মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি, সিলেটে বিএনপি নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
Published: 12th, January 2025 GMT
জুলাই-আগস্টের আন্দোলন–পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগে সিলেট মহানগর বিএনপির এক নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ পাওয়া বিএনপি নেতা সৈয়দ রহিম আলী সিলেট মহানগর বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং সিলেট ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ রোববার এ কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, সৈয়দ রহিম আলীর বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের বাদী বানিয়ে সাধারণ মানুষদের মামলা দিয়ে হয়রানি করার ও ফায়দা হাসিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট ও দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী। এ ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ ও দলীয় শৃঙ্খলা অমান্য করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার সঠিক কোনো প্রমাণ বা বারণ থাকলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর উপস্থাপন করার নির্দেশ দেওয়া হলো।
নোটিশে ৫ জানুয়ারি উল্লেখ থাকলেও এটি আজ রোববার বিএনপি নেতা সৈয়দ রহিম আলীর কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান।
রেজাউল হাসান বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণের ভিত্তিতে সৈয়দ রহিম আলীকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত ৫ আগস্ট–পরবর্তী যেসব মামলা হয়েছে, এই মামলাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে দেখা গেছে যে বাদীকে চাপ দিয়ে কিছু দুষ্কৃতকারী ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিল করতে কিছু সাধারণ মানুষকে আসামি করেছে। আরেকটি চক্র আছে, যারা মামলা থেকে বাঁচতে আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার তথ্য রয়েছে। এটা নিয়ে সচেতন মানুষের মধ্যে একটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই বিষয়গুলো দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পরে আমরা প্রাথমিক কিছু তদন্ত করেছি। তদন্তে দলের দু-একজনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। যার কারণে দল থেকে শোকজ করা হয়েছে। এতে সন্তোষজনক জবাব পাওয়া গেলে ভালো, না হলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রেজাউল হাসান আরও বলেন, ‘দু-একজন মানুষের জন্য দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে না। ৫ আগস্ট–পরবর্তী আমাদের দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অবস্থান ও দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।’
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বিএনপি নেতা সৈয়দ রহিম আলীর ব্যবহৃত মুঠোফোনে আজ কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ত্রোপচার সম্পন্ন না করেই রোগীর পেট সেলাইয়ের অভিযোগ
পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে যান শিল্পী বেগম। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন রোগী। পরে তাঁর পেট কেটে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন না করে সেলাই করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে ভৈরবের মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক সেন্টারে।
ভুক্তভোগী নারী নরসিংদীর পটিয়া গ্রামের দারোগা বাড়ির প্রবাসী মাসুম মিয়ার স্ত্রী। প্রচণ্ড পেটে ব্যথা নিয়ে গত বুধবার সকালে ভর্তি হন ভৈরব পৌর শহরের নিউটাউন মোড় এলাকার মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক সেন্টারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ক্লিনিক থেকে জানানো হয় তাঁর পেটে টিউমার রয়েছে। এটি বেশি জটিল হয়ে গেছে দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে। পরে বৃহস্পতিবার রাতে শিল্পী বেগমের পেটে অস্ত্রোপচার শুরু হয়, কিন্তু শেষ না করেই চিকিৎসক তাঁর পেট সেলাই করে বেডে স্থানান্তর করেন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে এখন ব্যথায় কাতরাচ্ছেন শিল্পী বেগম।
শিল্পী বেগম জানান, তাঁর পেটে ব্যথা অনুভব হলে নরসিংদীর একটি হাসপাতাল থেকে ইনজেকশন নিয়ে ব্যথা কমিয়ে মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক সেন্টারে যান। চিকিৎসক আলট্রাসনোগ্রাম করে জানান রোগ বেশি জটিল, তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার করতে হবে। অস্ত্রোপচার শুরু করে বুঝতে পারেন তারা পারবেন না। পরে পেট সেলাই করে বলে দেন দুই-এক মাস বাসায় থেকে একটু সুস্থ হয়ে ঢাকায় গিয়ে অপারেশন করাতে। পরে তাঁর স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপ দিলে চিকিৎসাটা ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তারা। এর আগে ভুল স্বীকার করতে চাননি।
রোগীর মেয়ে তানজিনা বলেন, ‘অপারেশন করে রোগী যদি ভালো নাই করা যাবে তাহলে তা করা হলো কেন? অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার পর আমাদের বলা হয় বাসায় নিয়ে যেতে এবং দুই-এক মাস বাসায় রেখে কিছুটা সুস্থ করে অন্য জায়গায় গিয়ে অপারেশন করাতে। পরে আমাদের চাপে এই হাসপাতালে আরও কয়েকদিন চিকিৎসা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করে কয়েক মাস পর অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে সহযোগিতা করবেন বলে একটি লিখিত দিয়েছেন হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ।’ তাঁর প্রশ্ন, এ হাসপাতালের চিকিৎসক যদি অস্ত্রোপচার নাই করতে পারবেন তাহলে কেন রোগীকে ধরল? তারা যা করেছেন তা সম্পূর্ণ অন্যায়। এর কারণে যদি পরবর্তী সময়ে তাঁর মায়ের কোনো ক্ষতি হয় তাহলে তার দায়-দায়িত্ব এই হাসপাতালকেই নিতে হবে।
হাসপাতালটির মালিক ডা. একেএম জাহাঙ্গীর আলম। শিল্পী বেগমের অস্ত্রোপচারও শুরু করেন তিনি।
অভিযোগের ব্যাপারে তাঁর ভাষ্য, পেট কাটার পর দেখা যায় টিউমারের সঙ্গে পেটের ভেতরের অন্যান্য অঙ্গ পেঁচিয়ে রয়েছে, যার কারণে অস্ত্রোপচার করেননি তারা। যদি তারা অস্ত্রোপচার করতেন তাহলে রোগী মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকত। তাই ঝুঁকি নেননি তারা। পরবর্তী সময়ে প্রস্তুতি নিয়ে যেকোনো হাসপাতালে এই রোগীর অস্ত্রোপচার করা হলে তাদের হাসপাতাল থেকে রোগীকে সহযোগিতা করা হবে।
চিকিৎসকরা রোগীর অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে যদি বড় ধরনের সমস্যা পান তবে অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখতে পারেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশোর কুমার ধর। তিনি বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে অপারেশন করতে গিয়ে কোনো গাফিলতি আছে কিনা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে কোনো অবহেলা ছিল কিনা। বিশেষ করে রোগী ও তাঁর স্বজনরা যদি তাঁর কাছে অথবা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অভিযোগ করেন তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসপাতালটির বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, তাঁর জানা মতে মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক সেন্টারের লাইসেন্স আছে। তারপরও রোববার (আজ) খোঁজ নিয়ে দেখবেন তিনি।