পাঠ্যবইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড করতে সমস্যা
Published: 12th, January 2025 GMT
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢুকে তৃতীয় শ্রেণির ইংরেজি ভার্সনের ‘বাংলাদেশ অ্যান্ড গ্লোবাল স্টাডিজ’ বইটি ডাউনলোড করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
আজ রোববার বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে বইটির অনলাইন ভার্সন বা পিডিএফ ডাউনলোড করার চেষ্টা করা হয়। তখন ডাউনলোড না হয়ে ইংরেজিতে লেখা একটি বার্তা আসতে দেখা যায়।
বার্তাটির মূল কথা হলো, এই মুহূর্তে ফাইলটি ডাউনলোড করতে পারবেন না। সম্প্রতি অনেক ব্যবহারকারী এই ফাইলটি দেখেছেন বা ডাউনলোড করেছেন। এ জন্য পরে আবার চেষ্টা করার কথা বলা হচ্ছে বার্তায়।
বেলা তিনটার দিকে নবম-দশম শ্রেণির পৌরনীতি ও নাগরিকতা বইটি ডাউনলোড করতে গিয়ে একই সমস্যা ও একই ধরনের বার্তা দেখা যায়। অবশ্য কিছু কিছু বই সহজেই ডাউনলোড করা যাচ্ছে।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থী বলছেন, এ রকম সমস্যার কারণে তাঁরা তাঁদের সময়মতো বই ডাউনলোড করতে পারছেন না। ফলে সমস্যায় পড়ছেন।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই বিনা মূল্যে দেয় সরকার। এই কাজটি করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
বছরের শুরুতেই বই হাতে পাওয়ার কথা শিক্ষার্থীদের। কিন্তু এবার বিশেষ পরিস্থিতির কারণে পাঠ্যবই ছাপার কাজ দেরিতে শুরু হয়। এ কারণে এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলোয় সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন বই তুলে দিতে পারেনি সরকারি প্রতিষ্ঠান এনসিটিবি।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থী আগামী মাসের (ফেব্রুয়ারি) মধ্যে সব পাঠ্যবই পাবে। এ রকম পরিস্থিতিতে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া পাঠ্যবইয়ের পিডিএফ ভার্সনের ওপর অনেকে নির্ভর করছে। কিন্তু সেখানে পাঠ্যবই ডাউন করতে অসুবিধায় পড়ছেন অনেকে।
শিক্ষক-অভিভাবকেরা বলছেন, এই সমস্যা যত দীর্ঘ হবে, পড়াশোনার সমস্যাও তত দীর্ঘ হবে।
এ বিষয়ে কথা হয় এনসিটিবির তথ্য ও প্রযুক্তি (আইটি) শাখার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনিও সমস্যাটির কথা স্বীকার করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা পিডিএফ ভার্সনটি গুগল ড্রাইভে আপলোড করেছেন। আগের বছরগুলোয়ও এভাবে করেছেন। কিন্তু তখন সমস্যা হয়নি। কিন্তু এবার সমস্যা হওয়ায় তাঁরা বিকল্প আরেকটি উপায়ও রেখেছেন। সেটি হলো, পিডিএফের প্রিন্ট অপশনে গিয়ে ডাউনলোড করা।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বিকল্প কিছু ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু পাঠ্যবইগুলো আরও সহজে কীভাবে ডাউনলোড করা যায়, সেই চেষ্টা করছেন।
১ জানুয়ারি শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। এনসিটিবি সূত্রমতে, নতুন শিক্ষাবর্ষে চার কোটির মতো শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৪১ কোটি বই ছাপানো হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিকের মোট পাঠ্যবই ৯ কোটি ৬৪ লাখের মতো। মাধ্যমিকে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ৯৬ লাখের মতো।
কিন্তু এবার পাঠ্যবই ছাপায় দেরি হওয়ায় এখনো শিক্ষার্থীরা সব বই হাতে পায়নি। এমনকি কোনো কোনো শিক্ষার্থী একটি বইও হাতে পায়নি। যেমন—আজ রাজধানীর বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ইংরেজি ভার্সনের পাঠ্যবই এখনো যায়নি।
একদিকে সব শিক্ষার্থী এখনো পাঠ্যবই পায়নি, অন্যদিকে ওয়েবসাইটে পাঠ্যবইয়ের পিডিএফ ভার্সন ডাউনলোড করতে সমস্যার প্রভাব পড়াশোনার ওপর প্রভাব পড়ছে।
অভিভাবক-শিক্ষকেরা বলছেন, বই দিতে যত দেরি হবে সমস্যাটি তত দীর্ঘ হবে। এ ক্ষেত্রে আরেকটি বৈষম্যের আশঙ্কাও আছে। কারণ, বই ডাউনলোড করে তা প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে খরচের একটা ব্যাপার আছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব সব শিক্ষার্থীর হাতে সব পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হবে সবচেয়ে ভালো কাজ।
