ঢাকা শহরের দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা গ্যাস-সংকট, যা সাম্প্রতিক সময়ে আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে। রাজধানীর মিরপুর, বাসাবো, রামপুরা, খিলগাঁও, বনশ্রী, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, উত্তরাসহ অনেক এলাকায় প্রতিদিনই গ্যাসের অভাব দেখা দিচ্ছে। দিনের বেশির ভাগ সময়ে গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় নগরবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
সকাল ও সন্ধ্যায় গ্যাসের চাপ এতটাই কম থাকে যে অনেক পরিবারকে চুলা জ্বালানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই বিকল্প হিসেবে বিদ্যুৎ-চালিত চুলা বা এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করছেন। কিন্তু সেটাও আর্থিকভাবে অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার অনেক এলাকায় গভীর রাতে গ্যাস আসে, যা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। ফলে বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে রাতেই রান্নার কাজ সারছেন। এ ছাড়া শিল্পকারখানার উৎপাদন এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে।
গ্যাসের এই সংকটের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পুরোনো সরবরাহ লাইন, চাহিদার তুলনায় কম উৎপাদন এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩৮০ কোটি ঘনফুট হলেও সরবরাহ মাত্র ২৬০ কোটি ঘনফুট। এই বিশাল ঘাটতির কারণে রাজধানীসহ সারা দেশে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া শীতকালে চাহিদা বৃদ্ধি এবং এলএনজি টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণ কাজের কারণে গ্যাসের সরবরাহ আরও কমে গেছে।
এই সংকট নিরসনে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি, পুরোনো পাইপলাইন সংস্কার এবং অবৈধ সংযোগ বন্ধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে বিকল্প জ্বালানি উৎস ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা উচিত, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট মোকাবিলা করা যায়।
মাহাদিয়া মুতমাইন্না বিনতে আহমেদ
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করল ইসরায়েল
গাজায় সব মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। রোববার দেশটি হুঁশিয়ার দিয়ে বলেছে, হামাস যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির নতুন প্রস্তাব মেনে না নিলে ‘আরও পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। তাদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় রাজি হতে হবে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির বিরুদ্ধে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। তারা বলেছে, গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া নির্যাতনের এক সহজ উপায়, যুদ্ধাপরাধ ও চুক্তির (যুদ্ধবিরতি) ঘোরতর লঙ্ঘন। এই ঘটনায় মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তাও চেয়েছে হামাস।
নেতানিয়াহুর দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রথম ধাপের বন্দিবিনিময় চুক্তি শেষ হয়েছে এবং হামাস উইটকফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আজ (রোববার) সকাল থেকে গাজায় সব ধরনের পণ্য ও সরবরাহ প্রবেশ বন্ধ থাকবে।
ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সম্পাদিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় এক মাসের কিছু বেশি সময় ধরে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছিল। কিন্তু রোববার সকাল থেকে গাজায় আর কোনো পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করেনি। এতে গাজায় হঠাৎ করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। সেখানকার মানুষ ময়দা, রুটি যা পারছে তাই খুঁজছেন। যেন সারাদিন রোজা রাখার পর অন্তত ইফতার করা যায়। পণ্য সরবরাহ বন্ধ করায় আবারও না খেয়ে থাকায় শঙ্কায় পড়েছেন গাজাবাসী।
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গাজার যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের ৪২ দিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে কোনো ঐকমত্য না হলেও, এখনই হামলায় যাচ্ছে না তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব মেনে রমজান মাসে যুদ্ধ বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তবে হামাস গাজার যুদ্ধবিরতির চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার ৪০০ জনে পৌঁছেছে।