জীবনচক্রে স্মার্টফোন এখন যেন অবিচ্ছেদ্য সহচর। নিজের যত্ন ভুলে অনেকে মনোযোগী যন্ত্রের শরীরের সুরক্ষায়। কিছু ছোট্ট বিভ্রান্তি তবুও প্রশ্ন জাগায় প্রতিদিন। সদুত্তরে নিশ্চিত হবে স্বস্তি। জানা-অজানা কিছু ভ্রান্তি দূর হোক। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
ক্যামেরা খারাপ হয় যে কারণে
অনেকের ধারণা, নতুন মডেলের ফোন এলে নির্মাতা সফটওয়্যার আপডেটে তাগিদ দিয়ে পুরোনো মডেলের ফোনের ক্যামেরা খারাপ করে দেন। অভিযোগটা ঢালাওভাবে সত্য নয়। স্মার্টফোনের ক্যামেরার
৮০ শতাংশই প্লাস্টিক পদার্থে ও উপাদানে নির্মিত।
ঋতুবদলের সঙ্গে রোদ-বৃষ্টি-তাপে ক্যামেরার প্লাস্টিকের কয়েকটি অংশের গুণগতমান খারাপ হতে থাকে, যা স্বাভাবিক নিয়মেই হয়। তাই স্মার্টফোন কেনার পর শুরুতে যেমন ছবি পাওয়া যায়, সময়ের ব্যবধানে সেই ছবির দৃশ্যায়ন খারাপ হয়ে যায়।
রাতভর চার্জে ক্ষতি
সারারাত ফোন চার্জ দিলে ব্যাটারি খারাপ হয়ে যায়– এমন ধারণা কয়েক বছর আগে সত্যি ছিল। কিন্তু এখনকার স্মার্টফোনের ব্যাটারি, ব্যবহৃত সফটওয়্যার এতটাই মানোন্নত ও স্বয়ংক্রিয় যে পূর্ণ চার্জ হলে ডিভাইসটি নিজে থেকেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আগের সময়ের ব্যাটারি কিন্তু পূর্ণ চার্জ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নির্ধারণ করতে পারত না। তাই নিজে চার্জ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারত না। ফলে অতিরিক্ত চার্জের কারণে কিছুদিন পরপর ব্যাটারি সমস্যা দেখা দিত।
ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ কি বন্ধ
চলতি সময়ের সবকটি স্মার্টফোন সত্যিকার অর্থেই স্মার্ট আচরণ করে; মাল্টিটাস্কিং পরিষেবা নিশ্চিত করে। ডিভাইস স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানে, ঠিক কতগুলো অ্যাপ্লিকেশন সচল রাখলে ফোনের ব্যাটারি নিঃশেষ হবে না; বাড়তি চাপ পড়বে না র্যামের ওপর। ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করার পারদর্শী হিসেবেই এখনকার স্মার্টফোন ডিজাইন করা হয়। যদি ডিভাইসের সবকটি অ্যাপ্লিকেশন বারবার বন্ধ করা হয়, তা হলে পরে সেই অ্যাপ্লিকেশনটা ফের খুলতে গেলে ফোনকে তুলনামূলক বেশি ব্যাটারি খরচ করতে হয়। ব্যাকগ্রাউন্ডে বিল্টইন অ্যাপ্লিকেশন
না বুঝে বন্ধ করা উচিত নয়।
নেটওয়ার্ক আইকন
নিজের ব্যবহৃত স্মার্টফোনের ডান দিকের ওপরের কোণে মোবাইল নেটওয়ার্কের আইকন দৃশ্যমান হয়। সেখানে কয়েকটি টাওয়ারের চিহ্ন থাকে। টাওয়ার সংখ্যা বা নেটওয়ার্ক সিগন্যালের লাইন যত বেশি দৃশ্যমান হয়, ফোনে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল ততটা জোরালো হয়। কিন্তু সবকটি সিগন্যাল থাকা মানেই কলের মান ভালো হবে বা কলড্রপ হবে না– এমন ধারণা কিন্তু সঠিক নয়। হতেই পারে নিজের অবস্থানরত এলাকায় নেটওয়ার্ক শক্তিশালী; কিন্তু গুণমান ভালো নয়। সিগন্যাল হয়তো সবটাই আছে, কিন্তু সিগন্যালের চারপাশে গ্রাহক সংখ্যা বেশি থাকার কারণে কলের মান স্বাভাবিকের চেয়ে খারাপ হতে পারে।
গরম হলে ব্যাটারি খারাপ হয়
এ ধারণা এখন পুরোপুরি সত্য নয়। ডিভাইসের ক্যামেরা দীর্ঘ সময় সচল রাখলে, চার্জে রাখলে বা যদি দীর্ঘ সময় ধরে গেম খেলা হয়, তা হলে ফোন গরম হবে– সেটাই স্বাভাবিক। অবশ্য এতে ফোনের কোনো ক্ষতি হয় না। স্মার্টফোনের সবকটি যন্ত্র এমনভাবে তৈরি যেন সেগুলো ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট অবধি গরম সহ্য করতে পারে।
