গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চাঁদা না পেয়ে বিদ্যালয় থেকে ধরে এনে শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা রাশেদুল ইসলাম রনির বিরুদ্ধে। রোববার সকালে উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড়ের বঙ্গবন্ধু সরকারি হাইস্কুলের ফটকে বাণিজ্য বিভাগের সহকারী শিক্ষক বশির উদ্দিনকে মারধর করা হয়।

এ সময় তাঁকে রক্ষা করতে গেলে রিজভি আহম্মেদ রাজিব নামে বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীকেও জখম করা হয়। জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রনিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শিক্ষক বশির উদ্দিন বলেন, ‘সকালে যুবদল নেতা রনির নেতৃত্বে ৭-৮ জন আমার অফিস কক্ষে আসেন। তারা টেনেহিঁচড়ে স্কুলের ফটকে নিয়ে কিল, ঘুসি ও লাথি মারতে থাকেন। প্রাক্তন শিক্ষার্থী রিজভি রক্ষায় এলে তাঁকেও জখম করা হয়। পরে সহকর্মীরা এলে তারা পালিয়ে যান। আমি হামলাকারীদের বিচার চাই।’ একই অভিযোগ করেন আহত রাকিব।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার বলেন, ‘রনির নেতৃত্বে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন আহমেদ, যুবদল কর্মী রাকিব হাসান, তাজিদ মিয়াসহ কয়েকজন স্কুলে  ঢুকে বশির উদ্দিনকে তুলে নিয়ে যায়। আমরা হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রনি বলেন, ‘শিক্ষক বশির উদ্দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ দিলেও সঠিকভাবে তদন্ত করেনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পরে আরেক অভিযোগে তদন্ত কমিটি হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘মারধরের সঙ্গে আমি জড়িত নই। কেউ হয়ত আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। চাঁদা দাবির অভিযোগও ভিত্তিহীন।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর যুবদল নেতা রনির নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সমন্বয়ক পরিচয়ে উপজেলায় সক্রিয় হন। তারা আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু সরকারি হাইস্কুলে গিয়ে সাদা কাগজে সই নিয়ে শিক্ষক বশির উদ্দিনকে শারীরিক ও মানসিক নিযার্তন শেষে বের করে দেন। 

এ ঘটনায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন বশির। পরে তিন লাখ টাকা চাঁদা দিলে ক্লাস নিতে বাধা দেবে না জানান রনি। বশির রাজি না হলে রনি ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, শিক্ষক বশির আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও স্কুলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত।

ইউএনওর নির্দেশে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত করে বশিরের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা নেই বলে প্রতিবেদন দেন। এর পর গত সপ্তাহে বশির ক্লাসে ফেরেন। বিষয়টি জানতে পেরে রনি আবারও স্বাক্ষরহীন লিখিত অভিযোগ ইউএনওকে দেন। উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন। তদন্ত চলাকালীন রোববার রনি দলবল নিয়ে শিক্ষককে মারধর করলেন।

উপজেলা শিক্ষক-কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোখলেচুর রহমান, পৌর মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সামছুল আলম ও সাধারণ  সম্পাদক নাজমুল ইসলাম দ্রুত যুবদল নেতা রনিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।

জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান বলেন, ‘শিক্ষককে মারধরে সংগঠনের কেউ জড়িত প্রমাণ পেলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ জানান, শিক্ষকসহ দু’জনকে মারধরের খবরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি ছাড়া সব পদেই আ.লীগের জয়জয়কার

মাদারীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে আওয়ামীপন্থিরা ১৪টিতে জয় পেয়েছেন। সভাপতি পদ ছাড়া অন্য সব পদে তারা জয়ী হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী এমদাদুল হক খান। তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাফর আলী মিয়াকে ৭৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন।

এদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমকে ১৫৬ ভোটে পরাজিত করে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন সদর উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক মাহাবুব হোসেন (শাকিল)। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ১৩০ ভোট ও জালালুর রহমান পেয়েছেন ১৩০ ভোট। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিম মিয়া পেয়েছেন ২৯ ভোট (নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিদ্বন্দ্বী দুজন প্রার্থীর ভোট সমান হওয়ায় পুনরায় গণনা অথবা লটারি করে বিজয়ী প্রার্থী নির্বাচন করা হবে)। সহ-সভাপতি পদে মাহবুব হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-১ পদে শাকিলা পারভীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-২ পদে মশিউর রহমান পারভেজ, কোষাধ্যক্ষ পদে সুজন ভৌমিক, সম্পাদক (লাইব্রেরি) পদে মুনীর হাসান, সম্পাদক (মহরার) পদে এ কে এম আজিজুল হক মুকুল নির্বাচিত হয়েছেন।

কার্যনির্বাহী ৫টি পদে ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিজয়ী ৫ জন হলেন সৈয়দা তাহমিনা খানম, এনামুল হক, আবদুস সালাম, ইকবাল হোসেন ও আবু সুফিয়ান। এ ছাড়া সম্পাদক (অ্যাপায়ন ও বিনোদন) পদে বদরুন নাহার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক গোলাম মাওলা আকন্দ মুঠোফোনে জানিয়েছেন, মাদারীপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি ছাড়া ১৪টি পদেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী কিংবা সমর্থক বিজয়ী হয়েছেন। তবে এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে সরাসরি আওয়ামী লীগের পদে থাকা কোনো নেতা অংশগ্রহণ করেননি। আওয়ামী লীগের কোনো আইনজীবী নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তিনিও অন্য সবার মতন বিজয়ী হতেন বলে আমি মনে করি। যারা নির্বাচিত হয়েছেন সবাইকে অভিনন্দন।

তবে এমদাদুল হক খান সভাপতি পদে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের সমর্থন নিয়েই বিজয়ী হয়েছেন বলে দাবি করেছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ। তিনি বলেন, সভাপতি পদে আওয়ামী লীগের কেউ প্রার্থী না হওয়ায় তাদের সমর্থক আইনজীবীরা নির্বাচনে মূলত এমদাদুল হক খানকেই ভোট দিয়েছেন। সেকারণেই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাফর আলী মিয়া পরাজিত হয়েছেন।

মাদারীপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মোখলেছুর রহমান বলেন, এমদাদুল হক খানকে নির্বাচিত করায় সব আইনজীবীদের ধন্যবাদ। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তার বিজয়ে আমরা আনন্দিত।

মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য মাদারীপুর আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট ফরহাদ হোসেন জানান, সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দুজন সমান ভোট পাওয়ায় তাদের ছয়মাস করে দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