বশেমুরবিপ্রবিতে দুদকের অভিযান, অভিযোগের সত্যতা মিলেছে
Published: 12th, January 2025 GMT
নানা অনিয়মের অভিযোগে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি দল। এ অভিযানে অনিয়মের সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছে তারা।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় দুর্নীতি দমন কমিশনের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো.
এ সময় সহকারি পরিচালক বিজন কুমার রায়, সোহরাব হোসেন সোহেলসহ দুদকের অন্যান্য কমর্কর্তারা সঙ্গে ছিলেন।
অভিযান শেষে উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবাবপত্র ও বই ক্রয়, নিয়োগ, পানি শোধনাগার বিনষ্ট, গেট ও বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল নির্মাণসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক অনিয়মের সন্ধান পায় দুদক। এরই ভিত্তিতে আজ অভিযান চালানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত বেঞ্চ ক্রয় করার অভিয়োগ প্রমাণিত হয়েছে, যা সরকারির অর্থ অপচায় হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লানিং কমিশনের পরিচালক তুহিন মাহমুদ কেনাকাটায় অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। তার সময়ের কেনাকাটার নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যলয়ের অপর কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম হীরার বিরুদ্ধে ব্যাপক টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। আত্মীয় স্বজনের নামে টেন্ডার নিয়ে কাজ না বিপুল পরিমান অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন। গোপালগঞ্জে একাধিক বহুতল ভবনের মালিক তিনি। যা তার আয়ের সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক। তারও নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “সেকশন অফিসার পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যার বয়স বেশি। এসব ফাইল ও কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। দুই-একটি বিষয়ে আমরা মামলারও প্রস্তাবনা করবো। পরে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে, সেভাবে মামলা দায়েরসহ বাকী কায্যক্রম পরিচালনা করা হবে।”
ঢাকা/বাদল/মেহেদী
risingbd.com
সর্বশেষ
পাঠকপ্রিয়
নির্বাহী সম্পাদক: তাপস রায়
প্রকাশক: এস এম জাহিদ হাসান
ঠিকানা: ১৯৮-১৯৯, মাজার রোড,
মিরপুর-১, ঢাকা ১২১৬
একটি স্কাইরুট মিডিয়া লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান
টেলিফোন: +৮৮-০১৬৭৮০২৮১৩৬
মার্কেটিং : +৮৮-০১৬৮৬৬৯৩৫৪৯
+৮৮-০১৬৮৬৬৯০২৬৬
ইমেল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.risingbd.com কর্তৃক সংরক্ষিত
আমরা | গোপনীয়তা নীতি | যোগাযোগশিরোনাম
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফটো সাংবাদিকের জন্য গাজার শোক
২৫ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি ফটো সাংবাদিক ফাতিমা হাসসুনার জন্য ফটোগ্রাফি ছিল পেশার চেয়েও বেশি কিছু। এটি ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাস্তবতা তুলে ধরার এক অভিযান। গত ১৮ মাসে যুদ্ধের নামে ইসরায়েলি গণহত্যার কারণে ক্যামেরা হাতে ফাতিমা গাজার অলিগলিতে ঘুরতেন। ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনে মানবিক ক্ষয়ক্ষতি সংরক্ষণ করতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িঘর, শোকাহত পরিবার এবং ধ্বংসের মধ্যে শিশুর চোখে আশার আলো খুঁজে বেরিয়েছে তাঁর ক্যামেরা। ফাতিমার তোলা হাজার হাজার ছবি সারাবিশ্বে গাজায় জীবন ও মৃত্যুর এক অম্লান জানালা খুলে দিয়েছিল। তাঁর লেন্স দেখিয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ ও মর্যাদা, বেদনা ও অদম্যতা, মৃত্যু আর সেই ছোট্ট আনন্দের সময়, যা বেঁচে থাকার সাহস জোগায়। তাঁর তোলা ছবিগুলো শুধু ইমেজ নয়, সেগুলো ছিল গাজাবাসীর অবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম ও মানবিকতার গল্প। তিনি বিশ্বাস করতেন, ক্যামেরাই তাঁর শক্তিশালী অস্ত্র; যা ইতিহাসকে রক্ষা করবে, যখন গাজার বাস্তবতা বিশ্বের চোখ থেকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে। ফাতিমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু আসমা আবু সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ আরবকে বলেন, ‘ফাতিমা যাদের ছবি তুলত, তাদের সঙ্গে গভীর আবেগে যুক্ত হতো। সে নারীদের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলত যেন তারা তার মা। প্রতিটি শিশুকে দেখত নিজের সন্তানের মতো। তার সহমর্মিতা কৃত্রিম ছিল না– এটি ছিল একদম নিখাদ।’
যুদ্ধের মধ্যেও ফাতিমা স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর প্রেমিক আজিজের সঙ্গে বিয়ের পরিকল্পনা করছিলেন। ফাতিমার বন্ধুরা জানান, তিনি প্রেমকে যুদ্ধের দুঃখ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে দেখতেন। ফাতিমার বাগদত্তা আজিজ তাঁর কাজে উৎসাহ দিতেন। তারা পরের সপ্তাহে বিয়ে করার পরিকল্পনা করছিলেন। আজিজ এখন মর্মাহত। তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না ফাতিমা চলে গেছেন।
২০২৫ সালের ১৬ এপ্রিল ভোরে ইসরায়েলের একটি বিমান হামলায় ফাতিমার বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। এ হামলায় তিনি এবং তাঁর পাঁচ ভাইবোন নিহত হন। তাঁর বাবা-মা গুরুতর আহত হলেও বেঁচে গেছেন। তাঁর বাবা এখনও অজ্ঞান, তিনি জানেন না যে সন্তানরা মারা গেছেন। ফাতিমার মা শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ হলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ফাতিমার ১৮ বছর বয়সী ভাই জিহাদ মিসরে থাকেন। তিনি জানান, হামলার কিছুক্ষণ আগে তিনি ফাতিমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। জিহাদ বলেন, ‘আমরা খুশি ছিলাম, কারণ আমার অসুস্থ ভাই মুজাহিদ সুস্থ হয়ে উঠছিল, আর ফাতিমা (যার ডাকনাম ফাতুম) তার আসন্ন বিয়ের জন্য উপহার আর জিনিসপত্রের লিস্ট করছিল।’
ফোন রাখার দুই ঘণ্টা পর জিহাদ দেখলেন গাজা সিটির আল-তুফফাহ এলাকায় বিমান হামলার খবর। তিনি পরিবারের সদস্যদের ফোন করতে গিয়ে দেখলেন, কোনো ফোনই আর পাচ্ছেন না। পরে তাঁর চাচা জানান, পাঁচতলা ভবনটি ধ্বংস হয়ে গেছে। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছিল তাদের পরিবার। জিহাদের ছয় ভাইবোন মারা গেছেন এবং অন্যান্য আত্মীয়-প্রতিবেশী গুরুতর আহত।
জিহাদ জানান, ফাতিমা তাঁর মৃত্যু আগেই আঁচ করেছিলেন। দুই সপ্তাহ আগে আল-আরকাম স্কুলে হামলা হওয়ার পর ফোনে কাঁদতে কাঁদতে জিহাদকে বলছিলেন, ‘তুমি তোমার আর ভাইয়ের যত্ন নিও। আমার মনে হচ্ছে, গাজায় আমাদের সবাই মারা যাব। কারণ চারদিকে শুধু বোমাবর্ষণ আর ধ্বংসযজ্ঞ।’
ফাতিমা হাসসুনা শুধু একজন ফটো সাংবাদিক ছিলেন না। তিনি ছিলেন গাজার অদম্য কণ্ঠস্বর, যার কাজ বিশ্বকে দেখিয়েছিল ফিলিস্তিনিদের দুঃখ, সংগ্রাম ও অপরাজিত মানসিকতা। তাঁর এক সহকর্মী বলেন, ফাতিমা চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর তোলা ছবিগুলো চিরকাল গাজার ইতিহাস, বেদনা ও জয়ের সাক্ষী হয়ে থাকবে।
ফাতিমা হাসসুনার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।
তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই ও নিউ আরব