তাপ ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের থেকে বেশি গরম হলে ফোন ব্যবহার কিছুক্ষণ বন্ধ রাখাই শ্রেয়।
আইপি রেটিং মানেই কি ওয়াটারপ্রুফ?
ধারণাটা অনেককে প্রায়ই বিপদে ফেলে। কারণ অনেক নির্মাতাই পানি, ধুলা-ময়লা প্রবেশে ফোন ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার কোনো বিক্রয়োত্তর পরিষেবা দেয় না। আইপি রেটিং ফোনকে পানির হাত থেকে কিছুটা সুরক্ষা দেয়, ধুলা-ময়লার হাত থেকেও কিছুটা মুক্ত রাখে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন– পানি যদি লবণাক্ত হয়, সে ক্ষেত্রে পানি ফোনের ক্ষতি করার সামর্থ্য রাখে। আইপি রেটিং ঘরানার ফোনে পরীক্ষা হয় শুধু বিশুদ্ধ পানিতে। তাই আইপি রেটিংয়ে পুরোপুরি ভরসা না করে ফোনকে যথাসম্ভব পানি ও ধুলা-ময়লা থেকে নিরাপদে রাখতে হবে।
ফাস্ট চার্জিং ক্ষতির কারণ!
সময়ের প্রায় সব স্মার্টফোনই ফাস্ট চার্জিং সুবিধা দেয়, কিন্তু তা সব সময় না। ফাস্ট চার্জিং সুবিধা যেসব ফোনে থাকে, ওই ডিভাইসের ব্যাটারি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। ব্যাটারিকে আলাদা আলাদা চার্জ করার ফলে দ্বিগুণ গতিবেগে চার্জ দেওয়া সম্ভব হয়। সে ক্ষেত্রে ব্যাটারির স্বাস্থ্যের ওপর খুব বেশি প্রভাব পড়ে না। কিন্তু চার্জিং স্পিড যদি ১০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে ব্যাটারি দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।
চার্জ হবে পাওয়ার ব্যাংকে
অনেকে সহজ হিসাবে অভ্যস্ত। ফোনের ব্যাটারি যদি
৫ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার হয় আর পাওয়ার ব্যাংক যদি ২০ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার হয়, তখন সাধারণ হিসাবে ধরে নিই ওই পাওয়ার ব্যাংক দিয়ে ৫ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারিকে অন্তত চারবার পূর্ণ চার্জ করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে তিনবার চার্জ করার পরই পাওয়ার ব্যাংকের ব্যাটারি ফুরিয়ে যায়। পাওয়ার ব্যাংক থেকে তারের মাধ্যমে চার্জ ট্রান্সফার করতে, পাওয়ার ব্যাংকের ভেতরের চিপ চালাতে, পাওয়ার ব্যাংকের আলোর প্রয়োজন ছাড়াও কয়েকটি অভ্যন্তরীণ কাজে চার্জ ক্ষয় হয়। সেই অর্থে ২০ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাকআপ পাওয়ার ব্যাংক থেকে নিশ্চিত হয় না।
ঠান্ডায় কী ক্ষতি হয়
সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই, অতিরিক্ত ঠান্ডা ফোনের স্ক্রিন ও ব্যাটারির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই যেখানে শূন্যের থেকেও কম তাপমাত্রা, সেখানে ফোন শরীরের কাছাকাছি রাখার অভ্যাস জরুরি। কথা বলার সময় হেডসেট ব্যবহার করাই শ্রেয়।
ব্লুটুথ ও ওয়াই-ফাই
সাধারণের প্রচলিত ধারণা, ওয়াই-ফাই ও ব্লুটুথ চালু রাখলে ফোনের ব্যাটারি দ্রুত ফুরিয়ে যায়। কিন্তু বর্তমান সময়ের স্মার্টফোনে ব্লুটুথ ও ওয়াই-ফাই পদ্ধতিতে কোনো অ্যাকটিভ সংযোগ চালু না থাকলে ব্যাটারির কোনো খরচই হয় না। ওয়াই-ফাই বা ব্লুটুথ চালু রাখলে কোনো ক্ষতি নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত না ফোনের কিছু ফিচার ব্যবহার করা হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে তামাকের ব্যবহার কমেছে
