বন্দী অবস্থায় নামাজ আদায়ের কাহিনি
Published: 12th, January 2025 GMT
হজরত আমর ইবনে আবু সুফিয়ান (রা. )–এর বরাতে একটি হাদিসের বর্ণনা আছে।
একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) দশজন লোককে গোয়েন্দা হিসেবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য পাঠালেন। আসিম ইবনে সাবিত আনসারি (রা.)–কে তিনি সেই গোয়েন্দা দলের প্রধান নিয়োগ করলেন। আসিম (রা.) ছিলেন উমর ইবনে খাত্তাবের নানা।
তাঁরা মদিনা ও মক্কার মাঝামাঝি হাদাত নামে একটি জায়গায় পৌঁছালেন। লেহইয়ান নামে হুযায়েল গোত্রের একটি শাখার লোকেরা দুই শ তিরন্দাজ নিয়ে তাঁদের সন্ধানে বের হয়। রাসুল (সা.
আসিম আর তাঁর সঙ্গীরা উঁচু একটি স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল। তাঁদের ওরা দেখতে পেয়ে বলল, তোমরা নেমে এসে স্বেচ্ছায় বন্দী হও। তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা কাউকে হত্যা করব না।
আরও পড়ুনকারও ঘরে প্রবেশের জন্য অনুমতি চাইতে হবে ২২ অক্টোবর ২০২৩আসিম ইবনে সাবিত (রা.) বললেন, ‘কাফিরদের কথায় তো আমি নিচে নামব না। হে আল্লাহ, আমাদের পক্ষ থেকে আপনার নবীকে সংবাদ পৌঁছে দিন।’
কাফিররা ততক্ষণে তাঁদের দিকে তির ছুড়তে শুরু করেছে। তিরবিদ্ধ হয়ে আসিম (রা.)–সহ সাতজন মারাও গেলেন। বাকি রইলেন কেবল তিনজন—খুবাইব আনসারি (রা.), যায়েদ ইবনে দাসিনা (রা.) এবং আরও একজন।
কাফিরদের অঙ্গীকারের আস্থা রেখে তাঁরা নেমে এলেন। কাফিররা ধনুকের ছিলা খুলে তিনজনকে বেঁধে ফেলল। তৃতীয়জন তখন বলে উঠলেন, ‘শুরুতেই বিশ্বাসঘাতকতা! আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের সঙ্গে যাব না। আমি শহীদদের পদাঙ্ক অনুসরণ করব।’
কাফিররা তাঁকেও মেরে ফেলল। এর পর খুবাইব আনসারি (রা.) আর যায়দ ইবনে দাসিনা (রা.)–কে মক্কায় নিয়ে এসে দুজনকেই ওরা বিক্রি করে দিল। খুবাইব আনসারি (রা.)–কে তখন হারিস ইবনু আমিরের ছেলেরা কিনে নেয়।
এটা বদরের যুদ্ধের পরের ঘটনা। বদরের যুদ্ধে খুবাইব (রা.) হারিস ইবনু আমিরকে হত্যা করেছিলেন। খুবাইব (রা.)–কে তারা কিছুদিন বন্দী করে রাখে। হারিসের ছেলেমেয়েরা খুবাইব (রা.)-কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল।
আরও পড়ুনকোরআন শুনে জিনদের মুগ্ধ হওয়ার কাহিনির বর্ণনা রয়েছে সুরা আহকাফে২৩ অক্টোবর ২০২৩খুবাইব (রা.) তাদের কাছ থেকে ক্ষৌরকর্মের জন্য ওদের কাছে একটা ক্ষুর চাইলে হারিসের মেয়ে তাঁকে একটা ক্ষুর দিল। হারিসের নাতি সে সময় খুবাইব (রা.)–র কোলে বসেছিল। খুবাইবের হাতে ক্ষুর দেখে হারিসের মেয়ে আঁতকে উঠল।
খুবাইব (রা.) বললেন, তুমি কি এ কথা ভাবছ যে শিশুটিকে আমি খুন করব? কখনোই আমি সেটা করব না।
হারিসের মেয়ে তখন বলেন, খুবাইবের মতো উত্তম বন্দী আমি কখনো দেখিনি। একদিন দেখি, খুবাইব বন্দী অবস্থায় আঙুর খাচ্ছেন। অথচ সে সময় মক্কায় কোনো ফলই পাওয়া যাচ্ছিল না। সেটা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবিকা, খুবাইবকে তিনি দান করেছেন।
এর পর ওরা খুবাইবকে মারার জন্য তাঁকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। খুবাইব (রা.) বললেন, আমাকে দুই রাকাত নামাজ পড়তে দাও।
ওরা তাঁকে নামাজ পড়ার অনুমতি দিল। তিনি নামাজ আদায় করে বললেন, আমি কিন্তু মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে আমি নামাজকে দীর্ঘ করিনি।
আরও পড়ুনমৃত্যুর ফেরেশতাকে মুসা (আ.) চড় মারেন২৪ অক্টোবর ২০২৩এই বলে তিনি একটি কবিতা আবৃত্তি করলেন:
‘যখন আমি মুসলিম হিসেবে শহীদ হচ্ছি, তখন কোনো ভয় করি না,
আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে আমাকে যেখানেই মাটিতে লুটিয়ে ফেলা হোক না কেন।
আমার এ মৃত্যু আল্লাহ–তাআলারই জন্য।
তাঁর ইচ্ছা হলে আমার শরীরের প্রতিটি খণ্ডে বরকত দিয়ে দেবেন।’
এর পর হারিসের ছেলে তাঁকে হত্যা করে। বন্দী অবস্থায় কোনো মুসলমানকে শহীদ করা হলে তাঁর জন্য দুই রাকাত নামাজ আদায় করার রীতি খুবাইব (রা.) এই ঘটনা থেকে প্রবর্তিত হয়।
