দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার চাপ ও অনেকদিনের আক্ষেপ ব্যাচ ট্যুরের– তাই পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই ব্যাচের একাংশ মিলে সিদ্ধান্ত নেন এবার একটা সফর হওয়া বাঞ্ছনীয়।
একসঙ্গে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত হলেও বিপত্তি বাধে ভ্রমণের স্থান নির্বাচনে ও ট্যুর কতদিনের হবে তা নিয়ে। কেউ যেতে চান এক দিনের কেউবা কয়েকদিনের, কারও মনের ইচ্ছে সমুদ্র কেউবা পাহাড় দেখতে। অনেক জল্পনা-কল্পনা ও আলোচনার মাধ্যমে অবশেষে নির্ধারণ হয় আমরা সমুদ্র দেখতে যাব। বাংলাদেশে সমুদ্র দেখতে যাওয়ার কথা বললেই সবার মনে একটা জায়গার নামই আসে– তা হলো কক্সবাজার। ভ্রমণের স্থান ঠিক হয় পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার আর সেখানে আমরা দু’দিন এবং এক রাত যাপন করব। ভ্রমণ আয়োজনের সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় আমাদের মোহাম্মদ রোহান রাব্বী, সে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে রিসোর্ট, খাওয়ার হোটেল, গাড়ির ব্যবস্থাসহ পুরো ভ্রমণের পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলে। সেই অনুযায়ী সবার মধ্যে সমুদ্রবিলাসের আমেজ তৈরি হয়।
আমরা মোট ১৮ জন একত্র হলে বাস কুমিল্লা থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেয়। বাসে উঠেই সবাই হৈহুল্লোড়ে মেতে ওঠে এবং ভোর ৫টার দিকে আমাদের সবাইকে গাড়ি নামিয়ে দেয় লাবণী পয়েন্টের কাছেই। ঘুম ঘুম চোখে আগে থেকে বুকিং করা হোটেলে সবাই চলে আসি।
সবাই রুমে উঠে ফ্রেশ হয়ে সকালের খাবার খাওয়ার আগেই ঘুরতে চলে যাই কক্সবাজারের লাবণী পয়েন্টের সমুদ্র পাড়ে। সমুদ্রের পাশে গিয়ে ডুবে যাই তার ঢেউয়ের কলতানে। সমুদ্র তরঙ্গের সাহায্যে বিমোহিত করে তুলছে একঝাঁক ভ্রমণপিপাসুদের। এরপর এসে সকালের খাওয়া সেরে একটু রেস্ট নিয়ে এবার নেমে পড়ি সমুদ্র স্নানে। সমুদ্রের ঢেউয়ের সব বন্ধুরা তাল মিলিয়ে দাপাদাপি করি প্রায় ২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে। দুপুরের খাবারের পর পুনরায় সমুদ্রে নেমে পড়ি। রৌদ্র ক্ষয়িষ্ণু দুপুরে সমুদ্রে তখন জোয়ার এসেছে, পানির সঙ্গে ঢেউয়ের উচ্চতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমরা বেশিদূর এগিয়ে যাইনি। একসময় সূর্য ঢলে পড়ে তলিয়ে যেতে থাকে সমুদ্রের অতল গহ্বরে। আমরা সাক্ষী হই দিনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তের। সূর্য ডুবে গেলে একে একে সবাই চলে আসি রুমে। ফ্রেশ হয়ে সবাই কৃত্রিম ফিশ অ্যাকুয়ারিয়াম দেখতে গেলেও আমি, মারুফ ও নাইম বেরিয়ে পড়ি রাতের কক্সবাজার দেখতে। বাজারে বিভিন্ন জিনিস দেখতে দেখতে হেঁটেই চলে আসি সুগন্ধা বিচ পয়েন্টে; চাঁদের আলোয় সমুদ্রসৈকতের দৃশ্য উপভোগ করি।
পরের দিন সকালে উঠেই সমুদ্রপারে ঘুরতে চলে যাই– যদিও আমার ঘুম ভাঙতে দেরি হয়। সকালের খাওয়া সেরে আবারও বেলাভূমিতে চলে যাই সবাই। কেউ ঝাউবনে, কেউ সৈকতের সামনে ছবি তুলে ও চাঁদের গাড়ি নিয়ে দুপুর ১২টায় যাত্রা শুরু করার কথা থাকলেও, গাড়ি না আসায় দেরি হয় যায়। পরে আবার অন্য চাঁদের গাড়ি ঠিক করে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে পড়ি আমরা। বিচে গিয়ে আবারও গাড়ি থেকে নেমে কাঠের সেতু ও ঝাউবন পেরিয়ে সমুদ্রপারে গিয়ে পৌঁছে যাই; সেখানে কয়েকজন প্যারাসেইলিং করেন। এক পাশে সমুদ্রতট, অপর পাশে লোকালয় ও ঝাউবন আমার কাছে মনে হয় সমুদ্রতটের বিভিন্ন জায়গা থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য একেবারে যেন ভিন্ন।
আমি আগে কিছু কিনলেও আবারও রাতের কক্সবাজার দেখার লোভ সামলাতে পারিনি। তাই বেরিয়ে পড়ি। রাতের ফেরার টিকিট আগে
থেকেই ঠিক করা ছিল; তাই সবাই সবকিছু নিয়ে যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে যাই বাসস্ট্যান্ডে। ভোরবেলায় চোখ মেলে দেখি কুমিল্লা শহরে পৌঁছে গেছে বাস। সবাই নেমে যার যার গন্তব্যে চলে যাই। শেষ হয় কাঙ্ক্ষিত ট্যুর।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সামারিক শক্তিতে মিয়ানমারের চেয়ে ২ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ
চলতি বছর সামরিক শক্তির দিক থেকে মিয়ানমারের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি সপ্তাহে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার প্রকাশিত সূচকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট। সেনাবাহিনীর আকার, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর শক্তিকেও বিবেচনা করা হয়েছে সমীক্ষায়।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, এরপরে পরে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু শক্তিধর হলেও পাকিস্তানের অবস্থান ১২ নম্বরে। তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ৩৫তম অবস্থানে। বাংলাদেশের আগে রয়েছে উত্তর কোরিয়া ও আর্জেন্টিনা। আর বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার রয়েছে ৩৭তম অবস্থানে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৬১ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে মোট সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৭ হাজার ৪০০ সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫ হাজার ১০০ সেনা।
অন্যদিকে, মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যা ৫ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। মিয়ানমারের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার। মিয়ানমারের রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে ২০ হাজার। দেশটির বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৫ হাজার সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ১৬ হাজার সেনা।
ঢাকা/শাহেদ