ভ্যাট বৃদ্ধির পদক্ষেপে সুবিবেচনা কোথায়?
Published: 12th, January 2025 GMT
শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক এমনভাবে বাড়ানো হয়েছে, যা কিছুটা আশ্চর্যজনক। এটা প্রধানত দুই কারণে। এক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারের কাছ থেকে এমন পদক্ষেপ অপ্রত্যাশিত। দুই, অর্থবছরের মধ্যভাগে এসে এত পণ্য ও সেবায় একযোগে কর বাড়ানোর এমনতর ঘটনা আর নেই বলেই জানা যাচ্ছে।
নতুন বছরের প্রথম দিনে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাসের খবরও ছিল হতাশার। অনেকে তবু আশা করেছিলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার হয়তো কিছু স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে অন্তত সংশোধনী আনবে। তেমন কিছুই করা হয়নি। যেমন ওষুধের দামও কিছুটা বাড়বে এ ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানোর ফলে। গত ক’বছরে দফায় দফায় বেশ কিছু ওষুধের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কিন্তু আলোচনা কম হয়নি। এটা কমিয়ে আনার সুযোগ থাকলে তা গ্রহণের ওপর বরং জোর দেওয়া হচ্ছিল। নতুন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবায় কোনো ধরনের উন্নতির খবরও অনুপস্থিত।
রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি খারাপ বটে; কারণও জানা। আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় দ্বিতীয় দফা বাড়িয়েও মনে হয় না সুফল মিলবে। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে আয়ের পরিস্থিতি ভালো নয়। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার না হলে আয় বাড়বেই-বা কীভাবে? তবে যথাযথভাবে আয়কর আদায়ে ব্যর্থতা এবং এ ক্ষেত্রে উভয় দিক থেকে দুর্নীতিও রয়ে গেছে। আশা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার আয়কর আদায়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে রাজস্ব বাড়াবে। এটা বৈষম্য কমানোর অঙ্গীকারের সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ হতো। বাস্তবে এর বদলে রাজস্ব ঘাটতি কমাতে প্রচলিত কাঠামো ধরেই এগিয়েছে সরকার।
রাজনৈতিক সরকারগুলোর আমলেও আমরা দেখতাম, সর্বসাধারণের ওপর প্রযোজ্য হয় এমন সব ক্ষেত্র থেকে সহজে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে চাইত সরকার। জনস্বার্থ বিবেচনায় না নিয়ে সরকারের অর্থ সংকট দূর করাই ছিল লক্ষ্য। হালে যেসব পণ্য ও সেবার ওপর কর বাড়ানো হলো, তাতে ‘কেবল মধ্যবিত্ত কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে’ বলে প্রচারের চেষ্টা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ব্যাপক জনসাধারণ আসবে এর আওতায়। গত পাঁচ মাসে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও না হয় কথা ছিল। প্রকৃতপক্ষে এটা আগের অবস্থাতেই রয়ে গেছে; কোনো কোনো মাসে ঘটছে অবনতি।
উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হলেও মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমে আসার কারণ নেই– নতুন গভর্নর এটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। এ অবস্থায় কেবল আহরণ বাড়ানোর তাগিদ থেকে শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক আরোপের যে পদক্ষেপ নেওয়া হলো, তাতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ার আশঙ্কা। এটা কমিয়ে আনার লক্ষ্যের কী হবে? গভর্নর বলেছিলেন, ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে এ ক্ষেত্রে স্পষ্ট উন্নত পরিলক্ষিত হবে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ মাস অতিক্রান্ত। কর বৃদ্ধির এমন পদক্ষেপের পর চলতি অর্থবছরের বাকি ছয় মাসেই-বা মূল্যস্ফীতি হ্রাস প্রক্রিয়া জোরদার করা হবে কীভাবে?
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী, ‘অধিকতর সংস্কারে’ যেতে হলে সরকার আগামী বছরের মধ্যভাগ পর্যন্তও থাকতে পারে। আর ‘অল্প সংস্কার’ করে নির্বাচনে গেলে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। দ্বিতীয় ক্ষেত্রেও সরকার আরও প্রায় ১২ মাস থাকবে। এ অবস্থায় নতুন বাজেট দিতে হবে তাকে। প্রশ্ন এসে যায়, তখনও কি এ ধরনের করের ওপর বেশি নির্ভর করবে সরকার? নাকি তা কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া হবে?
