গাজীপুরে বিদ্যালয়ের অফিস থেকে শিক্ষককে ধরে এনে যুবদল নেতার মারধর
Published: 12th, January 2025 GMT
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যুবদল নেতার নেতৃত্বে বিদ্যালয়ে এক শিক্ষককে ধরে নিয়ে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় শিক্ষককে রক্ষা করতে গিয়ে বিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থীও হামলার শিকার হয়েছেন।
আজ রোববার সকালে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার বঙ্গবন্ধু সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার দুজন হলেন বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শাখার সহাকারী শিক্ষক মো.
পুলিশ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, সকালে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে বসির উদ্দিন ও প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার গল্প করছিলেন। এ সময় উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন আহমেদ, যুবদল কর্মী রাকিব হাসানসহ কয়েকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে প্রবেশ করেন। পরে সহকারী শিক্ষক বসির উদ্দিনকে জোর করে ধরে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। এ সময়ে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রিজভী আহামেদ দেখতে পেয়ে রক্ষা করতে গেলে তাঁকেও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন হামলাকারীরা। পরে বিদ্যালয়ের দপ্তরিসহ আশপাশের লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ঘটনার খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা–পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
কলেজের প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার বলেন, যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁরা সবাই যুবদল নেতা রাশেদুল ইসলামের (জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক) সঙ্গে থাকেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার তাঁরা স্কুলে এসে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম বলেন, ওই শিক্ষক আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
তবে আহত শিক্ষক বসির উদ্দিন বলেন, মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে স্থানীয় কিছু যুবদলের নেতাকর্মী তাঁকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে আসছেন। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত তদন্ত কমিটিও কোনো দোষ খুঁজে পায়নি। তারপরও আজ স্কুলে তাঁকে ধরে নিয়ে মারধর করা হয়েছে।
জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান বলেন, যুবদলের কোনো নেতা শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় জাড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামিল হোসেন বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ তুলে তাঁকে বিতাড়িত করতে চাইছে একটি পক্ষ। তারই জের ধরে কিছু লোক ওই শিক্ষককে মারধর করেছে। তাঁকে রক্ষা করতে এলে রিজভী নামের আরেকজনকে পেটানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যাকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে অনেক দেশ। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।
বাংলাদেশের প্রধান দুই রপ্তানি বাজারের একটি যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের একটি বড় অংশ রপ্তানি হয় দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি হয় প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার, যা প্রধানত তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তান ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলারে।
নতুন করে উচ্চ মাত্রায় এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।
ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্যের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, ‘আজ খুব ভালো খবর’ থাকবে। এ সময় দর্শক সারি থেকে করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়।
এই দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ অভিহিত করেন ট্রাম্প। নতুন শুল্ক আরোপকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, এই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করছে।
ট্রাম্পের পাল্টা এই শুল্ক আরোপে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩৪ শতাংশ।
এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে।
অন্যান্য যেসব দেশের পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
পাল্টা এই শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকা ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’।
যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব গাড়ি উৎপাদন করা হয় তার ৮০ শতাংশের বেশি সেদেশে বিক্রি হয়। আর জাপানে যেসব গাড়ি বিক্রি হয় সেগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি সেদেশে তৈরি হয়। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি বিক্রি হয় খুব সামান্য।
মার্কিন কোম্পানি ফোর্ড অন্যান্য দেশে খুব কম গাড়ি বিক্রি করে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অন্য যে কোনো দেশে তৈরি মোটরযানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং এটা আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।
শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, আজকের দিনকে আমেরিকান শিল্পের ‘পুনর্জন্ম’ এবং আমেরিকাকে ‘আবার সম্পদশালী’ করার দিন হিসেবে স্মরণ করা হবে।
এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাধার মুখে রয়েছে।
অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা আরও খারাপ অবস্থা তৈরি করেছে।
বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মেধাসত্ত চুরিসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ করেছেন তিনি।