বাংলাদেশে গত ১৩ বছরে তামাকের ব্যবহার কমেছে ৭ শতাংশ। তামাক নিয়ন্ত্রণে এমন অগ্রগতি থাকলেও ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এখনও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
আজ বুধবার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের প্রবণতা ও পূর্বাভাস’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন বিএমইউর জার্নালের এক্সিকিউটিভ এডিটর অধ্যাপক ড. এম মোস্তফা জামান। সভাপতিত্ব করেন বিএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম-সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য) মো. মামুনুর রশিদ।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২৫-৬৯ বছর বয়সী বাংলাদেশীদের তামাক ব্যবহার (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ২০০৯ সালে ৫৪ শতাংশ থেকে কমে ২০২২ সালে ৪৭ শতাংশে নেমেছে। ধূমপানের হার ২৭ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশ এ মেনেছে। ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার ৩৬ শতাংশ থেকে ৩১ শতাংশ। লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে পুরুষদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হ্রাস নারীদের তুলনায় কিছুটা বেশি। শহর ও গ্রামীণ এলাকায় তামাক ব্যবহার কমলেও শহুরে অঞ্চলে হ্রাসের হার বেশি স্পষ্ট।
এম মোস্তফা জামান বলেন, বর্তমান যে হারে তামাক ব্যবহার কমছে, এই গতিতে এগোলে ২০৩০ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমানোর বৈশ্বিক লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়। তথ্য বিশ্লেষণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি (অসংক্রামক রোগ) প্রতিরোধ রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে তামাক ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বর্তমান নীতিমালার গতি দ্বিগুণ করতে হবে।
গবেষণায় সুপারিশ তুলে ধরে তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি জোরদার করে বর্তমান হ্রাসের হার ত্বরান্বিত করতে হবে। ব্যবহারিক গবেষণা পরিচালনা করা প্রয়োজন, বিশেষ করে নীতি ও আইনের দিকে বিশেষ নজর দিয়ে, যাতে অপর্যাপ্ত হ্রাসের কারণ চিহ্নিত করা যায়।
ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, তামাক ব্যবহার বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির জন্য দায়ী এবং উদ্বেগজনক। এই ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে গণমানুষকে সম্পৃক্ত ও সচেতন করতে হবে। গণমাধ্যম এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তামাক ব্যবহারের মাত্রা ও ঝুঁকি শহর ও গ্রাম পর্যায়ে আলাদাভাবে তুলে ধরা জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্যে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাক ব্যবহার হ্রাসে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসনীয়, তবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে আরও কঠোর নীতি ও সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।