আমাদের হতাশাজনক কর-জিডিপি অনুপাত নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। এটা বাড়ানোর শর্তও রয়েছে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচিতে। সেটি পরিপালন করা গেলে সামগ্রিক সক্ষমতাও বাড়বে। প্রশ্ন হলো, কর-রাজস্ব বাড়ানো হবে কীভাবে? ভ্যাটের মতো ক্ষেত্রে তো সর্বসাধারণের ওপর চাপ গিয়ে পড়ে। আইএমএফ কিন্তু বলেনি– একই পণ্য বা সেবায় আরও ভ্যাট আরোপ করে রাজস্ব বাড়াও! আহরণ বাড়ানোর পদ্ধতিটা বেছে নিতে হয় সরকারকেই। আর এতে প্রকাশ পায় তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট আরোপের ঘটনায় বৈষম্য হ্রাসের দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু দেখা গেল না। কিছু ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে; এমনকি তিন গুণ! চলতি বাজেটে একবার বাড়ানোর পর একই ক্ষেত্রে নতুন করে কর আরোপের ঘটনাও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির শিকার মানুষের জীবনে এর অভিঘাত ভেবে দেখার ফুরসত কেন হলো না– বোধগম্য নয়।
সরকার আইএমএফের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতির চেয়ে কিছুটা বেশি ঋণ চাইছে। যে অর্থনীতি তারা হাতে পেয়েছে, সেটা সামলাতে এর প্রয়োজন রয়েছে হয়তো। এ অবস্থায় সংস্থাটি শর্ত পালনে আরও কঠোর হতে পারে। বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি এবং এখান থেকে উত্তরণের জটিলতাও তাদের না জানার কথা নয়। সেটা তাদের বোঝানোও যেত। এ সক্ষমতায় সরকারে ঘাটতি রয়েছে বলেও মনে হয় না।
দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকে আবার শোনা যাচ্ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার ‘পরিচালন ব্যয়’ কমাবে। বড় মাপে এডিপি কাটছাঁটের কথাও বলা হচ্ছিল। সত্যি বলতে, এডিপি বাস্তবায়নের সামর্থ্য এখন আরও কম। এ অবস্থায় এতটা অস্থির হয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ কেন নিতে হলো– সে প্রশ্নটিই বরং উঠবে বেশি করে। সরকার তার দায়দেনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়েছে বলে খবর রয়েছে। কিন্তু প্রশাসন পরিচালন ব্যয় কমাতে পারছে বলে মনে হয় না। বিগত সরকারের মতো মহার্ঘ ভাতা দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের খুশি রাখার প্রবণতাও লক্ষণীয়। উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সেটা প্রয়োজন হয়তো। কিন্তু দেশের সিংহভাগ কর্মজীবী তো বেসরকারি খাতে নিয়োজিত। এর মধ্যে বিরাটভাবে উপস্থিত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। এসব ক্ষেত্রে বেতন বা মজুরি বৃদ্ধির হার কি উল্লেখযোগ্য? তারা মূল্যস্ফীতির অভিঘাত মোকাবিলা করছে কীভাবে? শতাধিক পণ্য ও সেবায় কর বৃদ্ধির সর্বসাম্প্রতিক পদক্ষেপে এদের মনে প্রতিক্রিয়াই-বা কী?
ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোয় বিভিন্ন খাতে ব্যবসা সংকুচিত হওয়ার প্রক্রিয়া জোরদার হবে বলে ধারণা। করের চাপে পণ্য ও সেবার দাম বাড়লে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভোগ কমিয়ে চলতে চায়। এতে কমে যায় ‘কার্যকর চাহিদা’। তার প্রভাব পড়তে পারে অনেক পণ্য উৎপাদন ও সেবা সরবরাহে। যেমন বেকারি পণ্যের দাম আরও বাড়লে বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে এর চাহিদা কমার শঙ্কা। এ খাতে রপ্তানিও কমতে পারে। রেস্তোরাঁয় তিন গুণ ভ্যাট কার্যকর হলে কমে যাবে ভোক্তা। এ অবস্থায় ভ্যাটের আওতায় না থাকা স্ট্রিট ফুডের ব্যবসা বাড়লে একই খাতের দুই গ্রুপে বিরোধও হবে উপস্থিত। এদিকে আবাসিক হোটেলে ব্যয় বাড়লে ব্যাহত হবে ট্যুরিজম। আর সেলফোন সেবায় আরও কর বৃদ্ধি সব শ্রেণির মানুষকে ফেলবে সংকটে। সেলফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতা এতে আরও কমতে পারে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটেও প্রথমবারের মতো বসানো হয়েছে সম্পূরক শুল্ক। এক ক্ষেত্র থেকে আরেক ক্ষেত্রে গিয়ে ব্যয় সীমিত রাখার সুযোগও দেখা যাচ্ছে অনুপস্থিত! সেলফোন ও ইন্টারনেটনির্ভর ছোটখাটো ব্যবসায়িক উদ্যোগও কি এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না? বর্তমান কর্মসংস্থান পরিস্থিতিও কি এ ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত?
হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলামিস্ট
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদাবাজি ও মজুতদারি বন্ধ করতে না পারায় নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ সরকার
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধ ও মজুতদারি বা অযৈাক্তি মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম মোকাবিলা করতে পারেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাই নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সাহসী ও জরুরি পদক্ষেপ না নিলে মূল্যস্ফীতির হার কমানো কঠিন হবে।
আজ বুধবার ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৪-২৫: সংকটময় সময়ে প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ফাহমিদা বলেন, সিপিডির পর্যবেক্ষণে পেঁয়াজ, আলু, বেগুন, ডিম, রুই মাছ, হলুদ, গম, মসুর ডাল, চিনি, গরুর মাংস, রসুন, আদা, সয়াবিন তেল এবং পাম তেলসহ ১৪টি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খল বিশ্লেষণে দামের ওঠানামা এবং অদক্ষতার জন্য বেশ কিছু বাধা দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে, প্রাথমিক বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে মজুতদারি, কমিশন এজেন্ট বা গুদাম পরিচালনাকারীদের আধিপত্য, অপর্যাপ্ত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি পদ্ধতি, উচ্চ উপকরণ খরচ, নিম্নমানের সংরক্ষণ এবং পরিবহন সুবিধা এবং সামগ্রিক সরবরাহকে প্রভাবিত করে এমন অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, চালের বাজার ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত জটিল। সে কারণে সিপিডি চালের সরবরাহ শৃঙ্খলে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা নিরূপণের জন্য মাঠ পর্যায়ে একটি অনুসন্ধানমূলক জরিপ পরিচালনা করে, বিশেষ করে মাঝারি-পাইজাম চাল। যার লক্ষ্য ছিল প্রধানত দামের যে অস্থিরতা তার মূল কারণগুলো সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করা।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, চাল সরবরাহ ব্যবস্থায় অসংখ্য বাজার এজেন্ট রয়েছে। বাজার মূল্যের ওপর গুদাম মালিকদের বা অটো রাইস মিলারদের উল্লেখযোগ্য আধিপত্য লক্ষ্য করা যায়। ফলস্বরূপ ধান চাষীরা প্রায়শই সঠিক দাম পান না। কিন্তু ভোক্তারা অযৌক্তিকভাবে উচ্চ মূল্যের সম্মুখীন হন, যার ফলে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।
খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গে সিপিডি বলছে, বাংলাদেশে পূর্ববর্তী কর্তৃত্ববাদী সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতির মাধ্যমে একটি অকার্যকর অর্থনীতি রেখে গেছে, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ঠিক করতে হবে। বেশ কিছু খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলের বিশ্লেষণে মধ্যস্থতাকারীদের একটি জটিল নেটওয়ার্কের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
সিপিডি বলছে, অর্থনীতিতে মুল্যস্ফীতির চাপ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধির অনুমতি দিয়েছে এবং নীতি সুদহারও বৃদ্ধি করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উপর উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির বোঝা কমাতে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সরবরাহ-পক্ষীয় ব্যবস্থাও বাস্তবায়ন করেছে, যেমন ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশের মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি করা এবং ঢাকার ভেতরে ও বাইরে ন্যায্য মূল্যের বাজার প্রতিষ্ঠা করা। তবে দুঃখের বিষয় হলো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে চাঁদাবাজি, মজুদদারি বা অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম মোকাবেলায় উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তাই মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলি এখনও পর্যন্ত বাজারে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।
সংস্থাটি আরও বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার যদি প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সাহসী এবং জরুরি পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে মূল্যস্ফীতির হার কমানো কঠিন হবে।
রাজস্ব প্রসঙ্গে সিপিডি বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে ২০২৫ অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত মোট রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩.৭ শতাংশ যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময় ছিল ১৭.৭ শতাংশ অর্থাৎ এখানে উল্লেখযোগ্য অবনতি দেখা গেছে।
২০২৫ অর্থবছরের মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থবছরের বাকি সময় ৪৫.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে যা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। সামগ্রিকভাবে কর রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক। কর রাজস্বের দুটি উৎসেই (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত ও বহির্ভূত) একই চিত্র দেখা গেছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ওই সময়ে মূসক এবং সম্পূরক শুল্ক আহরণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। জুলাই-আগস্টের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে শ্লথগতি এর বড় কারণ। কর রাজস্ব আহরণের পরিস্থিতি বহুলাংশেই সরকারকে মূসক এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিতে ধাবিত করেছে। তবে আইএমএফের শর্তপূরণের চাপও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান উচ্চ-মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিতে এ ধরনের উদ্যোগ মোটেই কাম্য নয়। কারণ পরোক্ষ কর সকল ধরনের আয়ের মানুষের জীবনেই প্রভাব ফেলে।