আন্দোলনে হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ ২৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার, তদন্ত কমিটি
Published: 12th, January 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের শাখা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৯ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে তাঁদের অধিকতর শাস্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকে সভাপতি করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মো.
অফিস আদেশে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা–সংক্রান্ত বিষয়ে শৃঙ্খলা বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২৩৪তম সিন্ডিকেট বৈঠকের সিদ্ধান্তে ২৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে যাচাইপূর্বক অধিকতর শাস্তির বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
সাময়িক বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান, বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজীবুর রহমান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রেজাউল হক, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফারহান হোসেন চৌধুরী, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শিমুল মিয়া, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. হাবিবুর রহমান, বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ রাকিবুজ্জামান, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. লোকমান হোসেন, বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইউসুফ হোসেন।
এ ছাড়া অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রেদোয়ান হোসেন; সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মাঈদুল ইসলাম ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তারেক হাসান; নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মো. আসিফুল ইসলাম, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ইলিয়াস সানী ও মো. আকাশ আহমেদ; পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের দুর্জয় সরকার, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মো. সিয়াম খাঁ ও সজীব চন্দ্র নাথ এবং ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সৈয়দ মাজ জারদি; বাংলা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মনিরুজ্জামান, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মোজাহিদুল হক ও মো. নাফিউজ্জামান এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মো. ইসমাইল হোসেন; বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শুভ্র রায় শ্যাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মারুফ মিয়া; ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তৈমুর সালেহীন তাউস, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের রওফুন জাহান, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিহাব উদ্দিন ও মোজাহিদুল ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহিষ্কৃত সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সজীবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুদ্র সেন হত্যা মামলার আসামি। গত বছরের অক্টোবরে গ্রেপ্তার হয়ে তাঁরা এখন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।
চার সদস্যের তদন্ত কমিটিএদিকে সাময়িক বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকতর শাস্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. সাজেদুল করিমকে সভাপতি করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক মোহাম্মদ এছাক মিয়া, প্রক্টর মোখলেসুর রহমান ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সেলিম।
ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক মো. এছাক মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৪ জুলাই দিবাগত রাতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও হলে অস্ত্রের রাখার দায়ে তাঁদের বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঘুরেফিরে তারাই খেলে সেমিতে
‘ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া হচ্ছে ফুটবলের ব্রাজিল; তারা যত অফফর্মেই থাকুক না কেন, আইসিসি টুর্নামেন্ট এলেই তারা ফেভারিট। তা সে যেমন মানের দলই হোক না কেন। হলুদ জার্সিটা গায়ে জড়ালেই তারা ভয়ংকর’।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগে এক টেলিভিশন টকশোতে এভাবেই স্টিভ স্মিথের দলকে নিয়ে ভবিতব্য করেছিলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার অজয় জাদেজা। তখন সঞ্চালক বলেছিলেন, ভারত তাহলে কি ক্রিকেটের আর্জেন্টিনা? আকাশি-নীল জার্সির কারণে তা আপনি বলতেই পারেন; হাসি-ঠাট্টায় ভারতীয় চ্যানেলের সেই অনুষ্ঠানটি জমে উঠেছিল।
তবে কথার কথা নয়, অস্ট্রেলিয়া যে সত্যিই ক্রিকেটে ‘ফুটবলের ব্রাজিল’; তা কিন্তু তাদের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানও প্রমাণ করে। এমনিতেই সবার থেকে বেশি ছয়বার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছে অসিরা। কিন্তু গত দশকের কথায় যদি ধরা হয়, সেখানে কিন্তু একটা মজার ব্যাপার লক্ষ করা যায়। আর সেটা হলো, ২০১৫ ও ২০২৩ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। এবারের ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে একই চার দল এবং এই চার দলের মধ্য থেকে গত দুটি আসরেই চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। তাহলে কি এবারও চ্যাম্পিয়ন হবে অসিরা?
শুধু ওয়ানডে ফরম্যাটেই না, ২০২১ সালে দুবাইতে টি২০ বিশ্বকাপেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বর্তমান টেস্ট চ্যাম্পিয়নও তারা। এমনকি সামনে জুনে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও খেলবে তারা। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। যার অর্থ ঘুরেফিরে এই চারটি দলই আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোতে ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছে। তা তারা যেমন শক্তির দল নিয়েই আসুক না কেন। এবার যেমন বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের সাতজন আসেনি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। তার পরও তাদের চ্যাম্পিয়ন মানসিকতা এতটুকু ধাক্কা খায়নি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসরের প্রথম ম্যাচে রেকর্ড ৩৫১ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে নেয় অসিরা। মেলবোর্ন, মুম্বাই, লাহোর; যে কোনো কন্ডিশনে যে কোনো উইকেটে অসিরা নিজেদের দারুণ মানিয়ে নিতে পারেন।
অস্ট্রেলিয়ার মতো ধারাবাহিকতা আছে ভারতেরও। তবে ২০১১ সালের পর ভারত কিন্তু এই ফরম্যাটে বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। এর পর শচীন টেন্ডুলকার-উত্তর ভারতীয় প্রজন্মের সাফল্য এসেছে শুধু ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জয় এবং সর্বশেষ ২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। অস্ট্রেলিয়ার মতো নিউজিল্যান্ডও আইসিসির আসরগুলোতে স্নায়ু শক্ত রেখে সেমিতে উঠে যাচ্ছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে তারা অস্ট্রেলিয়ার কাছে ফাইনালে হেরে গিয়েছিল। ২০১৯ বিশ্বকাপে তারা লর্ডসে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল। আর গত বিশ্বকাপে মুম্বাইতে তারা সেমিফাইনালে ভারতের কাছে আটকে গিয়েছিল। তবে এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিরই দ্বিতীয় আসরে কেনিয়ায় ২০০০ সালে তারা ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ২০২১ সালে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপও জিতেছিল কিউইরা। সেই হিসাবে কিউইদের যদি ‘ফুটবলের ফ্রান্স’ও বলা যেতে পারে।
আর নকআউট পর্বে এসে প্রোটিয়াদের স্নায়ু দুর্বলতার ব্যাপারটি সবারই জানা। ঢাকায় আইসিসির এই ইভেন্টের প্রথম আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এর পর আর তাদের ফাইনালে দেখা যায়নি। পাঁচটি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে পেরেছে তারা। সর্বশেষ গত বছর টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে গিয়েও হেরে গিয়েছে। তাই ক্রিকেটের এই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ‘ফুটবলের নেদারল্যান্ডস’ বললে বোধ হয় খুব বেশি ভুল হবে না। কারণ ডাচরা কিন্তু ফুটবল বিশ্বকাপে তিন তিনবার ফাইনাল খেলেও ট্রফি স্পর্শ করতে পারেনি।