ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে সাত দিনের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের দেওয়া ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে ২৬ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও দুই সিটি করপোরেশনসহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্পূরক এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ আদেশ দেন। সম্প্রতি ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) সম্পূরক ওই আবেদন করে।

চার বছর আগে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক আদেশে বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দেন। ৯ দফার মধ্যে ঢাকা শহরে মাটি-বালু-বর্জ্য পরিবহন করা ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা, নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি-বালু-সিমেন্ট-পাথর-নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, সড়কে সিটি করপোরেশনের পানি ছিটানো, সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে গাড়ির চলাচল সময়সীমা নির্ধারণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধ করার বিষয়গুলো রয়েছে।

আদালতে সম্পূরক আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।

এর আগে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে ২০১৯ সালে এইচআরপিবি হাইকোর্টে একটি রিট করে। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা দেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর এক আদেশে হাইকোর্ট ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ ও দূষণ কার্যক্রম রোধে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন। ওই রিটের ধারাবাহিকতায় এইচআরপিবির এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দেন।

আদালতের নির্দেশনা থাকার পরেও অতি সামান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও অধিকাংশ নির্দেশনা পালন না করায় সম্পূরক আবেদনটি করা হয় বলে জানান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা কিছুটা কমে। পরবর্তী সময়ে নির্দেশনাগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় ঢাকা শহর আবারও বায়ুদূষণের শীর্ষ শহর হিসেবে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, এ অবস্থায় আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন চেয়ে সম্পূরক আবেদনটি করা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত আগামী সাত দিনের মধ্যে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে ২৬ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

তদন্তে ‘অগ্রগতি’র কথা জানিয়ে সময় চাইল রাষ্ট্রপক্ষ

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে আরও ছয় মাস সময় পেয়েছে এ–সংক্রান্ত টাস্কফোর্স। রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তদন্ত শেষে ছয় মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। আদালতের আদেশের পর গত ২৩ অক্টোবর চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এদিকে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে হাইকোর্টের দেওয়া ছয় মাস সময় ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় তদন্ত চলমান ও অগ্রগতি আছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপক্ষ আরও ৯ মাস সময় দিতে আরজি জানায়। শুনানি নিয়ে আদালত ছয় মাস সময় মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে আগামী ২২ অক্টোবর পরবর্তী দিন রেখেছেন।

এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল দেওয়া এক আদেশে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব। দীর্ঘ এই সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা পড়েনি। মামলাটি তদন্তের জন্য র‍্যাবের কাছে স্থানান্তরের ওই আদেশ সংশোধন চেয়ে স্বরাষ্ট্রসচিবের পক্ষে গত সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনসহ ওই আদেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আজ আদেশের জন্য কার্যতালিকায় ওঠে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব। বাদীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ বলেন, ‘তদন্ত চলছে। আরেকটু সময় লাগবে।’ আদালত বলেন, ‘কত দিন?’ তখন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘৯ মাস সময় দেন। অনেক পুরোনো মামলা। কিছু কিছু তথ্য খুঁজতে হচ্ছে, যা সময়সাপেক্ষ।’

আরশাদুর রউফ বলেন, ‘কর্মকর্তারা দিন-রাত কাজ করছেন। টাস্কফোর্সে পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা আছেন। সবাই মিলেই চেষ্টা করছেন, অনেক দূর অগ্রগতি হয়েছে। ডিএনএ নমুনা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। প্রতিদিন তদারক করা হচ্ছে। ৯ মাস সময় দেন। এর আগে হয়ে গেলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা যাবে।’

একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘১২ বছর হয়ে গেছে।’ তখন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আগে ছিল র‍্যাবের হাতে। যদিও র‍্যাব অপারেশনাল এজেন্সি, তদন্তকারী সংস্থা নয়।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি তদন্তের জন্য র‍্যাবের কাছে যায়। র‍্যাব হচ্ছে আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থা। অতীতে দেরি হয়েছে। বারবার পেছাচ্ছে কেন—এ নিয়ে পাবলিক পারসেপশন (একধরনের দৃষ্টিভঙ্গি) আছে। ওনারা (টাস্কফোর্স) আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন, অগ্রগতি হয়েছে। এত লম্বা সময় (৯ মাস) দেওয়া হলে মানুষের মনে খারাপ ধারণা তৈরি হতে পারে। তিন মাস সময় দেওয়ার পক্ষে মত দেন বাদীপক্ষের এই আইনজীবী।

একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘প্রগ্রেস (তদন্তের অগ্রগতি) হচ্ছে তো?’ তখন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ বলেন, ‘প্রগ্রেস হচ্ছে। বিষয়টি পুলিশের মহাপরিদর্শক, উপমহাপরিদর্শক ও অ্যাটর্নি জেনারেল নিজেও তত্ত্বাবধান করছেন।’ পরে ছয় মাস সময় মঞ্জুর করে আদালত আগামী ২২ অক্টোবর পরবর্তী দিন রাখেন।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া করা বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। সাগর সে সময় মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।

প্রথমে এ মামলা তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র‍্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুনসাগর-রুনি হত্যা মামলা: আরও ছয় মাস সময় দেওয়া হলো টাস্কফোর্সকে৮ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫ আগস্ট সংসদের বিশেষ কক্ষে স্পিকারসহ ১২ জন অবস্থান করতে বাধ্য হই, আদালতে বললেন পলক
  • মাগুরার শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলার চার্জ গঠন, ২৭ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য
  • মামলাটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ছিল: অধ্যাপক ইউনূসসহ ৭ আপিলকারীর আইনজীবী
  • অধ্যাপক ইউনূসসহ সাতজনের আপিল মঞ্জুর, দুদকের মামলা বাতিল
  • কাশ্মীরে পর্যকটদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলা, নিহত ২০ জনের বেশি
  • হত্যার ৩২ বছর পর রায়, ১ জনের যাবজ্জীবন
  • তদন্তে ‘অগ্রগতি’র কথা জানিয়ে সময় চাইল রাষ্ট্রপক্ষ
  • ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ারে বিনিয়োগে আইসিবির শর্ত শিথিল
  • দীর্ঘদিনের প্রেমিকাকে বিয়ে করলেন অভিনেত্রী ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট
  • শ্রীলঙ্কার ইস্টার বোমা হামলায় নিহতদের স্বীকৃতি দিল ভ্যাটিকান