পবিত্র কোরআন পোড়ানোর প্রতিবাদ, ষড়যন্ত্রে পা না দেওয়ার আহ্বান শিক্ষার্থীদের
Published: 12th, January 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হলে পোড়ানো কোরআন শরিফ উদ্ধারের ঘটনায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে মিছিল করেন তাঁরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।
এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের মাঝখানে মুক্তমঞ্চে, শহীদ হবিবুর রহমান ও শহীদ জিয়াউর রহমান হলের মসজিদের তাকে এবং মতিহার হলের ছাদে পোড়ানো কোরআন শরিফ পাওয়া যায়। এ ছাড়া জিয়াউর রহমান হলে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির দলীয় প্রতীক (পদ্ম) আঁকা দেখা যায়।
এ ঘটনায় দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনায় চারটি হল থেকে থানায় অভিযোগ দেওয়া হবে বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মোহা.
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী কাওসার আল হাবিবের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আলম মাসুদ, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক আখতার হোসেন মজুমদার, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল, ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবীব মিঠু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফাহিম রেজা প্রমুখ।
অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার বড় দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে এখানে। প্রতিটি হলে সিসিটিভি ক্যামেরা চাই। স্পর্শকাতর এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা দিতে হবে। আমি আশ্চর্য হলাম যে তিন দিন আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন কী করে চুপ থাকল, কী করে আরেকটি ঘটনা ঘটতে দিল? আমরা বুঝতে পারছি, আমাদের সুন্দর সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য, দাঙ্গা তৈরির জন্য এই চেষ্টা করছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, প্রত্যেক যুবকের রক্ত টগবগ করছে। এখানে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। তারা দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করছে। আমাদের প্রত্যেকের জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। আমরা কোনো ধরনের উসকানিতে পা দেব না। আইন আইনের গতিতে চলবে।’
বিশ্ববিদ্যারয় শাখা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি যে এই ঘটনা কারা ঘটিয়েছে। এই ঘটনা তারা ঘটিয়েছে, যারা ৫ তারিখের পর লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। পতিত স্বৈরাচার প্রতিবিপ্লব করার জন্য রিকশা লীগ, আনসার লীগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। সবশেষ তারা চট্টগ্রামে ইসকনের মাধ্যমে এক আইনজীবীকে হত্যা করেছে। বাংলাদেশের মানুষ নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেই হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্রে পা দেয়নি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুঁজে বের করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইনানুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করতে না পারে, তাহলে শিক্ষার্থীরা বড় কর্মসূচির দিকে যাবে। তবে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। পতিত স্বৈরাচারের উসকানিতে পা দেওয়া যাবে না। আমি মনে করি, এখানে সনাতনী কেউ জড়িত নেই। আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, এটা পতিত স্বৈরাচারের প্রতিবিপ্লব করার ষড়যন্ত্রমাত্র।’
আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোড়া কোরআন শরিফ উদ্ধারের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন, তদন্ত কমিটি৩ ঘণ্টা আগেরেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসুদ বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসে এ ধরনের কোনো ঘটনা আগে ঘটেনি। আমার বিশ্বাস, এটা পতিত বাহিনীই করেছে। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা যথাযথভাবেই এ কর্মসূচি পালন করছে। আমরা ধন্যবাদ দিই যে শিক্ষার্থীরা কোনো ফাঁদে পা দেয়নি। আমাদের শিক্ষার্থীরা খুব সজাগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ঘটনায় আন্তরিকভাবে কাজ করছে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরা মেডিকেল কলেজ বন্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ
মাগুরা মেডিকেল কলেজ বন্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ ও দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণ। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে শহরের ভায়না মোড়ে ঢাকা যশোর মহাসড়ক অবরোধ করে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রায় আধা ঘণ্টা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বক্তারা বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, মাগুরাসহ নতুন ছয়টি মেডিকেল কলেজ বন্ধের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মাগুরা মেডিকেল কলেজ অস্থায়ী ক্যাম্পাস প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। একটি মেডিকেল কলেজে যেসব স্থাপনা ও সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, তার প্রায় শতভাগ এখানে রয়েছে। তাই মাগুরার জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে অবিলম্বে মাগুরা মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে হবে।’
মাগুরা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী প্রিয়া ধর বলেন, ‘আমাদের মাগুরা মেডিকেল কলেজে বড় মেডিকেল কলেজগুলোর মতো প্রায় সব সুবিধা থাকার পরও শুধু স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকার কারণে এটি বন্ধের অনেক অপচেষ্টা চলছে। যে কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে এবং মাগুরার মানুষের জনস্বার্থে এখানে আমরা আজ অবরোধ করেছি, যাতে এই মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়।’
মানববন্ধনের কারণে প্রায় আধা ঘণ্টা ঢাকা-যশোর ও ঢাকা-ঝিনাইদহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুর রহমান খান বলেন, ‘মেডিকেল কলেজ মাগুরার মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রতিষ্ঠান। এটা কোনোভাবেই বন্ধ হতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে সামনে আরও কঠোর আন্দোলন করা হবে।’
জানতে চাইলে মাগুরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মেডিকেল কলেজ বন্ধ করা হবে, এমন আনুষ্ঠানিক চিঠি বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। নতুন মেডিকেল কলেজগুলো নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা বক্তব্যে হয়তো শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। শুনেছি, শিক্ষার্থীরা সেই উদ্বেগের জায়গা থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মিলে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে।’