্দিষ্ট মহাল না থাকলেও, প্রভাবশালী চক্রের সদস্যরা এভাবেই বালু-মাটি খুবলে নিচ্ছে সুনামগঞ্জ শহরতলির লালপুর এলাকা থেকে। একই সঙ্গে স্থানীয় গজারিয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে সেতু।
জেলার লালপুর এলাকায় মাটি ব্যবসা চালানোর জন্য কয়েক কোটি টাকার সরকারি জমি দখলে নিয়েছে স্থানীয় মাটিখেকোদের চক্র। ওই এলাকা থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। একই চক্র পাশের গজারিয়া নদী থেকেও অবৈধভাবে বালু তুলে নিচ্ছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই চলছে এই তাণ্ডব।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে জানান, গেল প্রায় ১০ বছরে সেখান থেকে ভূমিখেকোরা কোটি টাকার শুধু মাটিই তুলে নিয়ে বিক্রি করেছে। এই চক্রের পূর্ববর্তী সদস্যরা এখন মাঠে না থাকলেও চক্র ঠিকই চলছে। শুধু হাতবদল হয়েছে পরিচালনার ক্ষমতা। তাদের দাবি, প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতার ছত্রছায়ায় এই চক্র চালাচ্ছে তারই অনুসদারী ও কর্মীরা। সম্প্রতি দখল হয়ে যাওয়া লালপুর এলাকার সরকারি জমি থেকে মাটি তোলা বন্ধে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসমাইল রহমানের নেতৃত্বে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় আটক হন সেখানে কাজ করা দুই মাটি শ্রমিক। মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত চারটি ট্রলি জব্দ করে প্রশাসন। তবে বরাবরের মতোই নাগালের বাইরে রয়ে গেছে চক্রের মূল সদস্যরা।
সুনামগঞ্জ শহরতলির গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর এলাকায় অর্পিত সম্পতি রয়েছে ৬০ থেকে ৭০ একর। জেলা প্রশাসকের খাস খতিয়ানের ভূমিও রয়েছে কয়েক একর। অর্পিত জমির সবটুকুই দখল করেছেন আশপাশের বাসিন্দারা। সরকারি ভূমিও দখল করে চলছে চাষাবাদ। এর মাঝে একটি চক্র অসাধু উপায়ে সেই খাস জমি থেকে শত শত ট্রলি মাটি তুলে নিয়ে বিক্রি করছে। একই সঙ্গে চক্রটি পাশের গজারিয়া নদী থেকে বহুদিন ধরেই বালু উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েক বাসিন্দা জানান, ১০ বছর হয় সেখান থেকে এভাবে মাটি তুলে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে চক্রটি। এরা গজারিয়া নদীর পূর্ব পাশ থেকে শুষ্ক মৌসুমে বালু তুলে বিক্রি করে। স্থানীয় আলম মিয়া, ফারুক মিয়া, ফরিদ মিয়াসহ বেশ কয়েকজন এই বালু ও মাটির ব্যবসা চালাচ্ছেন।
বিভিন্নন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গজারিয়া নদী থেকে বালু তোলার কারণে সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের গজারিয়া নদীর ওপর নির্মত সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে। তবে এ ব্যাপারে আগের মতোই ব্যবস্থা নেওয়ার দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া প্রশাসনের জোরালো কোনো ভূমিকা নেই।
লালপুরের আব্দুল হক জানান, গৌরিপুরের জমিদারের ৬০ থেকে ৭০ একর জমি আছে সেখানে। এগুলো অর্পিত সম্পত্তি। এলাকার কমপক্ষে ২৫০ পরিবারের দখলে আছে এসব জমি। সরকারি খাস ভূমিও মানুষ দখল করেছে। তবে এসব জমিতে সবচেয়ে ভয়াবহ আগ্রাসন চালাচ্ছে মাটিখেকো চক্রটি। তাছাড়া গজারিয়া নদীর অবস্থাও বিপন্ন তাদের কারণে।
এলাকার আরেক বাসিন্দা হাছন আলী জানান, মাস খানেক আগে বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এসে সাবধান করে গেছেন। কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর আবারও মাটি তোলা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে দিন-রাত মাটির ট্রলি চলাচলের কারণে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এলাকাজুড়ে।
সূত্র জানায়, মাটি ও বালু পাচার ও বিক্রির এই অবৈধ ব্যবসা গত বছরের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত যারা নিয়ন্ত্রণ করত তাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। এখন যুবদলের এক স্থানীয় নেতা প্রকাশ্যে এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। দিন তিনেক আগে আবারও লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে এলাকাবাসী। সেখানে ওই যুবদল নেতার নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আলম মিয়া ওরফে জুলফিকার আলম, তাঁর
