ফরিদপুরে ট্রেন ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে আহত শেখ জিন্নাত (৫৯) মারা গেছেন। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ঢাকার মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। জিন্নাতের বড় ছেলে শামীম শেখ বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬–এ।

এর আগে গত মঙ্গলবার ফরিদপুর সদর উপজেলার মুন্সিবাজার এলাকায় কাফুরা রেলক্রসিংয়ে রাজশাহী ছেড়ে আসা ঢাকাগামী মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে একটি মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় হতাহত নয়জনের মধ্যে আটজন মাইক্রোবাসের যাত্রী এবং নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। তাঁরা ফরিদপুরে বেড়াতে এসে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে শেখ জিন্নাত শুধু ফরিদপুরের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর বাড়ি সদরের গেরদা ইউনিয়নের কাফুরা এলাকায়। রেলপথের পাশে তিনি একটি চায়ের দোকান চালাতেন। দুর্ঘটনার দিন মাইক্রোবাসটি ট্রেনের ধাক্কা খেয়ে দুমড়েমুচড়ে যায়। গাড়ির সামনের গ্লাসটি ভেঙে জিন্নাতের বুকে লাগে। এতে জিন্নাতের বুকের পাঁজরের ছয়টি হাড় ভেঙে যায়। জিন্নাতকে প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে বুধবার বিকেলে তাঁকে ঢাকার মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালে পাঠানো হয়।

জিন্নাতের বড় ছেলে শামীম শেখ বলেন, ‘আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি। বাবা রেলক্রসিংয়ে চায়ের দোকান করতেন। আমরা খুবই গরিব মানুষ। বাবাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় মাত্র ১২ হাজার টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ কোনো খোঁজখবর নেয়নি।’

শামীম শেখ বলেন, অসুস্থ বাবাকে ঢাকায় স্থানান্তরের পর প্রথমে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি নেয়নি। তাঁদের সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে সেখানেও ভর্তি করাতে পারেননি। এরপর দুই দিন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করান। এরপরও বক্ষব্যাধি হাসপাতালে যোগাযোগ রেখেছিলেন। শনিবার রাত ১০টার দিকে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আসন পেয়ে বাবাকে ভর্তি করান। রাত ১২টার দিকে সেখানে বাবা মারা যান।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি–জামায়াতের বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর নির্বাচনী জোট করা ছাড়া পথ কী

অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সব পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের দমকা হওয়া উঠেছিল। কিন্তু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কারের পালে হঠাৎ করে হাওয়া কমে গেছে বলেই মনে হচ্ছে।

দ্বিদলীয় গণতন্ত্রে এক দল পলাতক হলে অন্য দল যে খোলা মাঠে গোল দিতে নির্বাচন চাইবে, সেটা স্বাভাবিক। অন্যদিকে নির্বাচন গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রাণভোমরা। তাই নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করাতে গণতন্ত্রকামী অন্য দলগুলোও তাদের নির্বাচনী হিসাব মেলাতে বাধ্য হওয়ার কথা। এমনকি নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করা দলও তাদের বৈধতা প্রমাণ করতে নির্বাচনের রাজনীতির দিকেই ঝুঁকবে।

কিন্তু একদলীয় নির্বাচনী ভাগ্যচক্রে অন্য দলগুলো কী পরিণতি আশা করতে পারে?

ভোটের হিসাবে বিএনপির পর দ্বিতীয় শক্তিশালী দল জামায়াত কোনো নির্বাচনেই পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। তাই তাদের পক্ষে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫টি আসন পেতেই হিমশিম খাওয়ার কথা। দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির দলগুলো এক নেতা, এক দল; তাই তারা সম্মিলিতভাবে ১০টির বেশি আসনে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয় না। কিন্তু তাদের আসনে বিএনপি যদি প্রার্থী দেয়? তাহলে বোধ হয় তারা নিজেরাই বিশ্বাস করে না যে তারা ১০ ভাগ ভোট পেতে পারে। জিতে আসা তো অনেক দূর।

বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।

ছাত্রদের নতুন দলে হাতে গোনা কয়েকজনের জাতীয় পরিচিতি থাকলেও এলাকার রাজনীতি তাঁরা করেননি। তাই রাষ্ট্রীয় সমর্থনবিহীন নির্বাচনী পাশা খেলায় তাঁরা নিজ নিজ আসনে কতটা কী করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এদিকে বিএনপি বুঝতে পারছে যে একদলীয় নির্বাচনে ২৯০ সিট জিতে আসা তাদের জন্য বিপজ্জনক। বিরোধী দল না রাখার শেখ সাহেবের ’৭৩ সালের ভুল তাদের স্মরণে আছে নিশ্চয়ই। সে জন্য তারা তাদের মিত্রদের কাছে ১০০ সিট ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এই সুযোগে মিত্র দলগুলো এখনই সংসদের সবুজ চেয়ারে বসার স্বপ্নের ডানায় উড়াল দিয়ে ফেলেছে।

এই স্বপ্নের যাত্রায় গণতন্ত্রের পক্ষের যে দলগুলো আওয়ামী জুলুমের সময় রাস্তায় ছিল, তারাও কি বুঝতে পারছে যে একবার বিএনপির আশীর্বাদের চাদরে ঢুকে গেলে তাদের ইনু-মেনন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না? আর ইনু-মেননরা যেহেতু রাস্তার রাজনীতি বিসর্জন দিয়েই যেহেতু সংসদে বসার দাসখত দেন, সামনের বিএনপির সময়েও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো এই কায়দায় রাস্তায় নামতে না পারার ঝুঁকিতে পরতে পারে।

আর রাস্তা ফাঁকা থাকলে মানুষ তো আর বসে থাকবে না। তখন হয়তো তারা তাদের স্বার্থেই আওয়ামী লীগকে ডেকে আনবে!

এমন একই পটভূমিতে ইতিহাস যাতে গুম-খুনের আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার বাঁক নিতে বাধ্য না হয়, সে জন্য বিএনপির বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের নতুন-পুরোনো সব দল মিলে একটা নির্বাচনী জোট গড়ে তোলা ছাড়া কোনো সমাধান নেই।

বাংলাদেশের মানুষের অভিজ্ঞতা বলে যে বিএনপি আসলে আওয়ামী লীগেরই অন্য পিঠ। তাই মানুষের পক্ষের নির্বাচনী জোট সামনে এলে আগামী নির্বাচনে চমক দেখানোর সম্ভাবনা উজ্জ্বল। সেই নির্বাচনে যদি তারা পঞ্চাশের কম আসনও পায়, তারাই হবে প্রধান বিরোধী জোট। সেই সংসদে বিএনপি জোর জুলুম করতে চাইলে হয়ে সংসদে তারা জোরালো কণ্ঠে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে।

বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।

সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মী

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