আরও পড়ুনসব পাঠ্যবই পেতে অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে০৭ জানুয়ারি ২০২৫এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, আগের বছরগুলোয় অধিকাংশ পাঠ্যবই বছরের শুরুতেই বিদ্যালয়গুলোতে চলে যেত। তখন শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাওয়ায় পিডিএফ ভার্সনের জন্য এত চাপ ছিল না। কিন্তু এবার পাঠ্যবই হাতে পেতে দেরি হওয়ায় পিডিএফ ভার্সনের জন্য অনেকে চেষ্টা করছেন। এ কারণে সমস্যা হচ্ছে বলে তাঁদের ধারণা।
এনসিটিবির আইটি শাখার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেছেন, ডাউনলোডের ক্ষেত্রে কোনো সংখ্যা তাঁরা সীমাবদ্ধ করে দেননি।
এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক অনিন্দ্য ইকবালের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনিও এই সমস্যাটি দেখেছেন। ক্লাস শুরু হওয়ার ১০ দিন পার হওয়ার পরও অধিকাংশ শিক্ষার্থী বই ডাউনলোড করতে পারেনি। যতটুকু জানা গেছে, প্রায় ৪০ কোটি বই ডাউনলোড হবে। বইয়ের এমন পিডিএফ এনসিটিবি গুগলের ফ্রি ড্রাইভে আপলোড করেছে, যেখানে প্রতিদিনের ডাউনলোড সীমা (লিমিট) প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। বিষয়টি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কেন এমন ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব সরকারি কোনো ‘ক্লাউড সার্ভিস’ (ইন্টারনেট ব্যবহার করে ওয়েব সার্ভারে তথ্য ও প্রোগ্রাম সংরক্ষণ। অনলাইনে থাকা এসব ফাইল যখন-তখন ইচ্ছেমতো খোলার সুবিধা থাকে) ব্যবহার করে পর্যাপ্ত ব্যান্ডউইথের ব্যবস্থা করা, যাতে সবাই সহজেই বইগুলো ডাউনলোড করতে পারে। পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় ক্লাউড সার্ভিস ব্যবহারের উদাহরণ রয়েছে। আরও আগে থেকে প্রস্তুতি নিলে কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (সিডিএন) সার্ভিস ব্যবহার করে বিষয়টি খুব ভালোভাবে করা যেত।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সামারিক শক্তিতে মিয়ানমারের চেয়ে ২ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ
চলতি বছর সামরিক শক্তির দিক থেকে মিয়ানমারের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি সপ্তাহে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার প্রকাশিত সূচকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট। সেনাবাহিনীর আকার, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর শক্তিকেও বিবেচনা করা হয়েছে সমীক্ষায়।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, এরপরে পরে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু শক্তিধর হলেও পাকিস্তানের অবস্থান ১২ নম্বরে। তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ৩৫তম অবস্থানে। বাংলাদেশের আগে রয়েছে উত্তর কোরিয়া ও আর্জেন্টিনা। আর বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার রয়েছে ৩৭তম অবস্থানে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৬১ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে মোট সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৭ হাজার ৪০০ সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫ হাজার ১০০ সেনা।
অন্যদিকে, মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যা ৫ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। মিয়ানমারের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার। মিয়ানমারের রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে ২০ হাজার। দেশটির বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৫ হাজার সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ১৬ হাজার সেনা।
ঢাকা/শাহেদ