ভাই আনছার মিয়া এবং স্থানীয় ফারুক সিকদার
এই চক্র নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিগত সরকারের অনুসারীরা গা-ঢাকা দেওয়ার পর চক্রের দায়িত্ব হাতবদল হয়েছে শুধু, বন্ধ হয়নি।
সুনামগঞ্জ সদর তহশিল অফিসের তহশিলদার সিদ্দিকুর রহমান জানান, লালপুরের ওই অংশটি পৈন্দা তহশিল অফিস দেখভাল করে। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১০০ একরের মতো অর্পিত সম্পত্তি আছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকের এক নম্বর খতিয়ানের খাস ভূমিও আছে।
এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জুলফিকার আলম জানান, তিনি রাজনীতি করেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। মাটি-বালুর ব্যবসা তিনি করেন না। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। এর আগেও এ ধরনের অভিযোগ করা হয়েছিল, সত্যতা পাওয়া যায়নি।
নিজের ভাইয়ের ব্যাপারে এই যুবদল নেতা জানান, অভিযোগকারীরা তাঁর ভাইয়ের নামও এর আগে অভিযোগে উল্লেখ করেছিল। তবে তাঁর ভাই এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয়।
জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুর রশিদ জানান, সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়কের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি তারাও যাচাই করবেন। সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই যথার্থ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ইসমাইল রহমান জানান, লালপুরে সরকারি
ভূমি থেকে মাটি তুলে বিক্রির দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সর্বশেষ অভিযানে দু’জন মাটি কাটা শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। খোঁজা হচ্ছে
চক্রের মূল হোতাদের। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে তৎপরতা বাড়াবে প্রশাসন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে এসএসসি পরীক্ষার্থী নিঁখোজ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পরীক্ষা শেষে ফেরার পথে ট্রলার থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে বন্ধুদের সাথে গোসল করতে নেমে জয় আহমেদ (১৬) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিঁখোজ হয়েছে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পূর্ণবাসন এলাকায় ঘাটে দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল প্রায় ৬ ঘন্টা চেষ্টা করেও ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করতে পারেনি ।
নিখোজ, জয় আহমেদ চনপাড়া পূর্নবাসন কেন্দ্রের ৬ নং ওয়ার্ডের বাস চালক মারুফ মিয়ার ছেলে। সে এবছর পিআরডি হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী জানান, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে চনপাড়া পূর্নবাসন কেন্দ্রের পিআরডি হাইস্কুলের ৩৮ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী সরকারী মুড়াপাড়া পাইলট স্কুল পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে শিক্ষকদের সাথে একটি ট্রলার যোগে বাড়ী ফিরছিল।
ট্রলারটি চনপাড়াপূর্নবাসন কেন্দ্র এলাকার কাছাকাছি আসলে শিক্ষকদের নিষেধ করা সত্ত্বেও এসএসসি পরীক্ষার্থী জয় আহমেদ, ইফাজ, আসিফ, পরশ, ইসমাইল, তানভীর, আব্দুর রহমান ও রাকিব গোসল করতে নদীতে ঝাপ দেয়। এদের মধ্যে জয় আহমেদ ছাড়া বাকি সবাই তীরে উঠতে সক্ষম হয়।
এর পর থেকে নিখোজ জয় আহমেদ। বহু খোজাখুজির পর জয়কে না পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবন দেন পুলিশ। ঢাকা সিদ্দিক বাজার ফায়ার সার্ভিসের ৫ সদস্যের একটি ডুবুরি দল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েও উদ্ধার করতে পারেনি নিখোজ জয়ের মরদেহ। সন্ধ্যার দিকে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করেন ফায়ার সার্ভিস।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের উদ্ধারে নামে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ইউনিটের অধিনায়ক হুমায়ুন কবির।