সিরাজগঞ্জ-২ আসনের (সদর-কামারখন্দ) সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আক্তারুল ইসলাম আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর জমি, ফ্ল্যাটসহ ৪৫টি স্থাবর সম্পত্তি, ১৬টি গাড়ি, ১৯টি ব্যাংক হিসাবে থাকা প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ও যৌথ মালিকানাধীন ৪ কোম্পানির ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে দুদকের সহকারী পরিচালক আসিফ আল মাহমুদ এসব সম্পত্তি ক্রোক করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। দুদকের পক্ষে সরকারি কৌসুলি রেজাউল করিম শুনানিতে অংশ নেন। পরে বিচারক আবেদনটি মঞ্জুর করেন।

দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে গত ২৩ ডিসেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আসিফ আল মাহমুদ বাদী হয়ে জান্নাত আরা হেনরীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর আগে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ নভেম্বর জান্নাত আরা হেনরী, তাঁর স্বামী শামীম তালুকদার ও মেয়ে মুনতাহা রিদায়ী লামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জান্নাত আরা হেনরী একসময় স্কুলশিক্ষক ছিলেন। ওই চাকরিরত অবস্থায় ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার অংশ নিয়ে তিনি পরাজিত হন। পরে ২০০৯ সালে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। তাঁর এ দায়িত্ব পালনকালে আলোচিত হল–মার্ক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

জান্নাত আরা হেনরী ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য মনোনীত হন।

জান্নাত আরা হেনরী ও তাঁর স্বামী শামীম তালুকদারের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় তিনটি হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। গত ১ অক্টোবর মৌলভীবাজার থেকে গ্রেপ্তার হয়ে জান্নাত আরা হেনরী ও শামীম তালুকদার সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে রয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ফারুক আহমেদের ২৫০ কোটি টাকা ‘সরানো’ নিয়ে বিসিবির ব্যাখ্যা

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এফডিআরের বিপুল অঙ্কের অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক তুলে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর নিয়ে আলোচনা চলছিল কদিন ধরে। এই স্থানান্তর বিষয়ে আজ ব্যাখ্যা দিয়েছে বিসিবি।

দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানিয়েছে, বোর্ডের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক থেকে তুলে অন্য ব্যাংকে পুনরায় বিনিয়োগ করা হয়েছে।
বিসিবি বলছে, এমন উদ্যোগের কারণে স্থায়ী আমানত থেকে মুনাফা বেড়েছে।

বোর্ড ও এর সভাপতি ফারুক আহমেদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই পরিকল্পিতভাবে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছিল। আজ গণমাধ্যমে পাঠানো আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত বিসিবির বিবৃতিতে এ সব কথা বলা হয়।

গত আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিসিবির পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন আসে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক পরিচালক মনোনীত হয়ে সভাপতি হন সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ।

বিসিবির বিবৃতিতে বলা হয়, আর্থিক স্বার্থ সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদানের অংশ হিসেবে বোর্ড তার ব্যাংকিং সম্পর্কগুলো পুনর্মূল্যায়ন করে এবং শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ‘গ্রিন’ ও ‘ইয়েলো’ তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই লেনদেনে জড়িত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।

বিসিবির অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার ব্যাংকগুলো থেকে ২৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে ২৩৮ কোটি টাকা ‘গ্রিন’ ও ‘ইয়েলো’ তালিকার ব্যাংকগুলোতে পুনঃবিনিয়োগ করা হয়। বাকি ১২ কোটি বিসিবির পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের জন্য নির্ধারিত ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়।

সংবাদমাধ্যম ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে ফারুক আহমেদ নিজের সিদ্ধান্তে টাকা স্থানান্তর করেছেন বলে যে কথা বলা হয়েছে, সেটিও খণ্ডন করেছে বিসিবি।

এ বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বোর্ড সভাপতি কোনো একক সিদ্ধান্ত বলে বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের অজ্ঞাতে ব্যাংক পরিবর্তনের অথবা লেনদেন সংক্রান্ত নির্দেশ প্রদান করেন না। পার্টনার ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বিসিবির আর্থিক বিষয়ক লেনদেনে স্বাক্ষর প্রদানকারী হিসাবে দুজন বোর্ড পরিচালক আছেন—বোর্ডের ফিন্যান্স কমিটি চেয়ারম্যান ফাহিম সিনহা ও টেন্ডার ও পারচেজ কমিটি চেয়ারম্যান মাহবুবুল আনাম। বিসিবি সভাপতি এ সংক্রান্ত বিষয়ে সাক্ষরদাতা নন।’

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বিসিবি তার অর্থ ও স্থায়ী আমানত সংরক্ষণের দায়িত্ব ১৩টি ব্যাংকের হাতে দিয়েছে জানিয়ে বলা হয়, এর ফলে পূর্বের তুলনায় বিসিবির স্থায়ী আমানত থেকে ২-৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত মুনাফা হয়েছে।

এ ছাড়া গত ছয় মাসে বিসিবি তার বর্তমান তিনটি ব্যাংকিং অংশীদারের কাছ থেকে আনুমানিক ১২ কোটি টাকার আর্থিক স্পনসরশিপ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আরও প্রায় ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগের আশ্বাস পেয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতির সঙ্গে সরবরাহ করা নথি অনুসারে, বিসিবি ‘রেড জোনে’ থাকা বেসরকারি খাতের মিডল্যান্ড, বেসিক, আইএফআইসি, এক্সিম, ইউসিবি ও সরকারি জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক থেকে এফডিআরের টাকা তুলে নিয়েছে। যা রাখা হয়েছে ইস্টার্ন, ব্র্যাক, মিউচুয়াল ট্রান্স, পুবালি, মেঘনা ও সিটি ব্যাংকে। কিছু অর্থ অগ্রণী ব্যাংকেও আবার বিনিয়োগ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