রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক চারটি হলে পবিত্র কোরআনের পোড়া কপি পাওয়ার ঘটনায় ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে ক্যাম্পাসে সিনেট ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সময় জানানো হয়, ঘটনাটা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটনা হয়েছে, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এ ঘটনায় দোষীদের খুব দ্রুত খুঁজে বের করা হবে।

এর আগে আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের মাঝে মুক্তমঞ্চে, শহীদ হবিবুর রহমান ও শহীদ জিয়াউর রহমান হলের মসজিদের তাকে ও মতিহার হলের ছাদে পোড়া কোরআন শরিফ পাওয়া যায়। এ ছাড়া জিয়াউর রহমান হলে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির দলীয় প্রতীক (পদ্ম) আঁকা দেখা যায়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ওই সব জায়গা পরিদর্শন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য সালেহ্ হাসান (নকীব) বলেন, এ ঘটনায় তিন আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষ নিজ নিজ জায়গা থেকে থানায় অভিযোগ দেবেন। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির প্রধান করা হয়েছে সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) মোহা.

ফরিদ উদ্দিন খানকে। এই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট হলগুলোর প্রাধ্যক্ষও থাকবেন।

উপাচার্য আরও বলেন, ‘একই গোষ্ঠী সম্ভবত একই সময়ে রাতের আঁধারে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট, তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ইতিহাস আছে, সেই জায়গা থেকে আমাদের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের আবেগ–অনুভূতিতে আঘাত হেনে সেই সম্প্রীতির জায়গাটা বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য সালেহ্ হাসান বলেন, ‘ঘটনাটা পূর্বপরিকল্পিত মনে হচ্ছে। চারটি হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার প্যাটার্নও একই রকম। একইভাবে পবিত্র কোরআন শরিফে আগুন দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত নিচু প্রকৃতির ন্যক্কারজনক কাজ।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘আমার ছাত্রছাত্রীদের ধন্যবাদ দিতে চাই, তারা এ ধরনের একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে সামনে রেখে অত্যন্ত ধৈর্য, সহশীলতা ও শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। এই ধরনের ঘটনা ঘটার পরেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে সম্প্রীতি এবং যে সম্পর্ক, আমরা সেটাকে অটুট দেখতে পাচ্ছি। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এখনো ঘটেনি। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা অত্যন্ত নিকৃষ্ট শ্রেণির মানুষ। তাদের একটি মাত্র উদ্দেশ্য, আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্প্রীতির জায়গাটা নষ্ট করা এবং একটা উসকানি ও হানাহানি তৈরি করা। এটাকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ইতিমধ্যে পুলিশ প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা জরুরি সভা করা হয়েছে। সেখানে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। যারা দোষী, তাদের খুব দ্রুত বের করা হবে।’  

উপাচার্য আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ হাজারের মতো পরিবারের সদস্য। বেশির ভাগই ছাত্রছাত্রী। তাঁদের মধ্যে যে সম্পর্ক, এটাকে যেন কারও উসকানি এবং খুব খারাপ ধরনের মানুষের ফাঁদে পা দিয়ে নষ্ট না করা হয়। আমরা এ ব্যাপারে বদ্ধপরিকর যে আমাদের ছেলেমেয়েরা শান্তিতে থাকবেন। তাদের ভেতরে ভালো সম্পর্ক থাকবে। কোনো নোংরা কাজে, যে ফাঁদ পাতা হয়েছে, সেখানে পা দেবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) ফরিদ উদ্দিন খান, সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক আখতার হোসেন মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে নিহত ২, গুলিবিদ্ধ ৪ বাসিন্দা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এর আগে ওই যুবকদের গুলিতে স্থানীয় চার বাসিন্দা আহত হন। সোমবার রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবকদের পরিচয় তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করতে পারেননি পুলিশ। গুলিবিদ্দ স্থানীয় চার বাসিন্দা হলেন ওবায়দুল হক (২২), মামুনুর রশিদ (৪৫), নাসির উদ্দিন (৩৮) ও আব্বাস উদ্দিন (৩৮)। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা এবং একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে নয়টা থেকে দশটার মধ্যে চারটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে একদল যুবক ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় মসজিদে ডাকাত পড়েছে এমন প্রচারের পর লোকজন জড়ো হয়ে অটোরিকশায় করে আসা দুই যুবককে আটক করে পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই যুবক নিহত হন।

এক যুবকের লাশের পাশ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই যুবককে আটকের আগে গুলির ঘটনায় আহত চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দলসহ সাতকানিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাত সন্দেহে মসজিদের মাইকে প্রচারের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের পিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এখনো ওই দুই যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