দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পটুয়াখালীর গলাচিপার পানপট্টি লঞ্চঘাট। রাঙ্গাবালী উপজেলার ছয় ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ এ ঘাট দিয়ে জেলা সদর ও গলাচিপায় যাতায়াত করেন। এ দুই উপজেলায় যাতায়াতে এটিই একমাত্র পথ। আগুনমুখা ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদের ভাঙনে জনগুরুত্বপূর্ণ এ ঘাটটির অস্তিত্ব এখন হুমকির সম্মুখীন। এরই মধ্যে ঘাটের ৫০০ মিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। দফায় দফায় স্থান পরিবর্তন করেও রক্ষা করা যাচ্ছে না ঘাটটি। 
স্থানীয় ব্যবসায়ী শানু সিকদার বলেন, এক সরকার যায়, আরেক সরকার আসে। সবাই ঘাট সংস্কারের আশ্বাস দেয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। নতুন সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, মজবুত পাইলিং করে ভাঙনরোধ করা হোক।
পানপট্টি লঞ্চঘাট দিয়ে প্রতিদিন লঞ্চ, ট্রলার ও স্পিডবোটে শত শত মানুষ রাঙ্গাবালী উপজেলার ছয় ইউনিয়ন, জেলা সদর ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা গলাচিপায় যাতায়াত করেন। অব্যাহত ভাঙনে অর্ধশত বছরের পুরোনো লঞ্চঘাটটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দফায় দফায় স্থান বদল করা হলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। চরম ঝুঁকিতে রয়েছে লঞ্চঘাটের শতাধিক দোকান, সংলগ্ন ঘরবাড়িসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। এরই মধ্যে ঘাটটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। মজবুত ব্লক দিয়ে অর্ধশত বছরের পুরোনো এ লঞ্চঘাটটি রক্ষার দাবি এলাকাবাসীর। 
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই আগুনমুখা ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যায়। বিলীন হয় রাস্তাঘাট, হাটবাজার, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। রক্ষা পায় না ঘরবাড়ি ও ফসলের মাঠ। গত পাঁচ বছরে লঞ্চঘাটের অর্ধ কিলোমিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দফায় দফায় সরাতে হয়েছে পন্টুন, স্থানীয় দোকানপাট ও বাড়িঘর। ভাঙনের কারণে কৃষি জমি, বসতভিটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে নিঃস্ব এলাকার কয়েকশ পরিবার। 
পানপট্টি লঞ্চঘাটের ব্যবসায়ী সাবু হাওলাদার বলেন, নদী ভাঙনে লঞ্চঘাটের অস্তিত্ব এখন হুমকির সম্মুখীন। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি– মজবুত পাইলিং করে লঞ্চঘাটটি রক্ষা করা হোক। লঞ্চঘাটটি না টিকলে দোকান থাকবে না। ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।   
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন জানান, পানপট্টি লঞ্চঘাট এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙনরোধে ক্লাইমেট স্মার্ট নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ব্লক দিয়ে ভাঙনরোধ করা হবে।
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

হিজরতের ৫টি শিক্ষা

সাহাবিদের হিজরতের ঘটনাবলি কেবল ইতিহাসের অংশ নয়, বরং তা মুমিন জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাদের হিজরতের ঘটনা ও ত্যাগের আদর্শ থেকে কয়েকটি মৌলিক শিক্ষা উঠে আসে:

১. হিজরত প্রথমত আল্লাহর আদেশ পালন

হিজরত কেবল কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল না, বরং ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক ইবাদতমূলক নির্দেশ। এই কারণে সাহাবিরা সবচেয়ে প্রিয় বস্তু—ঘরবাড়ি, সম্পদ, আত্মীয়স্বজন—সহজে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। (মুহাম্মদ সাইদ রমাদান আল-বুতি, ফিকহুস সিরাহ, পৃষ্ঠা: ১৫৬, দারুল ফিকর, দামেস্ক, ২০০৪)

২. ইমানের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ

হিজরত শেখায় যে একটি জাতির ভিত্তি স্থাপন এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। সুহাইব তাঁর সব সম্পদ, আবু সালামা তাঁর পরিবার এবং বনু জাহশ (রা.) জন্মভূমি ত্যাগ করে এই মূল্য পরিশোধ করেছিলেন। এই ত্যাগ বিনা মূল্যে অর্জিত হয়নি।

আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. ইমানের সম্পর্ক অন্য সব সম্পর্ক থেকে ঊর্ধ্বে

ওমর (রা.) আইয়াশকে যখন তার মায়ের দোহাইয়ের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছিলেন, তা প্রমাণ করে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আনুগত্যের বন্ধন অন্য সব জাগতিক সম্পর্ক (গোত্র, পরিবার, রক্ত) থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।

৪. ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসা

হিজরত মোটেই বিশৃঙ্খল ছিল না। ওমর (রা.)-এর পরিকল্পনা, কাফেলাবদ্ধ হয়ে যাত্রা এবং কৌশল অবলম্বন—সবই প্রমাণ করে যে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার পাশাপাশি মানবীয় প্রচেষ্টা ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করাও আবশ্যক।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র হিজরত মদিনায় হলো যে কারণে২৯ জুন ২০২৫৫. আল্লাহর দয়ার বিশালতা

এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ফিতনা ও দুর্বলতা মানুষের জীবনে আসতে পারে। কিন্তু যখন তারা মক্কায় বন্দী হয়ে নিজেদের পাপী মনে করছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি নাজিল করে আশার দরজা খুলে দেন, ‘বলো, “হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ (পাপ করেছ), তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন।”’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)

এই আয়াতটি ছিল তাঁদের জন্য এক ঐশী ক্ষমা ও নতুন সুযোগের বার্তা।

হিজরত কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; এটি একটি অক্ষয়–দর্শন—যেখানে ইমান, ধৈর্য এবং আত্মত্যাগের সমন্বয়ে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের বীজ নিহিত ছিল। এই দর্শনই মুসলমানদের নতুন এক দিগন্তে পৌঁছে দেয়।

আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