ক্যালেন্ডারে জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি
Published: 12th, January 2025 GMT
জুলাই বিপ্লব কেবল একটি আন্দোলন ছিল না, এটি বৈষম্যের বিরুদ্ধে গণজাগরণ। দেশকে ভালোবেসে ধর্ম, বর্ণ, দল নির্বিশেষে এই সংগ্রাম সমাজে একটি নতুন আশার সৃষ্টি করেছে। এর মাধ্যমে জনগণের মাঝে সাহস ও দৃঢ়তা বেড়েছে। চব্বিশের অর্জিত এই সফলতা পঁচিশ সালজুড়ে স্মরণ করতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ক্যালেন্ডারের/বর্ষ পঞ্জিকার প্রতিটি পাতায় স্থান পেয়েছে ৩৬ শে জুলাইয়ের বিভিন্ন সময়ের ছবি।
বর্ষ পঞ্জিকার শুরুর পাতায় তুলে ধরা হয়েছে জুলাই বিপ্লবের শুরুর সংগ্রাম এবং শেষ করা হয়েছে স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের চিত্র দিয়ে। সেখানে আছে শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের চিত্র, প্রতিবাদী চেতনার উন্মোচন, সারাদেশের দেয়াল অঙ্কন থেকে কিছু সেরা চিত্র স্থান পেয়েছে বর্ষ পঞ্জিকায়। আরও আছে নারী শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। বুক ভরা সাহস ও প্রাণ ভরা দেশপ্রেম নিয়ে
চলেছে সংগ্রামের ৩৬ দিন। পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চলেছে শিক্ষার্থীদের সংগ্রাম। বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচারিত হয়েছে সেই সংগ্রামের চিত্রগুলো। ঢাকার মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, ব্রিজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে গ্রাফিতি করেছিল শিক্ষার্থীরা। বর্ষ পঞ্জিকায় মে মাসে/ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের পাতায় রয়েছে শহীদ মুগ্ধর গ্রাফিতির চিত্র যেখানে লেখা ‘পানি
লাগবে কারো? পানি, পানি, পানি’। পরের পাতায় রয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার চিত্র। সঙ্গেই রয়েছে পুলিশের গাড়িতে শিক্ষার্থীর লাশ ঝুলানোর চিত্র।
জুলাই মাসের পাতায় রয়েছে রিকশায় করে শিক্ষার্থীর লাশ নেওয়ার চিত্র। বিপরীতে রয়েছে শরীরে শিহরণ জাগানো শহীদ আবু সাঈদের সেই ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’ ভঙ্গিমার গ্রাফিতি। আগস্টের পাতায় রয়েছে ৫ আগস্টের সেরা ছবিটি। ২৪ শের স্বাধীনতার অর্জনে সেদিন বেরিয়ে এসেছিল ছাত্র-জনতা এবং পেশাজীবীরা।
জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম জানান, ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় অধ্যায়। এই বিপ্লবে শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছে যে ঐক্য ও সাহসিক সংগ্রাম দিয়ে পুরো দেশকে বদলে দেওয়া সম্ভব। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ময়মনসিংহের ছাত্র-জনতা এবং পেশাজীবীরা এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। লাখো শহীদের
ত্যাগ ও বীরত্বগাথা এক ফ্রেমে তুলে ধরা কখনোই সম্ভব নয়। তবুও, আমরা চেষ্টা করেছি জুলাই বিপ্লবের স্মরণীয় ঘটনাগুলোকে একটি ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে, যাতে পুরো বছরজুড়ে জুলাই বিপ্লব মানুষের স্মৃতিতে গেঁথে থাকে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে তামাকের ব্যবহার কমেছে
বাংলাদেশে গত ১৩ বছরে তামাকের ব্যবহার কমেছে ৭ শতাংশ। তামাক নিয়ন্ত্রণে এমন অগ্রগতি থাকলেও ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এখনও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
আজ বুধবার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের প্রবণতা ও পূর্বাভাস’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন বিএমইউর জার্নালের এক্সিকিউটিভ এডিটর অধ্যাপক ড. এম মোস্তফা জামান। সভাপতিত্ব করেন বিএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম-সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য) মো. মামুনুর রশিদ।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২৫-৬৯ বছর বয়সী বাংলাদেশীদের তামাক ব্যবহার (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ২০০৯ সালে ৫৪ শতাংশ থেকে কমে ২০২২ সালে ৪৭ শতাংশে নেমেছে। ধূমপানের হার ২৭ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশ এ মেনেছে। ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার ৩৬ শতাংশ থেকে ৩১ শতাংশ। লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে পুরুষদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হ্রাস নারীদের তুলনায় কিছুটা বেশি। শহর ও গ্রামীণ এলাকায় তামাক ব্যবহার কমলেও শহুরে অঞ্চলে হ্রাসের হার বেশি স্পষ্ট।
এম মোস্তফা জামান বলেন, বর্তমান যে হারে তামাক ব্যবহার কমছে, এই গতিতে এগোলে ২০৩০ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমানোর বৈশ্বিক লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়। তথ্য বিশ্লেষণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি (অসংক্রামক রোগ) প্রতিরোধ রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে তামাক ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বর্তমান নীতিমালার গতি দ্বিগুণ করতে হবে।
গবেষণায় সুপারিশ তুলে ধরে তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি জোরদার করে বর্তমান হ্রাসের হার ত্বরান্বিত করতে হবে। ব্যবহারিক গবেষণা পরিচালনা করা প্রয়োজন, বিশেষ করে নীতি ও আইনের দিকে বিশেষ নজর দিয়ে, যাতে অপর্যাপ্ত হ্রাসের কারণ চিহ্নিত করা যায়।
ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, তামাক ব্যবহার বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির জন্য দায়ী এবং উদ্বেগজনক। এই ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে গণমানুষকে সম্পৃক্ত ও সচেতন করতে হবে। গণমাধ্যম এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তামাক ব্যবহারের মাত্রা ও ঝুঁকি শহর ও গ্রাম পর্যায়ে আলাদাভাবে তুলে ধরা জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্যে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাক ব্যবহার হ্রাসে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসনীয়, তবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে আরও কঠোর নীতি ও সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।