রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে মানুষের আবেগ-উচ্ছ্বাস থাকবে। এটি দোষের কিছু নয়। কিন্তু সেই আবেগ প্রদর্শন যদি অসংখ্য মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়; তবে সেটি বিবেক দিয়ে ভাবা দরকার। জনস্বার্থবিরোধী যে কোনো আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সড়ক অবরোধ করে প্রটোকল দেওয়া রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
একজন রাজনীতিবিদ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিভিন্ন প্রয়োজনে দেশ-বিদেশ সফর করতেই পারেন। কিন্তু সেটিকে কেন্দ্র করে যখন মানুষের ভোগান্তি বাড়ে, তখন তা অত্যন্ত হতাশার। যেমন ৭ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাঁর এই যাত্রা দেশের রাজনীতিতে যেমন আলোচিত ছিল, তেমনি নেতাকর্মীর মধ্যেও খুব আনন্দের উপলক্ষ। ফলে তাঁকে বিদায় জানাতে এয়ারপোর্ট এলাকায় ছিল নেতাকর্মীর ভিড়। ওইদিন সন্ধ্যার পর থেকেই এয়ারপোর্টমুখী সড়কে যান চলাচলে স্থবিরতা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে গাড়ির চাকা থেমে যায়। এতে প্রায় চার ঘণ্টার যানজটে পড়েন যাত্রীরা। এর প্রভাব পড়ে প্রায় পুরো ঢাকার সড়কপথে। দীর্ঘদিন পর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর এবারের বিদেশযাত্রা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভ্রমণের রাজনৈতিক-কূটনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়।
এ অবস্থায় কর্মীদের উচিত নেতার সুস্থতা কামনায় দোয়া করা। এর চেয়ে বড় সমর্থন আর কী হতে পারে? কিন্তু দোয়ার পরিবর্তে তারা ঢাকার ব্যস্ততম সড়কগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। এতে রাস্তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে পথচারীদের ভয়াবহ ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।
দেশে এ ধরনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু আমরা কেন এ ধরনের আচরণ যুগের পর যুগ ধরে রাখব? এমনিতেই ঢাকার ট্রাফিকের চাপ অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। এ ধরনের যানজটে বহু মুমূর্ষু রোগী অ্যাম্বুলেন্সে আটকে থাকেন। কতজনের জরুরি মিটিং মিস হয়। আমি নিজেও এ রকম পরিস্থিতিতে একটা অনুষ্ঠানে যেতে পারিনি; মাঝপথ থেকে ফিরে এসেছি। ৩০ মিনিটের রাস্তায় ৩ ঘণ্টা আটকে ছিলাম।
আমরা যারা ঢাকায় বসবাস করি, তাদের প্রতিনিয়ত এই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ‘ভিআইপি পাস’-এর নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে কাটাতে হয়। নাগরিকদের ভোগান্তি দেওয়ার এই সংস্কৃতি কি পৃথিবীর কোনো দেশে আছে?
লাখ লাখ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে প্রটোকল দেওয়ার রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির পরিবর্তন হতে হবে। আমাদেরও এই অপসংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। সব রাজনৈতিক সংগঠনকে এমন কার্যকলাপ পরিহার করা অত্যন্ত আবশ্যক।
একটা ঘটনা বলে শেষ করব। ছাত্রজীবনে যখন আমরা হলে থাকতাম, তখন মনে মনে শেখ হাসিনার পতন চাইতাম। কেন জানেন? বড় কোনো কারণে নয়। উচ্চ শব্দে যাতে মাইক বাজানো বন্ধ হয়। দলের কিছু কর্মী ক্যাম্পাসে পুরো মাস মাইক বাজাত। ৭ মার্চের ভাষণ আমরা প্রত্যেকেই পছন্দ করি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বিরতিহীনভাবে উচ্চ স্বরে আপনি তা শুনতে বাধ্য করবেন। আমাদের ক্যাম্পাস ছিল ১৭৫ একরের ছোট্ট গণ্ডি। সেখানে অন্তত ১০টি মাইক বাজানো হতো। সবই উচ্চ স্বরে। আবাসিক হলগুলোতে কে অসুস্থ কিংবা কার পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে, তা দেখার সময় যেন কারও নেই।
সবচেয়ে মুশকিলের কথা, এসব নিয়ে আপনি কিছু বলতেও পারবেন না। বললেই বিপদ। মামলার আসামিও হতে পারেন! এমন পরিস্থিতিতে একজন দুর্বল কল্পনাবিলাসীর পক্ষে মনে মনে মহাপ্রতাপশালীর পতন চাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। ‘অ্যান্টি কনসেন্ট’ কত ক্ষুদ্র ভুলের কারণে উৎপাদন হতে পারে– রাজনৈতিক দলগুলোকে সে কথা মনে করিয়ে দিলাম আর কি। আশা করি, তারা এ বিষয়কে গুরুত্ব দেবে।
অনি আতিকুর রহমান: সহসম্পাদক, সমকাল
atikbanglaiu@gmail.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাবার ঠিকাদারির লাইসেন্স ছিল, জানিয়ে ক্ষমা চাইলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে ‘বাবার ভুলের জন্য’ ক্ষমা চেয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি আজ বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে ক্ষমা চান।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স থাকার বিষয়টি জানিয়ে গতকাল বুধবার রাতে ফেসবুকে পোস্ট দেন এক গণমাধ্যম কর্মী। তিনি বিষয়টির সত্যাসত্য জানতে চান আসিফ মাহমুদের কাছে। আসিফ মাহমুদ খোঁজ করে জানান যে, তাঁর বাবার লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়টি সঠিক। আর বিষয়টি তাঁকে জানান বলেও ওই গণমাধ্যম কর্মী তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন। এরপরই আজকে আসিফ মাহমুদ বিষয়টি নিয়ে পোস্ট দিলেন। সেটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:
‘প্রথমেই আমার বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
গতকাল রাত ৯ টার দিকে একজন সাংবাদিক কল দিয়ে আমার বাবার নামে ইস্যুকৃত ঠিকাদারি লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে চাইলেন। বাবার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হলাম তিনি জেলা পর্যায়ের (জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার এর কার্যালয় থেকে ইস্যুকৃত) একটি লাইসেন্স করেছেন। বিষয়টি উক্ত সাংবাদিককে নিশ্চিত করলাম। তিনি পোস্ট করলেন, নিউজও হলো গণমাধ্যমে। নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে তাই ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজনবোধ করলাম।
আমার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুবিধার্থে বাবার পরিচয় ব্যবহার করার জন্য বাবাকে লাইসেন্স করার পরামর্শ দেন। বাবাও তার কথায় জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন। রাষ্ট্রের যেকোন ব্যক্তি ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে যেকোন লাইসেন্স করতেই পারে। তবে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়ানো স্পষ্টভাবেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। বিষয়টি বোঝানোর পর আজ বাবার আবেদনের প্রেক্ষিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।
বাবা হয়তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের বিষয়টি বুঝতে পারেন নি, সেজন্য বাবার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
উল্লেখ্য, মধ্যবর্তী সময়ে উক্ত লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো কাজের জন্য আবেদন করা হয়নি।’