আসিম (রা.)–এর শাহাদত বরণের দিনই আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেছিলেন। তাঁদের সবার ওপর যা ঘটেছিল, আল্লাহর রাসুল (সা.) সে দিন তাঁর সাহাবিদের সবই জানিয়েছিলেন।
কুরাইশ কাফিরদের জানানো হলো যে আসিম (রা.)-কে শহীদ করা হয়েছে। সে খবর পেয়ে ওরা একটি লোক পাঠাল আসিম (রা.)–এর লাশ কেটে একটি অংশ নিয়ে আসতে, যাতে ওরা সেটা দেখে তাঁর মৃত্যুর ব্যাপারে সুনিশ্চিত হতে পারে। আসিমের লাশ রক্ষার জন্য তখন এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠানো হলো, যাতে তারা তাঁর দেহ আবৃত করে রাখে। কুরাইশদের সেই লোক তাঁর শরীরে ছুরি চালাতে পারেনি। (সহিহ্ বুখারি, হাদিস: ৩,০৪৫)
আরও পড়ুনবাদশাহ ও এক বুদ্ধিমান বালকের ঘটনা২৪ অক্টোবর ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে ছিটকে পড়লেন মার্শ
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। দলটা নিশ্চিতভাবেই অন্যতম ফেবারিট হিসেবে যাচ্ছে আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। তবে ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া এই আসরটির আগে ঝামেলা পিছু ছাড়ছে না অজিদের। দলের নিয়মিত অধিনায়ক প্যাট কামিন্স চোটাক্রান্ত। এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে নিয়ে সংশয় এখনও কাটেনি। এবার অজিদের জন্য ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে অলরাউন্ডার মিচেল মার্শের ছিটকে পড়টা। ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)।
মার্শের সামনে সুযোগ ছিল সাদা বলের ক্রিকেটে, আইসিসির সব ধরনের বৈশ্বিক আসর জয়ের অসাধারণ এক মাইলফলক ছোঁয়ার। তবে চোটের কারণে এবার অন্তত সেটা সম্ভব হচ্ছে না। জানা গিয়েছে পিঠের নিচের অংশের চোটে ভুগছেন এই ৩৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। সুনির্দিষ্ট করে চোটের ধরণ জানায়নি সিএ।
সিএ-এর এক মুখপাত্র বলেছেন, “অস্ট্রেলিয়া জাতীয় নির্বাচক প্যানেল এবং চিকিৎসকরা মিচেল মার্শকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার চোটের কারণে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় থাকা মার্শের শারীরিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়নি। সম্প্রতি তার পিঠের নিচের অংশে ব্যথা আরও বেড়ে যাওয়ার কারণে নির্বাচক প্যানেল এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। তাকে পুরোপুরি সেরে ওঠার সুযোগ দিতে পুনর্বাসনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। মার্শের জায়গায় দলে কে অন্তর্ভুক্ত হবে, তা নির্বাচক প্যানেল বৈঠক শেষে যথাসময়ে ঘোষণা করবে।”
আরো পড়ুন:
তবু আফসোস নেই শরিফুলের
রঞ্জিতে বিরাটের প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী হতে রাত ৩টা থেকে লাইন
এদিকে ক্রিকইনফো দাবি করছে মার্শের এবারের ক্রিকেট মৌসুম শেষ। ক্রিকেটভিত্তিক সাইটটি আরও জানায় অস্ট্রেলিয়ান নির্বাচকরা এখন যদি মার্শের পরিবর্তে কোন ব্যাটসম্যানকে বেছে নেন, তাহলে সেটা হতে পারে জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক, যদিও তিনি সম্প্রতি ভালো ফর্মে নেই। তবে তার খেলায় আগ্রাসী মনোভাব রয়েছে, যা মার্শের মতোই। অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডে ব্যাটিং বিকল্প ইতোমধ্যেই আছে, তাই নির্বাচকরা অলরাউন্ডারও বেছে নিতে পারেন। এমনটা হলে, টেস্ট দলে মার্শের জায়গা দখল করা বাউ ওয়েবস্টার ওয়ানডেতেও ডাক পেতে পারেন।
এদিকে আইপিএলের এবারের মৌসুমে মার্শের খেলা এখন অনিশ্চত। গত নভেম্বরে সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত মেগা নিলামে তাকে ৩ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে দলে নিয়েছিল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস।
আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ম্যাচটি হবে ২২ ফেব্রুয়ারি, যেখানে তারা মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান। এর আগে শ্রীলঙ্কায় দুটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া।
ঢাকা/নাভিদ